Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেঘ পাহাড়ের রাঙামাটি

সৈয়দ মাহাবুব আহমাদ, রাঙামাটি থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

পাহাড়ের পর পাহাড়। কখনো গিরিখাদ, কখনো আবার আঁকাবাঁকা ছোট্ট নদী। যে কোনো ঋতু হোক না কেন বছরজুড়েই রূপের জৌলুস থাকে এখানে। পার্থক্য কেবল ঋতুর সাজে। অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর মেঘ পাহাড়ের রাঙামাটি। এখানে দেখা যায় পাহাড়, নদী, আর হৃদের মিলনমেলা। প্রতিটি পরতে পরতে লুকিয়ে আছে অদেখা ভুবন।

রয়েছে নয়নাভিরাম দৃশ্যপট। শরৎ আর হেমন্ত আসলেই, সবুজ পাহাড়ে দেখা যায় মেঘের আনাগোনা। সারাদিন চলে নীল, সাদা ও সবুজের লুকোচুরি খেলা। নরম সবুজ ঘাসে ভেজা পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটলেই হৃদয়ে শিহরণ জাগে। সন্ধ্যার আকাশে গোধূলীর রঙ ছড়াতেই ঝাঁক বেঁধে আসে বনের পাখিরা। তাদের খুনসুটি দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। এর টানে দূর-দূরান্ত থেকে এখানে আসছেন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক।
রাঙামাটি জেলার মূল সৌন্দর্য্য সাজেক ভ্যালি। এখানে আকাশের মেঘ যেন উড়ে এসে বসেছে পাহাড়ের কোলে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুললেই দেখা যাবে মেঘের চাদরে ঢাকা সাজেক। তবে শুধু সকাল নয়, সন্ধ্যায় দেখা মেলে মেঘের লুকোচুরি, যা সাজেকের সবচেয়ে অন্যতম আকর্ষণ। চোখ সামনে দেখা যায় মেঘ আর রংয়ের মিতালি।

দেশের সর্ববৃহৎ বাঘাইছড়ি উপজেলার ইউনিয়ন সাজেক। আয়তন ৬০৭ বর্গ মাইল। যা দেশের যে কোন জেলার চেয়েও বড়। স¤প্রতি পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে সাজেক ভালি। সবুজ পাহাড় ঘিরে ঢেউ খেলানো অসংখ্য উঁচু-নিচু পাহাড়। নয়নাভিরাম নানান দৃশ্য। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে কাচালং ও মাচালং নদী। রাস্তার দু’ধারে-চোখে পড়বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা। বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে সাজেক যাওয়া যায়। রাঙামাটি থেকে যেতে হলে নৌ-পথে যেতে হবে।

এখানে আসলে দেখতে পাবেন পাহাড়ের কঠিন বুকে ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তোলা গ্রাম্য নারীর স্বাদের জুম। জুম ক্ষেত্রের বিচিত্র সব্জি বাগান, আর রবিশস্যে সোনালী দোল। ফাঁকে ফাঁকে গড়ে ওঠা প্রাকৃতিক ও সৃজিত বন বাগান। ফুলের মন মাতানো সৌরভ, অতিথি পাখির কিচির-মিচির ডাক, বানর ডাহুক আর হরিণের দুর্লভ মিতালী এমন বর্ণনাতীত বিচিত্র সৌন্দর্য্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্বত্য রাঙামাটি। তাইতো কবি সাহিত্যকরা আদর করে এর নাম রেখেছেন প্রকৃতির রাণী।
এখানকার দিগন্ত বিস্তৃত বনরাজির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে ভাবুক মন খেই হারিয়ে ফেলে- ‘সবুজের কত রং হতে পারে’। হালকা সবুজ, গাঢ় সবুজ, ফিকে সবুজ, শ্যামল সবুজ.. এভাবে নামকরণ করতে বলা হলে হয়তো কারো পক্ষেই এই সবুজের বিশেষণ নির্ধারণ করা সম্ভব হবে না। সবুজের শেষ প্রান্তে মেঘ বালিকার মিতালি, উঁচু-নিচু, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, আর তুলির আঁচড়ের মতো মাঝে মাঝে সবুজের বুক চিরে বয়ে যাওয়া কাচালং নদী আর পাহাড়ি ছড়া, যে কোনো নিরস মনকেও ভাবুক আর উদাস বানিয়ে দেয়; কিছুক্ষণের জন্য হলেও। নগর জীবনের ব্যস্ত জীবন যাপনে অভ্যস্ত আক্ষরিক অর্থে সভ্য মানুষ এই রূপ ভুলতেই পারেন না। এই শহরের প্রবেশদ্বারে রয়েছে সাপছড়ির ফুরোমোন পাহাড়, আর শেষ প্রান্তে ডিসি বাংলো।

রাঙামাটির একটি শান্ত ছায়া সুনিবিড় এলাকার নাম ‘পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক’। গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি সব যেমন আছে। তেমনি আছে শিশুদের বিনোদনের জন্য দোলনা, স্লিপার; আছে বানরের খেলা। যত্মময় হাতের ছোঁয়ায় বেড়ে ওঠানো সাজানো ফুলবাগান যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বুনো ফুলের সমাহার। পাহাড়ের উঁচু টিলায় বসে দিগন্ত বিস্তৃত হ্রদের সৌন্দর্য্য দেখতে চাইলে আপনাকে এই জায়গাটিই বেছে নিতে হবে।
এখানে ছোটখাট রেস্টুরেন্ট, কুলিং কর্ণার এবং ছোট্ট একটি দোকানও রয়েছে। জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা ‘পলওয়েল ন্যাচারাল পার্কটি যে কোনো বয়সের নারী পুরুষ কিংবা শিশুদের বেড়ানোর একটি আদর্শ স্থান। সবদিক থেকে নিরাপদও বটে। এই স্থানটির সবচেয়ে উল্লেখযাগ্য দিক হলো সমুদ্র সৈকতের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ। এখানে আপনি নিশ্চিন্তে হৃদের পানিতে পা ভিজিয়ে নিতে পারবেন। ‘পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক’ এর পাশেই আছে লাভস্পট। এটি একটি সিম্বল মাত্র। এই পার্কে প্রবেশের জন্য অবশ্য বর্তমানে টিকেট কাটতে হয়। জনপ্রতি ১৫ টাকা। এই হার কমানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে।

যারা ভিন্ন জেলা বা ভিন্ন দেশ থেকে পর্যটক হিসেবে রাঙামাটি বেড়াতে আসেন, তাদের জন্য তো বটেই এই শহর বা আশেপাশের অধিবাসীদের জন্য এই ‘পলওয়েল ন্যাচারাল পার্ক’ স্পটটি বেড়ানোর একটি অনন্য এবং অনবদ্য স্থান। কাজের ফাঁকে বা ছুটির দিনে এখানে নিজে বা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বিকালটা কাটিয়ে এলে কখনোই ভুলতে পারবেন না।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, প্রকৃতির রাণী রাঙামাটিতে ভ্রমণ করার জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে সুখী নীলগঞ্জ এবং ফুরমোন অনতম আকর্ষণীয়। এ ছাড়া কাপ্তাই হ্রদ, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন্ত ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্ণা, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, জাদুঘর, কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কীভাবে যাবেন : ঢাকা সায়েদাবাদ, কলাবাগান, ফকিরাপুল অথবা গাবতলী থেকে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এস আলম এবং বিআরটিসি বাসে যেতে পারবেন রাঙামাটি। নন এসি বাস ৬২০ টাকা। এসি বাস আছে শ্যামলী এবং বিআরটিসির ভাড়া ৯০০-১০০০ টাকা। সাধারণত সকাল ৮টা, ৯টা এবং ১০টায় প্রতিটি কোম্পানির ২টা করে বাস ছাড়ে। আবার রাতে ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে প্রতি কোম্পানির দুইটা করে বাস ছাড়ে।
আবাসন ব্যবস্থা : রাঙামাটি বেশ কিছু হোটেল মোটেলে আপনি থাকতে পারেন। হোটেলের মধ্যে অন্যতম হোটেল সুফিয়া, সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল প্রিন্স ইত্যাদি। হোটেলের নন এসি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা এবং ডাবল রুম ৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। আর এসি সিঙ্গেল রুমের ভাড়া ১০০০-১৮০০ টাকা, ডাবল ১৫০০-২৫০০ টাকার মধ্যে। মোটেলের মধ্যে রয়েছে জর্জ মোটেল, পর্যটন মোটেল ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন পর্যটন কমপ্লেক্সে সুন্দর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়

২০ জুন, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ