মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ব্রিটেনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা কয়েকগুণ বেড়েছে এবং দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পর তা আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে হামলার ঘটনা মনিটরিং’এ নিয়োজিত সংস্থা ‘টেল মামা’ এ তথ্য দিয়েছে। এ সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে গত বছর মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনা ৩২৬ শতাংশ বেড়েছে। এ জাতীয় ঘটনা ১৪৬ থেকে বেড়ে ৪৩৭টি দাঁড়িয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজাবধারী মুসলমান মহিলারা মারাত্মক পরিস্থিতিতে পড়েছেন। হামলার আশংকায় তাদের অনেকের পক্ষেই প্রাত্যহিক কাজ-কর্ম চালানো পর্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে বলা হয়েছে, ধর্ম ভিত্তিক বিদ্বেষের কারণে হামলার শিকার হয়েছেন যারা তাদের ৬১ শতাংশই নারী। এ ছাড়া, সংস্থাটির তদন্তে আরো ওঠে এসেছে এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন যারা তাদের ৭৫ শতাংশই হলেন মুসলিম নারী। টেল মামা’র সভানেত্রী এবং লেবার পার্টির সাবেকমন্ত্রী শাহীদ মালিক বলেন, ব্রিটেন এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে পড়েছে। রাস্তাঘাটে মুসলমান নারীরা যে বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন তা পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে সরকারের কোনো ভুল ধারণা থাকা উচিত নয়। ব্রেক্সিট এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে বর্ণবাদ বৃদ্ধি পাওয়াকে কেন্দ্র করে ব্রিটেনের সংখ্যালঘুদের জন্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এ সময়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে ব্রিটেনের ইতিহাসে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে বলেও আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, ব্রেক্সিট গণভোটের পর বর্ণবাদের শিকার হয়েছেন বিবিসির এক সাংবাদিক। তার নাম সিমা কোতেচা। এ জন্য তিনি গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এমন অবমাননাকর মন্তব্য আমাকে ১৯৮০র দশক থেকে শুনতে হয় নি কখনো। তিনি বিবিসির রেডিও ফোর-এর রিপোর্টার। তার বসবাস ব্রিটেনের বাসিংস্টোকে। তাকে আক্রমণ করতে ব্যবহার করা হয়েছে আপত্তিকর শব্দ। এ জন্য তিনি লিখেছেন, এমন গালিতে আমি হতাশ। আমাকে আমার নিজের শহরে এই মাত্র...বলে গালি দেয়া হলো! এমন কথা ১৯৮০র দশক থেকে কখনো আমাকে শুনতে হয় নি! ব্রেক্সিট গণভোটের পর ব্রিটেনে বর্ণবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারই প্রমাণ সিমা কোতেচা। বিশেষ করে মুসলিমরা সেখানে বেশি বেশি বর্ণবাদ, অপমানের শিকার হচ্ছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন (এমসিবি) এমন অনেকগুলো ঘটনা, ভীতির তথ্য একত্রিত করেছে। তারা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর প্রধান ড. সুজা শফি বলেছেন, রাজনৈতিক সঙ্কট সামাজিক স্থিতিশীলতাকে হুমকিতে ফেলছে। অন্যদিকে লন্ডনে নিয়োজিত পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত জাতিগত এই বিদ্বেষের ঘটনাগুলোতে নিন্দা জানানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বৃটিশ সরকারের প্রতি। এ ঘটনা নিয়ে বৃটিশ বিভিন্ন মিডিয়া সরব। অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে বৃটিশ মুসলিমরা এখন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অনেক নারী তাদের নিত্যদিনের কাজে বেরুতে শঙ্কিত। ব্রেক্সিট ভোটের পর জাতিগত বিদ্বেষ বৃদ্ধির ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিমদের ঘৃণা বিরোধী গ্রুপ টেল মামা তাদের বার্ষিক জরিপে দেখিয়েছে যে, গত বছরে জাতিগত বিদ্বেষ বেড়েছে শতকরা ৩২৬ ভাগ। তবে মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন বলেছে, শুধু গত সপ্তাহান্তে তারা ১০০ জাতিগত ঘৃণার ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে। গণভোটের পর বর্ণবাদী এই বিদ্বেষ সেখানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ব্রেক্সিট গণভোটের ফলে বর্ণবাদ এখন উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে বলে সোমবার হাউজ অব কমন্সে মন্তব্য করেছেন লেবার দলের বিশিষ্ট নেতা হেরিয়েট হারম্যান। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, লেবার দল নেতা জেরেমি করবিন সহ রাজনৈতিক নেতারা। পোলিশ ও অন্য সংখ্যালঘুরা ব্রিটেন জুড়ে গত কয়েকদিনে মারাত্মক মৌখিক গালির শিকার হচ্ছেন। ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিল বলেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববারের মধ্যে অনলাইনে পুলিশ এমন ঘৃণা সংক্রান্ত অপরাধের যে তথ্য পেয়েছে তা শতকরা ৫৭ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। টেল মামা বলেছে, এর বড় প্রভাব পড়ছে মুসলিম নারীদের ওপর, বিশেষ করে যারা ইসলামিক পোশাক পরে বাইরে বের হন। তাদের বিরুদ্ধে এই বর্ণবাদী আচরণ এতটাই বেড়েছে যে তারা নিজেদের দিন থেকে দিনের কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। টেল মামার চেয়ার সাবেক লেবার পার্টির যোগাযোগ মন্ত্রী শহীদ মালিক। তিনি বলেছেন, আমরা একটি অপ্রদর্শিত অঞ্চলে অবস্থান করছি। অনলাইন ও রাজপথে মুসলিম বিরোধিতা যেন বিস্ফোরণ ঘটেছে। এক্ষেত্রে মুসলিম নারীরা বৈষম্যমূলকভাবে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। বর্ণবিদ্বেষী কাপুরুষদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন তারা। ব্রেক্সিট ভোটের প্রেক্ষাপটে বর্ণবাদী বিদ্বেষ বৃদ্ধিতে যেভাবে বেরিয়ে আসছে। এ অবস্থায় সরকারকে কোন মোহের মধ্যে থাকা উচিত নয়। বৃটিশ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে দ্রুতই এ ঘটনা অস্বস্তিকর এক অবস্থায় রূপ নিতে পারে। তাই এখনই, আজই আমাদের সরকার, রাজনৈতিক দলগুলো ও আমাদের মিডিয়াকে তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যেন ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনে বর্ণবাদ ও অহেতুক ভয়কে প্রত্যাখ্যান করা যায়। আমাদের ইতিহাসের এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেতৃত্বের পরিপক্বতা প্রদর্শনে ব্যর্থ হলে তা আমাদের সবার জন্য এক কঠিন পরিণতি বয়ে আনবে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্ণবাদী আচরণের শিকার যেসব মানুষ তার মধ্যে শতকরা ৬১ ভাগই নারী। তার মধ্যে আবার শতকরা ৭৫ ভাগ নারী। তারা মাথায় স্কার্ফ বা বোরকা পরার কারণে এমন আচরণের শিকার হচ্ছেন। টেল মামা বলেছে, নারীরা যখন পাবলিক গাড়িতে করে শহরে যাচ্ছেন বা সিটি সেন্টারে যাচ্ছেন বা কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন তখনই তাদেরকে আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে। অবমাননার শিকার হতে হচ্ছে। এমন শতকরা ১১ ভাগ ঘটনা ঘটেছে স্কুল ও কলেজগুলোতে। এর মধ্যে আবার ৩৫টি ঘটনা ঘটেছে মানহানি করার মতো ঘটনা অথবা শারীরিক আক্রমণ। টেল মামা তাই বলেছে, এ জন্য অফস্টেড ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মুসলিম বিরোধিতার বিষয়টি আমলে নিতে হবে। স্কুল থেকে বর্ণবাদ তাড়াতে হবে। এমন ঘটনা এর আগেও অনেকবার রিপোর্ট হয়েছে। গত নভেম্বরে একজন নারী লন্ডনে একটি বাসে অন্তঃসত্ত্বা একজন মুসলিম নারীকে অপমান করছিলেন। তিনি অভিযোগ করছিলেন, ওই মুসলিম নারী আইসিসের সমর্থক। এ দৃশ্য সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। অভিযুক্ত নারীকে স্থগিত রাখা জেল দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া অপমানের শিকার হচ্ছেন ট্যাক্সি চালকরাও। তাদের একজন ইয়াসির হোসেন। তিনি দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেছেন, তাকে এ বছরের ১৮ই জুন জারজ বলে গালি দেয়া হয়েছে। টেল মামা যে তথ্য উপস্থাপন করেছে তাতে দেখা যায়, মুসলিমদের অপমান যারা করছে তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। টেল মামা তাই বলেছে, এতে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ টিনেজার উগ্র মৌলবাদী হয়ে উঠছে এবং তারা তাদের মূলধারা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন হাউজ অব কমন্সে নিন্দা জানালেও লন্ডনের মেয়র সাদিক খান স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে বাড়তি নজরদারির নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সেক্রেটারি জেনারেল ড. শুজা মফি বলেছেন, আমাদের সব রাজনীতিবিদের প্রতি আমার আহ্বান তারা একত্রিত হোন। এই যে বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে তা যেন তারা সারিয়ে তোলেন। এখন আমরা দেশজুড়ে ঘৃণামুলক বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি, সংখ্যালঘুরা টার্গেট হচ্ছেন। এটা হতাশার। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের আরেক রিপোর্টে বলা হয়েছে, হ্যাকনিতে গণভোটের পর ধারণ করা একটি ভিডিও চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গাড়ির ভিতর এক ব্যক্তি অন্য কাউকে বলছেন, গো ব্যাক টু ইওর কান্ট্রি। ফেসবুকে ওরিং সাইনস নামে একটি এলবাম খোলা হয়েছে, তাতে এমন ঘটনার শিকার মানুষদের তথ্য সন্নিবেশ করা হচ্ছে। টুইটারে কিরস্টি অ্যালান নামে একজন পোস্ট দিয়েছেন এই বলে যে, গণভোটে কিভাবে ভোট দিয়েছেন এ কথা জিজ্ঞেস করতেই এক ইতালিয়ানকে অপমান করা হয়েছে। এমন অপমান করা হচ্ছে তাদেরকে যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও। ১৭ বছর বয়সে পোলান্ড থেকে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যে পড়তে এসেছেন আগাতা ব্রেজেজনিয়াক। তিনি এখন রসায়নে পিএইচডি করছেন। ৮ বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাজ্য আমার কাছে নিজের বাড়ির মতো। এখানে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করি। কিন্তু গণভোটের ফলে অনেক পোলিশের মতো আমিও মনে করি অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য, বর্ণবাদ বৃদ্ধি পাবে। তিনিই বলেন, গণভোটের পর একজন নারী তাকে জিজ্ঞেস করেছেন তিনি পোলিশ কিনা। যখন তিনি স্বীকার করেন তখন তাকে শঙ্কিত হতে বলেন ওই নারী। তিনি যুক্তরাজ্যে থাকতে চাইলে তাকে ভিসা সংগ্রহ করতে বলা হয়। ব্রেজেজনিয়াক বলেন, তার এ কথায় আমার কান্না চলে এসেছিল। কেমব্রিজশায়ারে হান্টিংটনে ইউরোপ ছাড়। আর কোন পোলিশ নীচ লোক নয় লেখা পোস্টার দেখতে পাওয়া গেছে। এমন কার্ড স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলগুলোর বাইরে বিতরণ করা হয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।