Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘যেভাবে চেয়েছি সেভাবেই হয়েছে তবুও সমালোচনা?’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম


শুরু থেকেই ছিল ঘোর অনিশ্চয়তা। অনেকবার খুব কাছে গিয়েও বন্ধ হয়েছে সমঝতার দরজা। একটা প্রশ্ন বারবার উঠেছে- শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ পাকিস্তানে যাবে কি যাবে না। নানা সময়ে নানা উত্তর মিলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) দুই বোর্ডের কাছ থেকেই। অবশেষে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ কেটে সিদ্ধান্ত হলো, বাংলাদেশ পাকিস্তানে যাচ্ছে। সেটিও একবার নয়, তিন মাসে তিনবার! তারচেয়েও বড় কথা, শুরু টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিই নয় সফরের বাড়তি পাওনা একটি ওয়ানডেও! কিন্তু এই সিদ্ধান্তের পরই সমালোচনার ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

দুই বোর্ডের সমঝোতায় বাংলাদেশ দল প্রথম দফা পাকিস্তানে যাবে জানুয়ারিতে, তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে। ফেব্রæয়ারিতে থাকছে একটি টেস্ট। এপ্রিলে আবার একটি ওয়ানডে ও সিরিজের বাকি টেস্ট। বাংলাদেশ খেলবে লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি ও করাচিতে। বিষয়টা দাঁড়াচ্ছে এমন- বাংলাদেশ প্রথমে খেলবে সাদা বলে। পরের সফরে লাল বলে। শেষ সফরে সাদা ও লাল দুটিই। পাকিস্তান সফরের মাঝেই ফেব্রæয়ারি-মার্চে দেশের মাঠে বাংলাদেশ খেলবে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। ঘন ঘন সংস্করণ বদল আর ভ্রমণের ধকল সামলে ক্রিকেটাররা কতটা মনোযোগ ধরে রাখতে পারবে, ধারাবাহিক ভালো খেলতে পারবে সেটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

বিসিবি কেন পিসিবির এই জটিল সূচিতে রাজি হলো, এ নিয়ে নানা শ্লেষ-ব্যঙ্গাত্মক আলোচনা চলছে সামাজিক মাধ্যমে। বিসিবির কর্তারাও স্বীকার করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগে এমন জটিল সূচিতে খেলেনি। কেউ কেউ অবশ্য এমন গুরুতর প্রশ্নও তুলেছে, মুজিব বর্ষেই কেন বাংলাদেশ তিন বার পাকিস্তানে যাবে? কোচ ও ক্রীড়ালেখক জালাল চৌধুরী ফেসবুকে যেমন লিখেছেন, ‘তিন তিন বার পাকিস্তান সফরের জন্য এ বছরটাই বেছে নিলেন আপনারা! মুজিব বর্ষে ভাবতে ভালো লাগছে না।’ তার এই কথার পিঠে- ‘তবে কি অন্য কোনো বর্ষে গেলে এটি যৌক্তিক হয়ে যেত?’ বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। একটি সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে মতাতম থাকতেই পারে। তবে এই সফরের ব্যপারে নিজেদের ইচ্ছারই প্রতিফলন ঘটেছে বলে মত দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

গতকাল দুবাই থেকে ফিরে সাংবাদিকদের কাছে বিসিবি বস উল্টো জানতে চাইলেন, কেন এ বিষয়ে এত সমালোচনা হচ্ছে, ‘আমি জানি না এটা কেন বলা হচ্ছে। ওরা (পিসিবি) কখনই বলেনি আমরা টি-টোয়েন্টি খেলে আসব। তারা প্রথমে বলেছে পুরো সিরিজ খেলতে হবে। পরে বলেছে, আগে টেস্ট খেলতে হবে। এখন এটা তারা (সমালোচকেরা) কেন বলছে এটার কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে। আমরা যেটা বলেছি আমার মনে হয় সেটাই হয়েছে। আমি যেদিন প্রথম সংবাদমাধ্যমে বলেছি, আমরা প্রথমে যাব টি-টোয়েন্টি খেলতে, পরে খেলব টেস্ট।’

দুই টেস্টের মাঝে একটি ওয়ানডে যোগ হওয়ার কারণটা যে আর্থিক, সেটা আগেই জানা গিয়েছিল। অতিরিক্ত ব্যয় পুষিয়ে নিতেই দুই টেস্টের মাঝে হুট করে ঢুকে গেছে একটি ওয়ানডে। বাংলাদেশও চাইছিল লম্বা বিরতিতে তৃতীয়বারের মতো পাকিস্তানে গিয়ে একটা অনুশীলন ম্যাচ খেলতে। সেই ‘অনুশীলন ম্যাচ’ই হয়ে গেছে ওয়ানডে। বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘পাকিস্তানের অনেক ক্ষতি (আর্থিক) হচ্ছে। পাকিস্তানে গিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে খেলার আগে আমাদেরও একটা প্র্যাকটিস ম্যাচ দরকার। একটা সফর তিনবারে আয়োজন করতে গিয়ে তাদের অনেক খরচ বেড়ে গেছে।’

নিজেদের অবস্থান বদল বা ক্রিকেটীয় ক‚টনীতিতে কোনো ঘাটতি দেখছেন না বোর্ড প্রধান, সরকারের নির্দেশনা মেনেই এই সফর চ‚ড়ান্ত করেছেন তারা, ‘সরকার থেকে যে বিষয়টা বলা আছে, আমরা যেরকম আগে থেকে বলেছি, ওই রকমই হয়েছে। তাদের নির্দেশনায় লেখা আছে যে প্রথমে টি-টোয়েন্টি খেলে আসবে। তারপর অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী সময়ে গিয়ে টেস্টগুলো খেলে আসবে। আমরা এখনও সেই ধারাতেই আছি।’
২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কা দলের উপর হামলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বন্ধ হয়ে যায় পাকিস্তানে। এরপর অন্য সব দেশের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেললেও বাংলাদেশের বেলায় পাকিস্তান দেখিয়ে আসছে ভিন্ন মনোভাব। ২০১২ সালে বিসিবি পাকিস্তানে যেতে চাইলেও আদালতের বাধায় আটকে যায় সফর। পাকিস্তান সেই সিরিজও নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করেনি।

গতপরশু দুবাইয়ে আইসিসি চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর ও পিসিবি সভাপতি এহসান মানির সঙ্গে বিসিবি সভাপতির সভায় চ‚ড়ান্ত হয় স‚চি। চলতি মাসে ২৪, ২৫ ও ২৭ তারিখে লাহোরে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। দেশে ফিরে কয়েক দিন পরে আবার পাকিস্তানে গিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে ৭ ফেব্রæয়ারি থেকে প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। তৃতীয় দফায় এপ্রিল মাসে আবার পাকিস্তান যাবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। ৩ এপ্রিল করাচিতে একমাত্র ওয়ানডে খেলার পর সেখানেই ৫ এপ্রিল থেকে হবে দুদলের দ্বিতীয় টেস্ট।
নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পাকিস্তান সফরে যেতে এর মধ্যেই অপারগতা জানিয়েছেন দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো সফরে যাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক হলেও বোর্ড প্রধান জানিয়েছেন, বেশ কয়েকজন কোচিং স্টাফের পাকিস্তানে যেতে আপত্তি আছে।

পূর্ণাঙ্গ সফরসূচি
২৪ জানুয়ারি - প্রথম টি-টোয়েন্টি (লাহোর)
২৫ জানুয়ারি- দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি (লাহোর)
২৭ জানুয়ারি- তৃতীয় টি-টোয়েন্টি (লাহোর)
৭-১১ ফেব্রæয়ারি- প্রথম টেস্ট (রাওয়ালপিন্ডি)
৩ এপ্রিল- একমাত্র ওয়ানডে (করাচি)
৫-৯ এপ্রিল- দ্বিতীয় টেস্ট (করাচি)

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ