বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি এবং
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে
বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সোমবার দুপুরে একটি বিক্ষোভ মিছিল ধানমন্ডির ২৭নং রোডের মোড় থেকে শুরু হয়ে স্টার কাবাবের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী। মিছিলে যুবদল, ছাত্রদলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করেন।
মিছিল শেষে এক পথসভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ষড়যন্ত্র ও জনগণের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার কর্মসূচি হাতে নেয়। বিগত ১২ বছরে শুধু গণতন্ত্রই ধ্বংস নয়, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকেও দুর্বল করা হয়েছে চরমভাবে। আওয়ামী লীগ ঠিকই উপলব্ধি করেছিল যে, প্রতারণার জবাব দিতে দেশের মানুষ পরবর্তী নির্বাচনে আর কখনোই আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে না। তাই তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বচ্ছ ভোটকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিষাক্ত ছোবলে।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের করাল গ্রাসে বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস কায়েম করে দেশের জনগণকে বন্দী করে রেখেছেন সরকারপ্রধান। আর এই ভয়াল সন্ত্রাসের নির্মম শিকার করা হয়েছে এদেশের কিংবদন্তীসম গণতন্ত্রী, বাক ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার নির্ভিক নেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বন্দী করে। বেগম জিয়ার ন্যায্য জামিন পাবার অধিকারকেই কেবল বাধাগ্রস্ত নয়, বরং শারীরিকভাবে ভীষণ অসুস্থ চারবারের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীকে সুচিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে তার জীবনবিনাশে নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যাচ্ছেন
শেখ হাসিনা।
রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেশ কয়েকদিন ধরে বমি করছেন। তিনি খেতে পারছেন না, তার অসুস্থতা আগের চেয়ে অনেকগুন বেড়েছে। এমনকি বেগম জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকগণও প্রকারান্তরে স্বীকার করেছেন দেশনেত্রীর গুরুতর অসুস্থতার কথা। তার স্বাস্থ্যগত অবস্থা চরম অবনতিশীল। বেগম জিয়া গুরুতর অসুস্থ হলেও তার শারীরিক অবস্থা গোপন করছে সরকার। বেগম জিয়া হাঁটু ও পায়ের গোড়ালীতে প্রচন্ড ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন। প্রকৃতপক্ষে দেশনেত্রীর অসুস্থতা বর্তমানে মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। কিন্তু সরকারের নির্দেশে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম জিয়ার অসুস্থতার বিষয়ে সঠিক তথ্য না দিয়ে দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নীলনকশাই হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী রেখে তার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া যাতে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে কেউ সোচ্চার কিংবা প্রতিবাদী হবার সাহস না পায়। এই মনোবাঞ্ছা পূরণ হলেই
শেখ হাসিনার সর্বগ্রাসী হানাদারী শাসন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়ে যাবে। বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর এই বদ্ধমূল ধারণা জন্মেছে যে, জনগণ ক্ষমতার উৎস নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণ এবং
বিএনপিসহ দেশের বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ণের স্টীমরোলার চালাতে পারলেই ক্ষমতার মসনদ হারাবে না। কিন্তু সরকার ও সরকারপ্রধানের এই ভ্রান্ত ধারণা শুধুই অলীক স্বপ্ন।
রিজভী আরো বলেন, ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দেশের মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। স্বৈরাচারের বন্দীখাঁচা থেকে যিনি গণতন্ত্রকে বারবার অর্গলমুক্ত করেছেন সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃত্বে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনতা এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যেকোন মূহুর্তে জনগণের বাঁধভাঙ্গা স্রোত বর্তমান স্বৈরশাহীর মূলোৎপাটন ঘটিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। তাই প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে বলতে চাই-আর নয়, বেগম জিয়ার ওপর যথেষ্ট অমানবিক আচরণ করেছেন, এবার ক্ষান্ত হউন, তাকে নি:শর্ত মুক্তি দিয়ে জনতার ক্রোধ থেকে বাঁচুন। আমি আবারো অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তি এবং তাঁকে তাঁর পছন্দের হাসপাতালে সুচিকিৎসার সুযোগ দানের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি কারাবন্দী সকল নেতাকর্মীর নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি।