বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
একদিন গোলাম খাজা শাহ মোহাম্মাদ আরিফ রেওগারীর কমপ্লেক্স দেখতে। এ দেশের ইভেন্ট আয়োজকরা এতই সময়ানুবর্তী যে, আমরা বিদেশিরা তাদের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারি না। ভ্রমণের আমির হযরতজী পীর জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী এবং দুনিয়ার বহু দেশের অন্য অনেক মাশায়েখ এমন টাইট কর্মসূচী ফলো করতে হাঁপিয়ে উঠছিলেন।
চীনের একজন বৃদ্ধ নকশবন্দী পীর একদল তরুণের মতো পরিশ্রমী আর আমাদের বাংলাদেশের প্রফেসর ড. আবদুস সালাম মিয়ার কোনো তুলনা হয় না। নবযুবকের মতো এই বর্ষীয়ান পীরও বার্ধক্যের পরোয়া করেন নি। আমাদের গাড়ি বহর এসে থামল কমপ্লেক্সের সামনের বিশাল পার্কিংয়ে।
তোরণের সামনেই নবনির্মিত হোটেল রেস্তোরা সরাইখানা। উজবেক সরকার হালাল খানা, পানীয় ও আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাপনায় ইসলামিক ট্যুরিজম প্রজেক্টের আওতায় এসব সাইট ডেভেলপ করছে। মজার ব্যাপার হলো উজবেকরা আইন মেনে চলে। শৃঙ্খলা বজায় রাখার নিয়্যাত রাখে।
মালয়েশিয়া, সউদী আরব, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপীয় অন্য কিছু দেশের মতোই পুলিশকে তারা সহযোগিতা করে। অন্য কথায়, আইন ও বিচারকে শ্রদ্ধা করে, ভয় পায়। সহজেই বোঝা যায়, উজবেকরা নতুন সময়ে বেশ উন্নতি করবে।
গাড়ি থেকে নেমে আমাদের সবাই বিশালায়তন ও নয়নজুড়ানো কমপ্লেক্সে প্রবেশ করলাম। খাজা আরিফ রেওগারীর নাম ইতিহাসে পড়েছি। তরিকার শাজারানামায় পেয়েছি। তবে তার ঠিকানায় আসা হয়নি। এবারই প্রথম তার স্মৃতি বিজড়িত মাটিতে বেড়াতে আসা। অসাধারণ সুন্দর বাগান, পার্ক, সড়ক ও সমাধি সৌধ। অন্যসব বুজুর্গের কমপ্লেক্সের মতো এখানেও বাগানের মাঝে মাঝে কোরআন, হাদিস এবং সংশ্লিষ্ট ইসলামী স্কলারদের বাণী উৎকীর্ণ রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় পর্যটন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এসব ফলক পার্ক ও গার্ডেনে খুব সুন্দর করে লাগানো রয়েছে। একটি স্টান্ডের উপর একখানা খোলা কিতাবের মতো ইস্পাতের পাতে আরবি ইংরেজি ও উজবেক ভাষায় লেখা বাণী। চারপাশে কোরআন শরীফের পাতার ডিজাইন। সোনালি কারুকাজ। মাঝে লেখা।
মাজার ভবনে কোরআন, হাদিস ও কিতাবাদি রাখার রিহাল। বসার জন্য কাঠের লম্বা বেঞ্চি। অনেক জায়গায় কার্পেট ও সতরঞ্জি। ওজুর জায়গাগুলো অসাধারণ উন্নত। ব্যাগপত্র রাখার লকার, কোট চাদর ইত্যাদি রাখার হুক হ্যাংগার। ঠান্ডা গরম পানি। বসার আসনে ফোমের কুশন। হাত পা মোছার তোয়ালে। পা মোছার জন্য ভিন্ন তোয়ালে। সাথে সাথে ব্যবহৃত তোয়ালে ধোয়া ও শুকানোর ব্যবস্থা।
দর্শনার্থীদের সেবার জন্য নিযুক্ত কর্মীর পাশাপাশি স্থানীয় তরুণরা এসেও স্বেচ্ছা শ্রমে মুসাফিরদের খেদমত করছে। কী অসাধারণ আদব আখলাক। কত মনোহর তাদের বিনম্র আচরণ ও মায়াভরা সেবা। ইসলামী আখলাক মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়। প্রকৃত মানুষ বানায়। সত্যিই আমরা অভিভূত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।