Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমসে সমন্বয়ের তাগিদ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে একক বৃহৎ রাজস্ব যোগানদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মধ্যকার সুষ্ঠু সমন্বয়, পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন ও পর্যাপ্ত স্ক্যানিংয়ের তাগিদ দিলেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম বন্দরের সম্মেলন কক্ষে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভায় এ তাগিদ দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী এবং নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী যৌথভাবে কাজ করলে বন্দর কাস্টম কেন্দ্রিক কোন সমস্যা থাকবে না বলেও মত দেন তারা। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম কর্ণফুলী নদীকে দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন উল্লেখ করে বলেন, এ নদীর শ্বাসরোধ করা হয়েছে। কর্ণফুলী না বাঁচলে দেশের অর্থনীতিকেও বাঁচানো যাবে না। নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, কর্ণফুলীর তলদেশে গ্র্যাভ ড্রেজার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর ক্যাপিটাল ড্রেজিং হবে। বে-টার্মিনাল সীতাকুÐের কুমিরা পর্যন্ত স¤প্রসারিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ এলাকায় যাতে কেউ স্থাপনা গড়তে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ছে সে সাথে উন্নয়নও হচ্ছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, ১৭টি জেটি আছে, আরও ৬টি নির্মাণাধীন। এসব জেটি নির্মাণ হলে সক্ষমতা আরও বাড়বে। বন্দরে এখন কন্টেইনার আছে ৩২ হাজার টিইইউস। এর মধ্যে ১ হাজার দিন বয়সীও আছে। দ্রæত কন্টেইনার না নিলে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে।
মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী বলেন, পোর্ট চার্জ বাড়িয়েছিলো এক-এগারোর সময়। সে চার্জ এখনো বহাল আছে। ৭ দিনে চীন থেকে ভিয়েতনামের কারখানায় কাঁচামাল চলে যায়। আমাদের লিড টাইম অনেক বেশি। ২১ শতাংশ রফতানি কমে গেছে। বিজিএমইএ’র কার্গোবাহী জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে অপেক্ষায় রাখা যাবে না। সারা দুনিয়া অনলাইনে চলে গেছে। অনলাইনে কন্টেইনার ইন্ডেন্ট নিতে হবে।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম বলেন, আরএমজিতে নেগেটিভ গ্রোথে আছি। বন্দরের লিড টাইম, ব্যবসার কস্ট কমিয়ে প্রতিযোগী দেশের মতো করতে হবে। ৯৪ শতাংশ কন্টেইনার যায় সড়ক পথে। রেলে কন্টেইনারের সিরিয়াল পেতে ১৫ দিন লাগে। প্রয়োজনে কন্টেইনার পরিবহন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া যায়। কাস্টমসের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, বন্দরের লোকের চেয়ে অতিথি বেশি, আনসার বেশি। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য টেন্ডার করে। লেবার হ্যান্ডলিংয়েরও টেন্ডার করা উচিত। শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, কন্টেইনার দ্রæত সরবরাহ নেয়ার জন্য আমদানিকারকদের তাগিদ দিতে হবে।
বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, বন্দরের সাফল্যে বার্থ অপারেটরের ভূমিকা অপরিসীম। পিসিটিতে দেশি অপারেটরদের সুযোগ দিতে হবে। বার্থ অপারেটরদের আরও হ্যান্ডলিং ইক্যুপমেন্ট দিলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।
বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, স্ক্যানিং সঠিকভাবে হচ্ছে না। স্ক্যানিং না হলে রফতানি কার্গো যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টে জটিলতা তৈরি করবে। খুবই জরুরি ভিত্তিতে স্ক্যানিং মেশিন দিতে হবে। বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, দুই ঈদে ১৮ দিন খোলা রাখি, বন্দর পাহারা দিই। একদিন আগে কন্টেইনারের অ্যাসাইনমেন্ট নিতে হবে। আমরা অনলাইনে এটি নেবো।
এ সময় সংসদীয় কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, এসএম শাহজাদা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুছ ছাত্তার উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান চৌধুরী, হারবার মেরিন কমডোর শফিউল বারী, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান, সচিব মো. ওমর ফারুক, উপ সচিব আজিজুল মওলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে আসেন সংসদীয় কমিটির সদস্যরা। শনিবার তারা মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর পরিদর্শন করেন।
‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কন্টেইনার টার্মিনাল’ এবং ‘পতেঙ্গা শেখ হাসিনা কন্টেইনার টার্মিনাল’
চট্টগ্রাম-১১ বন্দর-পতেঙ্গার সংসদ সদস্য ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির অন্যতম সদস্য এম আবদুল লতিফ শুক্রবার সংসদীয় কমিটির পরিদর্শনকালে এলাকাবাসীর পক্ষে বন্দরের মেগাপ্রকল্প বে-টার্মিনাল ‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কন্টেইনার টার্মিনাল’ এবং নির্মাণাধীন পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল (পিটিসি) ‘পতেঙ্গা শেখ হাসিনা কন্টেইনার টার্মিনাল’ নামকরণের দাবি উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, এটি বন্দর-পতেঙ্গা আসনের গণমানুষের প্রাণের দাবি। সে সঙ্গে তিনি এ দুটি প্রকল্পে স্থানীয় অধিবাসীদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি সরকার অগ্রাধিকার দেবে বলেও প্রত্যাশা করেন। সংসদীয় কমিটির পরিদর্শনকালে বন্দরের কর্মকর্তাগণ জানান, আন্তর্জাতিকমানের এ দুটি টার্মিনাল চালু হলে রাতে-দিনে বড় আকারের জাহাজ (অধিক ড্রাফটের) ভিড়তে পারবে। তখন আর জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করতে হবে না।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ