পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। গতকাল উত্তর সিটিতে বাড্ডা, সাতারকুল, নতুন বাজার, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় প্রচারণা চালান। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটিতে ইশরাক হোসেন ধানমন্ডি ও কলাবাগান এলাকায় প্রচারণা চালান। এসময় তারা সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা, ভোট প্রদান নিয়ে ভোটারদের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন। অঙ্গীকার করে বিজয়ী হলে ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য আধুনিক ঢাকায় পরিণত করার।
সুষ্ঠু ভোট নিয়ে তাবিতের শঙ্কা: ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাইতে উত্তর সিটেতে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল যেখানেই যাচ্ছেন ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। তার প্রচার মিছিলে প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ঢল নামছে। নেতা-কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ভালোসায় সিক্ত হয়ে অভিভূত তিনি। ভোট চাইতে গিয়ে সাধারণ জনগণ নানা আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশার পাশাপাশি বর্তমান নগর ব্যবস্থাপনার প্রতি অভিযোগও করছেন। ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অধীর আগ্রহে সাধারণ মানুষ তাবিথ আউয়ালকেই তাদের প্রশ্ন, ‘ভোট সুষ্ঠু হতে তো, কেন্দ্রে যেতে পারব তো?’
গতকাল বুধবার সকালে উত্তর বাড্ডার রহমতুল্লা গার্মেন্ট থেকে পঞ্চম দিনের গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। সেখানে নেতা-কর্মী, সমর্থকদের নিয়ে গণসংযোগের যাত্রা করলে তাতে সাধারণ মানুষ যুক্ত হয় প্রচার মিছিলে। পথে পথে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ তাকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন। প্রচার মিছিল বাড্ডার সাতারকুল ইসলাবাদে পৌঁছালে আকলিমা নামে এক মধ্যবয়সী নারীর হাতে লিফলেট দিয়ে ভোট চান তাবিথ। তিনি তাকে ৩০ জানুয়ারি ভোট দিতে যাওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় ওই নারী বলেন, আমরা ভোট দিতে চাই। কিন্তু ভোট দিতে পারি না। রাতেই তো ভোট হয়ে যায়। সকালে উত্তর বাড্ডার ৪১ নং ওয়ার্ডেও সাঁতারকুল, মেরাদিয়া, জোয়ারসাহারা, পশ্চিম পদরদিয়া, পূর্ব পদরদিয়া, ইসলামবাগ হয়ে ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের মগাইর থেকে শুরু হয়ে রহমাতুল্লাহ কলেজ, আকছারটেক, বেরাইদ, নামার বাজার হয়ে ফকিরখালি পর্যন্ত এলাকায় গণসংযোগ করেন।
গণসংযোগের শুরুতে তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচনে জয়ী হতেই। নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৩০ জানুয়ারি একটি পরীক্ষার দিন, জীবনবাজির লড়াই। এই পরীক্ষায় জয়ী হতেই হবে। তিনি নেতা-কর্মীদের মনোবল ধরে রাখারও আহ্বান জানান।
রহমতুল্লাহ গার্মেন্ট এলাকায় তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন ধারা দেখছি। আগে পোস্টার ছেঁড়া হতো। এখন অনেক জায়গায় ব্যাটারিসহ মাইক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে ফেরত দিচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচনের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করে সবার জন্য একটি সুস্থ পরিবেশ তৈরি করুন। নির্বাচনের আরও ১২ দিন বাকি আছে। প্রতিটি দিন যেন সবাই সুস্থভাবে প্রচার চালাতে পারেন।
বাড্ডা এলাকার সমস্যা তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, এই এলাকা নতুন করে সিটি করপোরেশনে যুক্ত হয়েছে। কিন্তু নাগরিক সুবিধা নেই। রাস্তাঘাট খারাপ। সড়কে বাতি নেই। কর্মজীবী নারীদের জন্য এখনো অনিরাপদ। গত মৌসুমে এ এলাকার মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, মেয়র নির্বাচিত হলে নাগরিকদের নিরাপত্তাসহ সব রকমের ব্যবস্থা নেবেন।
তাবিথ আউয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর পেজে পোস্ট করা একটি ছবি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। ওই ছবিকে নিয়ে অনেকে বলছেন তিনি ‘বাস কনডাক্টর সেজেছিলেন’। ছবিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, ২০১৫ সালে নির্বাচনী প্রচারের ওই ছবিতে আমি বাসের জানালার বাইরে গণসংযোগের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে বাসের কনডাক্টর সাজার কোনো চেষ্টা ছিল না। এটাকে নিয়ে এখন অপব্যবহার করা হচ্ছে।
বিএনপি মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করেন, প্রতিদিন নতুন নতুন পদ্ধতিতে প্রচার প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। এতোদিন বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হতো। এখন মাইক কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পোস্টার না লাগাতে হুমকি দিচ্ছে। হামলা করা হচ্ছে। অনেককে গ্রেপ্তারও করা হচ্ছে। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান, নিপুন রায় চৌধুরী, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মহানগর বিএনপির আহসান উল্লাহ হাসান, বজলুল বাসিদ আঞ্জু, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
উন্নয়নের জন্য ক্ষমতার পরিবর্তন আনতে হবে: ইশরাক: গতকাল ষষ্ঠ দিনের প্রচারণায় দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন ধানমন্ডির বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে বলেন, এই নির্বাচন অধিকার আদায়ের নির্বাচন। এটা কোনো ব্যক্তির নির্বাচন নয়। এটি জনগণের অধিকার ও ভোটের লড়াইয়ের নির্বাচন। আমি ধানের শীষ নিয়ে এই লড়াইয়ের অংশ নিচ্ছি। আমি বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি। মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দেখছি যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমরা এই লড়াইয়ে বিজয়ী হবোই। তবে নির্বাচনী প্রচারনায় সকল প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, অনেক জায়গায় ধানের শীষের পোস্টার লাগাতে বাঁধা দেয়া হচ্ছে। কোথাও লাগানো গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যে তা ছিঁড়ে ফেলছে সরকারি দলের লোকজন। আমরা নির্বাচন কমিশনকে এগুলো নিয়ে অনেক অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাতই করছে না। এভাবে কী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে? এটাকে তো নিরপেক্ষ নির্বাচন বলা যাবে না। তারপরও আমরা শেষ রক্ত থাকা পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য, ভোটের অধিকার ফিরে পাবার জন্যে লড়াই করবো, সংগ্রাম করবো। যেকোনো পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছি। নেতা-কর্মী-সমর্থকদের সংগঠিত থাকার আহবানও জানান অবিভক্ত ঢাকার মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক।
গতকাল দুপুরে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর সড়কে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন ইশরাক। পায়ে হেঁটে লিফলেট বিতরণ করে করে দোয়া চেয়েছেন তিনি। ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, ঝিগাতলা, কলাবাগানের বিভিন্ন এলাকায় ও অলি-গলিতে যান এবং ভোটারদের কাছে ধানের শীষের প্রতীকে ভোট চেয়ে লিফলেট দেন। এ সময়ে রাস্তার দুই ধারে পথচারীরা দাঁড়িয়ে তাকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। বিভিন্ন জায়গায় নারী ভোটাররাও ইশরাককে শুভেচ্ছা জানাতে ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আসে শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে। এসময় ছোট্ট শিশুকে কোলে নিয়ে আদর করতেও দেখা গেছে ইশরাককে। একাধিক এলাকায় স্থানীয়রা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছাও জানান।
সকাল থেকে ধানমন্ডি, কলাবাগানের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন ইশরাক। এ সময় তার পাশে ছিলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফত আলী সপু, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, গোলাম সারোয়ার, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকনসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গণসংযোগে ‘মাগো তোমার একটি ভোটে-খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে।’ ‘ঢাকার ছেলে ইশরাক ভাই- ধানের শীষে ভোট চাই।’ ‘উন্নয়নের মার্কা-ধানের শীষ মার্কা।’ ‘গণতন্ত্রের মার্কা-ধানের শীষ মার্কা।’ ‘ইশরাক ভাই যোগ্য লোক-ধানের শীষে দিবো ভোট’ ইত্যাদি সেøাগানে হাজারো কন্ঠে মুখরিত করে তোলে সমগ্র এলাকা। ধানমন্ডি ১৫ নম্বর ঝিগাতলা হয়ে রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, লালবাগের অংশবিশেষ, স্যায়েন্স ল্যাবরেটরি, সেন্ট্রাল রোড, হাতিরপুল, এ্যলিফ্যান্ট রোড, নীলক্ষেত এলাকায় গণসংযোগ করেন প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। এসময় স্থানীয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ গণসংযোগে অংশ নেন।
গণসংযোগকালে ইশরাক হোসেন বলেন, ঢাকা এখন যানজট ও দূষণের নগরী। উন্নয়নের নামের ঢাকার ছবিটা কী আপনারা তা দেখছেন। নাগরিক সেবা বলতে কিছু নেই। আছে জনদুর্ভোগ আর দুর্নীতি। এই অবস্থান করতে হলে ক্ষমতার পরিবর্তন আনতে হবে। নগরবাসী পরিবর্তন চায়। আসুন এই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে ভোটের দিন ভোটারদের ভোট কেন্দ্র যেতে হবে। ভোট দিতে হবে পরিবর্তনের জন্য, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যে। আমরা এই ভোটকে আন্দোলনের অংশ বলে মনে করি।
হাজারীবাগের নাগরিকদের দুরাবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, মহানগরী সিটির ভেতরেই এই হাজারীবাগ। এখানকার মানুষজন আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বাসযোগ্য এলাকা বলা যায় না এটাকে। মনে হয় না এটি ঢাকার একটি অংশ। রাস্তা-ঘাটের কী অবস্থায় আপনারাই বলুন কি করেছেন ১২ জন যাবত সিটি মেয়ররা?
টিকাটুলি এলাকায় গণসংযোগ: এদিকে গতকাল বিকেলে রাজধানীর রামকৃষ্ণ (আরকে) মিশন, টিকাটুলি, বঙ্গভবন ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ইশরাক হোসেনের পক্ষে ধানের শীষ মার্কায় ব্যাপক গণসংযোগ করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় প্রচার সেলের আহ্বায়ক ও বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদের নেতৃত্বে গণসংযোগে অংশগ্রহণ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রফিক, ওবায়দুর রহমান টিপু, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের, আব্দুল হাই পল্লব, আজিজুল ইসলাম নান্টু সহ কয়েকজন। তারা আরকে মিশনের পুরোহিতদের সাথে মতবিনিময় করে ধানের শীষ মার্কায় ভোট চান। এছাড়া বঙ্গভবন ও ইনকিলাব অফিসের স্টাফদের মাঝে ধানের শীষ প্রতীক সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেন। স্থানীয়দের মাঝে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ইশরাক হোসেনের জন্য ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেয়ার আহŸান জানান নেতৃবৃন্দ। এছাড়া লালবাগ, ইসলামপুর ও চকবাজার এলাকায় ইশরাক হোসেনের পক্ষে গণসংযোগ করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রফিক শিকদার, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, আবদুর রহিম, আলমগীর হোসেন প্রমুখ। তারা এলাকাবাসীর কাছে ধানের শীষের ভোট প্রার্থনা করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।