মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সারা বিশ্বে জাতীয়তাবাদের নামে যে সব বিভক্তিকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, যে সব বৈষম্যম‚লক লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যে পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, যে ফল পাওয়া যাচ্ছে এবং এ জন্য যে ম‚ল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে, সেটা পুরো বিশ্বের জন্য একটা স্থায়ী ধাঁধাঁ হয়ে আছে।
কিছু চরম জাতীয়তাবাদী তাদের কল্পিত জাতির জন্য চরম ক্ষতির কাজ করেছেন। এই একই ট্রাজিক ভুল করার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পরবর্তী ব্যক্তি হতে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে।
বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে ক্ষমতা ভাগাভাগির একটা গতিশীল ফর্ম‚লা প্রয়োগের মাধ্যমে বিশ্বের ইতিহাসে সফল উদাহরণ হিসেবে টিকে আছে ভারত। এই সাফল্যের বীজ লুকিয়ে আছে দেশের সাংবিধানিক কাঠামোর তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্যের মধ্যে: গণতন্ত্র, ফেডারেল ব্যবস্থা ও সেক্যুলারিজম।
যে দেশটির ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু, সেখানে এমন সময়ও গেছে যখন প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালাম ছিলেন মুসলিম, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ছিলেন শিখ এবং প্রশাসনের পেছনে ম‚ল ক্ষমতা ছিল ইটালিয় বংশোদ্ভ‚ত ক্যাথলিক হিসেবে বেড়ে ওঠা সোনিয়া গান্ধীর কাছে।
ভারতে মুসলিমরা হলো ১৮০ মিলিয়নের বিশাল সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠি। তারা যদি রাষ্ট্রীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী নীতি দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে পুরো দেশে রক্তবন্যা বয়ে যাবে এবং দেশ ভেঙ্গে পড়বে। বিপরীতে, তারা পুরো বিশ্বের কাছে এই অভিযোগের বিরুদ্ধে উদাহরণ হিসেবে টিকে আছে যে, ইসলাম গণতান্ত্রের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু স¤প্রদায়গুলো অনুভব করছে যে, তারা হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এটা হলো ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য কট্টরপন্থী হিন্দুদের প্রকল্প। যদিও প্রতিক‚ল পরিবেশে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকায় মোদির প্রথম মেয়াদে (২০১৪-২০১৯) এ ব্যাপারে খানিকটা চুপচাপ ছিল সরকার।
বর্তমান পরিস্থিতির তিনটি দিক রয়েছে। ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) ২০২০ সালে বাস্তবায়ন করা হবে এবং তালিকাভুক্তির জন্য নাগরিকদেরকে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে অথবা তাদেরকে দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে হবে। ২০১৮ সারে উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে এটি চালু করা হয় এবং এর উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ মুসলিমদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো। কিন্তু এই দেশে নাগরিকত্বের কাগজপত্র থাকাটা একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা, স্বাভাবিকভাবে কেউ সেটা রাখে না। যেমন আমি আর আমার চার ভাইবোনের কারোরই জন্ম সনদ নেই।
আগস্টে, সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে, যেটা ছিল ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগুরু রাজ্য। সবশেষে, ডিসেম্বরে পার্লামেন্টে সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল পাস হলো। এই আইনের কারণে প্রতিবেশী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের আগে আসা হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ ও শিখ ধর্মাবলম্বীরা ভারতের নাগরিক হতে পারবে, কিন্তু মুসলিমরা পারবে না। সিএএ পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই পাস হয়েছে এবং এটি নিয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে হয়তে ধর্মীয় শর্তে নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সেটিও আইন পাসের সময় বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
সিএএ ছিল সবশেষ পদক্ষেপ যেটির কারণে প্রথমে আসামে এবং পরে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মজার ব্যাপার হলো আসামীদের সকল অভিবাসীর ব্যাপারে আপত্তি রয়েছে - তারা মুসলিম হোক বা অমুসলিম হোক।
যেসব মুসলিম শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করছে - বিশেষ করে তরুণীরা, যারা হিন্দুত্ববাদী কট্টরপন্থীদের উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে। তারা এমনভাবে হিজাব জাতীয় পোশাক পড়ছে যাতে তাদের মুসলিম পরিচয় স্পষ্ট হয় আবার তারা নিজেদেরকে ভারতের তিনরঙা পতাকায় মুড়ে রেখেছে, তারা জাতীয় সঙ্গীত গাচ্ছে এবং ভারতের সংবিধান থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছে।
মোদির প্রতি বার্তাটা এখানে পরিষ্কার, জোরালো ও শক্তিশালী: আমরা ভারতীয়, আমরা সাংবিধানিক ম‚ল্যবোধ রক্ষার প্রহরী, আমরা দেশপ্রেমী, এবং আমরা ভারত ও সকল ভারতীয়ের ঐক্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। আপনি, মোদি, আমাদের সকলের জন্য হুমকির। সূত্র : জাপান টাইমস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।