Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

এফডিআই প্রবাহ কমেছে ছয় শতাংশ

আঙ্কটাডের প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:২৫ এএম

প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) আকর্ষণে বরাবরই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ, যদিও ২০১৮ সালে সে চিত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। ওই বছর বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল প্রায় ৬৭ দশমিক ৯১ শতাংশ। এতে প্রথমবারের মতো দেশে বিদেশি বিনিয়োগ তিন বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। তবে এক বছর না যেতেই বিদেশি বিনিয়োগে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। গত বছর এফডিআই প্রবাহ কমেছে প্রায় ছয় শতাংশ।

জাতিসংঘ বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ডস মনিটর’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটি আজ বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করা হবে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এফডিআই প্রবাহ ছিল তিন দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ওই বছর স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মধ্যে সবচেয়ে বেশি এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এফডিআই আসে তিন দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে এফডিআই প্রবাহ কমেছে পাঁচ দশমিক ৮২ শতাংশ।

দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট ইক্যুয়িটি ক্যাপিটাল) কমে যাওয়া ও ঋণ আকারে আসা বিদেশি বিনিয়োগ (ইন্ট্রা-কোম্পানি লোন) কমার কারণেই মূলত গত বছর এফডিআই কমেছে। পাশাপাশি মুনাফা থেকে বিদেশি কোম্পানির আবার বিনিয়োগ তথা রি-ইনভেস্টমেন্টও কমেছে। তবে নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ তথা গ্রিনফিল্ড ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে।

তথ্যমতে, গত বছর প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশে এফডিআই এসেছে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর শেষ ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এফডিআই প্রবাহ ছিল ১৭০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। গত বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে চীন থেকে। মূলত অবকাঠামো খাতে দেশটির অর্থায়নে বিভিন্ন কোম্পানি প্রকল্প বাস্তবায়নই এর কারণ।

খাতভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছর বিদ্যুৎ খাতে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছে। তবে খাদ্য, ব্যাংক, বস্ত্র ও পোশাক এবং টেলিকম খাতে কমেছে এফডিআই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাতে বড় বেশকিছু প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ কারণে ২০১৮ সালের মতো গত বছরও খাতটিতে বড় বিনিয়োগ এসেছে। আর ২০১৮ সালে ফোর-জি লাইসেন্স দেওয়ার পর এ খাতে বিনিয়োগ করেছিল বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটররা। তবে গত বছর সে ধরনের বড় বিনিয়োগ হয়নি। উল্টো নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বড় দুই অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার টানাপড়েনে এ খাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। আর পোশাক খাতেও নতুন বিনিয়োগ আসছে না; বরং অনেক কোম্পানি এখন ভিয়েতনামের দিকে ঝুঁকছে। এতে বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

আঙ্কটাডের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, শুধু গত বছর নয়, কয়েক বছরে ধরেই এফডিআই প্রবাহে বাংলাদেশ টানা ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারছে না। কোনো বছর ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির পরের বছরই তা কমছে; যেমন, ২০১৭ সালে দেশে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার, আর ২০১৬ সালে এর পরিমাণ ছিল দুই দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ২০১৭ সালে দেশে এফডিআই প্রবাহ কমে গিয়েছিল সাত দশমিক ৮০ শতাংশ। তবে ২০১৬ দেশে এফডিআই প্রবাহ বেড়েছিল চার শতাংশ।

এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশে দুই দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসে। সে বছরও প্রবৃদ্ধি হয় ৪৪ শতাংশ। আর ২০১৪ সালে এক দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ও ২০১৩ সালে এক দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার এফডিআই এসেছিল। অর্থাৎ ২০১৪ সালে এফডিআই প্রবাহ তিন শতাংশ কমেছিল। এছাড়া ২০১২ সালে এ প্রবাহ ছিল এক দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১১ সালে এর পরিমাণ ছিল এক দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার।

তথ্যমতে, ২০০৮ সালে প্রথম এফডিআই বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। সে বছর এক দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল বাংলাদেশে। যদিও পরের দুই বছর তা বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। এর মধ্যে ২০০৯ সালে এফডিআই প্রবাহ ছিল শূন্য দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ও ২০১০ সালে শূন্য দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার।

বিদেশি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল না হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশে এফডিআই আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা হলো অবকাঠামো ঘাটতি। দেশের বেশিরভাগ মহাসড়ক এখনও দুই লেনের। অর্থনীতির লাইফলাইন হিসেবে বিবেচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনের হলেও চাহিদা রয়েছে কমপক্ষে ছয় লেনের। এছাড়া আমদানি-রপ্তানির দ্বার হিসেবে বিবেচিত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো যাচ্ছে না। আবার এক দশকের বেশি সময় ধরে আলোচনা হলেও এখনও গভীর সমুদ্র নির্মাণ শুরু করা যায়নি। পাশাপাশি দেশের রেল অবকাঠামো এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ বাড়াতে সরকারের নীতির ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। পাশাপাশি গত এক বছরে ধরে দেশের দুই বৃহৎ মোবাইল ফোন কোম্পানি, বিশেষত গ্রামীণফোনের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেতিবাচক আচরণ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের ব্যবসার পরিবেশ তথা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বড় প্রতিবন্ধক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ