Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জমজমাট প্রচার-প্রচারণা

ফারুক হোসাইন/ইয়াছিন রানা | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীজুড়ে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো ঢাকা। আওয়ামী লীগের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণা বিএনপির প্রার্থীদের চেয়ে বেশি। এরই মধ্যে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ও আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে জমজমাট লড়াই শুরু হয়েছে নির্বাচনের মাঠে। হামলার জন্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএনপিকে এবং বিএনপির প্রার্থীরা আওয়ামী লীগকে দায়ি করেছেন। অভিযোগ জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনেও। যদিও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনে দেয়া অভিযোগগুলোর বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দুই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস তার প্রচারণায় হামলা ও তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন আতিকুল ইসলাম।

বিএনপি প্রার্থীরা বলেন, তাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণা এবং পোস্টার টানাতে না দেয়া, টানানোর পর ছিড়ে ফেলা, কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীর বাড়ি ও নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলার ঘটনাও ঘটেছে ইতোমধ্যে। বিএনপির ৬৯জন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এক হাজার ২৪টি রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় নির্বাচনকালীন সময়ে গ্রেফতার বা হয়রানি না করার কথা বলা হলেও ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেফতার এবং কয়েকজনে পুলিশ হয়রানি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ৬জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা থাকলেও পুলিশ বিপরীত আচরণ করছে। হামলার পাল্টা অভিযোগ করছেন দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। আবার নির্ধারিত সময়ের আগে তাপসের প্রচারণায় মাইক ব্যবহার, রঙিন পোস্টার, আনুষ্ঠানিক প্রচারণার আগেই পোস্টার টানানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ইশরাক হোসেন। উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করার পর নির্বাচন কমিশন শোকজও করে তাকে।

এদিকে ওয়ারিতে বিএনপি প্রার্থী ইশরাকের বাসায় ভোট চেয়ে ফিরে আসার সময় প্রচারণায় হামলা চালানোর অভিযোগ করেছেন শেখ ফজলে নূর তাপস। বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিােগ করেছেন আতিকুল ইসলাম। এদিকে হামলা পাল্টা হামলা, অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যেও থেমে নেই প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। প্রতিদিনই সকাল থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ছুটছেন নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ভোটারদের জড়িয়ে নিচ্ছে বুকে, করছেন কোলাকুলি, মোসাফা। প্রচারণাকালে সড়কে এবং দোকানে-বাড়ি-ঘরে মানুষদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন প্রার্থীরা। নগরীর সড়ক, অলিগলিতে ঝুলছে প্রার্থীদের পোস্টার। হঠাৎ পাড়া-মহল্লা, মূল সড়কে সমর্থকরা বের করছেন স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে মিছিল। দুপুরের পর থেকে চলছে গানের সুরে সুরে ভোট চাওয়ার মাইকিং। মহল্লা থেকে শুরু করে শহরের প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকান, বাজার, অফিস, আড্ডার আলোচনা সিটি নির্বাচন।

হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ: ১০ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে গত শনিবার বাংলামোটরে উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথের সমর্থকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে ১জন আহত হয়। রোববার তাবিথ আউয়াল মাজার রোড এলাকায় জয়বাংলা শ্লোগানে এবং মিরপুরে প্রচারণা চালানোর সময় সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়। এছাড়া পুলিশ তার ৫জন কর্মীকে গ্রেফতারও করে। রোববার দক্ষিণে নয়াবাজারে পুলিশ ইশরাকের কয়েকজন কর্মীকে হয়রানি করে। এসময় তার ৪জন কর্মীকে আটক করে। এরপরই ওয়ারী থানার অধীন বলধা গার্ডেন এলাকায় স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫জন কর্মীকে ধানের শীষ পোস্টার লাগানোর সময় পুলিশ আটক করে। হাজারীবাগ পার্কের সামনে থেকে প্রচার কাজ চালানোর সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা রিক্সার গতিরোধ করে ২জন কর্মীকে মারধর করে মাইক ও মাইকের সরঞ্জাম রেখে দেয় এবং পরবর্তীতে থানা পুলিশে দেয়ার হুমকি দেয়। প্রায় একই সময় ৩৮নং ওয়ার্ডস্থিত ৩নং যোগীনগর রোডে সংরক্ষিত মহিলা আসনের প্রার্থী মেহেরুন নেসা’র নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়। এ হামলায় শ্রমিক দলের ওয়ার্ড সভাপতি আব্দুস সালাম গুরুতর আহত হয়। ৬২নং ওয়ার্ড নয়ানগর এলাকার যাত্রাবাড়ী থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ইয়ামিন, ইয়াছিন ও ইমন’কে ধানের শীষের পক্ষে পোষ্টার লাগানোর কারণে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে মারধর করে। কবি নজরুল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি এহসান মামদুদ, নিখিল চন্দ্র শ্রাবন ও সিরাজ ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ শেষে গোপীবাগ আসার পথে যোগীনগর এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ কর্মীরা হামলা করে। এতে গুরুতর আহত হয়। ২৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাহিদা মোর্শেদ-এর প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. তামিম ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রাকিবসহ অন্যরা প্রচারণা না করার হুমকি এবং তার বাসায় গিয়ে নেতা-কর্মীদের দীর্ঘ ৫ ঘন্টা আটকে রাখে। সকাল ১১টায় নূরফাতে আলী লেনে বিএনপি সমর্থিত ধানের শীষ ও লাটিম মার্কার প্রচারণাকালীন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নেতৃত্বে পুলিশসহ তার নেতা-কর্মীদেরকে নিয়ে সাহিদা মোর্শেদ-এর প্রচারণা বাধাগ্রস্থ করে এবং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতির চশমা নিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করে।
এদিকে গতকাল তেজকুনিপাড়া তাবিথ আউয়ালের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দুর্বৃত্তরা। ৩৭ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে মাইকিং করার সময় বাধা দেয়। মাইক ভেঙে ফেলে নেতা-কর্মীদের মারধর করে। উত্তরা ১ নং ওয়ার্ড, সোনারগাঁও জনপথ রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষ প্রতীক ও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। সন্ধ্যায় উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরের ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান সেগুনের মিছিলে হামলা করে একদল দুর্বৃত্ত। এসময় জাহাঙ্গীর, সবুজ ও আকতার নামে তিনজন বিএনপি কর্মী আহত হয়।

মামলা-হয়রানিতে বিএনপির প্রার্থীরা: উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুই সিটির ১২৯টি ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর দিয়েছে বিএনপি। এসব কাউন্সিলরের মধ্যে ১১১টি ওয়ার্ডের প্রার্থীর হলফনামা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। এদের ৬৯জনের বিরুদ্ধে এক হাজার ২৪টি মামলা রয়েছে। যার বেশিরভাগই করা হয়েছে ২০১৭-১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। প্রায় প্রতিটি মামলায় অনুমতি ছাড়া মিছিল-সমাবেশ, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সরকারি কাজে বাঁধাদানের কারণে এসব মামলা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় পুরনো এসব মামলায় প্রার্থীদের গ্রেফতার ও হয়রানির অভিযোগ করছেন অনেকে। প্রথম দিকেই একজন কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদেরকেও হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রার্থী। নির্বাচনের সময় বিএনপির প্রার্থীদেরকে হয়রানি-গ্রেফতার না করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন আশ্বাস দিলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মাত্র ৬জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। তাদেরকে পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন হয়রানির কোন খবর পাওয় যায়নি।

বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি মানছে না: আতিক
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে প্রচারণা চালাচ্ছি কিন্তু বিএনপি প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি মানছেন না। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি যার যার ভোট সে দেবে, যাকে খুশি তাকে দেবে। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করে মাটির মসজিদ, আবুল হোটেল, রামপুরা, বাড্ডা এলাকার আলাতুন্নেসা মাদরাসা হয়ে মধ্যবাড্ডাসহ বিভিন্ন এলাকায় নৌকা প্রতীকের প্রচারণা চালান আতিকুল ইসলাম।

পথসভাগুলোতে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কোনোদিন কাউকে বাধা দেইনি, তারা মিথ্যা কথা বলছে। একটু আগে আমি আসার সময় দেখলাম বিএনপির একটি মিছিল গান বাজাতে বাজাতে যাচ্ছে। আমি চাইলে তাদের দাঁড় করাতে পারতাম কিন্তু আমি স্বাগত জানিয়েছি। গান বাজিয়ে যাওয়ার সময় আমি ভিডিও করে নিয়ে এসেছি। সুতরাং তারা হয়তো নিজেরা বিশৃঙ্খলা করে একটি দোষ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ভোটারদের উদ্দেশে আতিকুল ইসলাম বলেন, নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। বাংলাদেশে উন্নয়নের মার্কা একটা আর তা হলো নৌকা। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে হবে। আমাকে যদি আপনারা নির্বাচিত করেন তাহলে সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ।

মাদকমুক্ত ঢাকা গড়ে তোলার আশাবাদ জানিয়ে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মাদকমুক্ত ঢাকা গড়তে চাই। যদি নির্বাচিত হই তবে অবশ্যই ঢাকাকে জলজট, যানজট, মাদকমুক্ত করবো। একটি উপ-নির্বাচনের মাধ্যমে নয় মাসের জন্য দায়িত্ব পেয়েছিলাম উল্লেখ করে মেয়রপ্রার্থী বলেন, এবার একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন হচ্ছে। দায়িত্বকালে যে সময় পেয়েছি, সেই সময়ের মধ্যে অবশ্যই ঢাকাকে যেভাবে সাজানোর কথা সেভাবে সাজাতে পারিনি। কিন্তু কিভাবে ঢাকা সাজবে, কিভাবে জলজট-যানজট দূর হবে, কিভাবে আমরা মানবিক ঢাকা গড়তে পারবো, কিভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে আসবে, নারী ও শিশুবান্ধব ঢাকা কীভাবে করা যায় সেই পরিকল্পনা করে ফেলেছি।

খেলার মাঠ দখলমুক্ত করা হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত এই মেয়র প্রার্থী বলেন, মাঠ কারও নিজস্ব না, মাঠ আমাদের সবার জন্য হবে। আমাদের দরকার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঘর থেকে বের করে মাঠে নিয়ে আসার। যেখানে যত মাঠ আছে, তা দখলমুক্ত করবো। এসময় তিনি নগরপিতা না, নগরসেবক হয়ে থাকতে চান বলেও জানান।

কর্মীদের চা বানিয়ে খাওয়ালেন আতিক
সারাদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে কিছুটা ক্লান্ত কর্মী-সমর্থকরা, ক্লান্ত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নিজেও। রামপুরা এলাকায় তখন অবস্থান তাদের। একটু যেন জিরিয়ে নিচ্ছিলেন সবাই, কথা বলছিলেন নিজেদের মধ্যে, কথা বলছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গেও। কিন্তু যাকে ঘিরে এই নির্বাচনি প্রচারণা, সেই মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম কোথায়?

এদিক-সেদিক তাকিয়ে সবার চক্ষু চড়কগাছ— একহাতে কেতলি, একহাতে চায়ের কাপ— রীতিমতো চায়ের দোকানি বনে গেছেন আতিকুল। চা বানাতে বানাতে নিজেই হাঁক ছাড়ছেন, ‘চা হবে, চা, চা, চা...।’ গতকাল বিকালে নৌকা প্রতীকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) নৌকা প্রতীকে মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের নির্বাচনি প্রচারণায় এমন দৃশ্যই দেখা গেল।

সারাদিনের নির্বাচনি প্রচারণায় যখন সবাই ক্লান্ত, ঠিক তখনই আতিকুল সবাইকে চাঙ্গা করতেই যেন চায়ের দোকানি হয়ে গেলেন। রীতিমতো চা বানিয়ে খাওয়ালেন দোকানের ক্রেতাদের, মালাই চা বানিয়ে দিলেন নিজের নির্বাচনি প্রচারণা বহরের দুয়েকজন নেতাকর্মীকেও। গুনে গুনে আট কাপ চা এসময় বানিয়েছেন তিনি সবার জন্য।
আগের উপনির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়ে এসে ফের মেয়রপ্রার্থী হওয়া আতিকুল নিজের হাতে চা বানানোয় তার নেতাকর্মীরা খুবই খুশি। তারা বলছেন, মেয়র হলেও তিনি যে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যেতেই পছন্দ করেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল। মেয়রপ্রার্থীর হাতে বানানো চা পান করে ভোটাররাও উচ্ছ্বসিত। তাদের অভিমত, কেবল নির্বাচনি প্রচারণার সময় নয়, ভোটে জয় পেলে মেয়রকেও সারাবছরই এভাবে পাশে চান তারা। আর যার দোকানে বসে ‘দোকানদারি’ করলেন আতিকুল ইসলাম, সেই চা দোকানদার ইয়াসিন বললেন, মেয়র সাহেব নিজে আমার চেয়ারে বসে চা বানিয়ে আমাকে সম্মান দিয়েছেন। তিনিও নিশ্চয় সবার সম্মান পাবেন।

তাবিথের গণসংযোগে জনতার ঢল:
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন। আর তাতে জনতার ঢলে নেমেছে। প্রতিদিনই তার গণসংযোগ নেতা-কর্মী-সমর্থক ছাড়াও সাধারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ বাড়ছে। নির্বাচনে প্রচারের চতুর্থদিনে গতকাল সোমবার মূল সড়ক পেরিয়ে অলিগলিতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করেছেন তাবিথ। সাধারণ মানুষ তাকে এক নজর দেখতে বাসা-বাড়ি ও অফিস-আদালত থেকে উন্মুখ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি সড়কের আশেপাশে, দোকানপাটে, অলিতে-গলিতে, বাসার ভেতরে গিয়ে মানুষের হাতে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে লিফলেট তুলে দেন। বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের বাসা ও ছাদ থেকে মানুষের শুভেচ্ছা গ্রহণ করে হাত নেড়ে তাদের ধন্যবাদ জানান। জনগণের এ ভালোবাসায় বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বেশ অভিভূত। কিন্তু তার সঙ্গে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার কথাও বলেছেন তিনি। তার বিশ্বাস, জনগণ ভোট্ দিতে পারলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তার অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান এমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না, যেটা দেখে জনগণ আশ্বস্ত হবেন যে তারা নিজেদের ভোট নিজেরা দিতে পারবেন।

দুপুরে কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও এলাকায় জনসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করছি, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না এবং সুষ্ঠু না হওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন নিজেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করছেন। অনেক বিতর্কিত কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলেন, এবার আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে ৩০ তারিখের আগে যেন ভোট না হয়। জনগণকে নিয়ে ভোটের দিন যথাযথভাবে প্রতিবাদ করতে হবে, যাতে কোনো চোরা ভোট এবার আর না পড়ে। জনগণ নিজের ভোট নিজে দেবে, জনশক্তিতেই আমরা বিজয়ী হব।

গণসংযোগকালে বিএনপি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা সকলকে নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবো। জনগণ জেগে উঠেছে। যেখানে যাচ্ছি সেখানেই ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জনগণের বিজয় হবে। এর আগে বেলা ১১ টায় দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রাজধানীর ফার্মগেট তেজকুনি পাড়া কলমিলতা মার্কেট থেকে দিনের প্রচারণা শুরু করেন তাবিথ আউয়াল। এসময় হাজার হাজার মানুষ তাবিথ আউয়ালের সমর্থনে রাস্তায় নেমে আসেন। বিভিন্ন ব্যবসা ও বিপণী কেন্দ্র থেকে মানুষ হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান বিএনপির এ মেয়র প্রার্থীকে। তেজকুনি পাড়া, রেলওয়ে মার্কেট, বিজ্ঞান কলেজ, কাওরান বাজার, ট্রাক স্ট্যান্ড, সাতরাস্তা বেগুনবাড়ি, নাবিস্কো, শাহীনবাগ, আরজতপাড়, নাখালপাড়া, নিকেতন এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন। তিনি ভোটাদের সঙ্গে কথা বলেন ও কুশলাদি বিনিময় করেন।

এ সময় গণসংযোগে অংশ নেন বিএনপি নেতা মো. শাহজাহান, হাবিবুর রহমান হাবিব, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কামরুজ্জামান রতন, আমিনুল হক, নিপুন রায় চৌধুরী, আহসান উল্লাহ হাসান, বজলুল বাসিত আঞ্জু, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও আজিজুর রহমান মোসাব্বির।

গণসংযোগকালে বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়ন কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, যারা ট্রাক চালান তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যথাযথ প্রক্রিয়ায় বৈধ লাইসেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। ট্রাক রাখার জন্য স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হবে। বেগুনবাড়িতে ভাঙা রাস্তা দেখিয়ে তিনি বলেন, এই শহরে যে মানের রাস্তা থাকা দরকার তা নেই। সড়কগুলো বেহাল অবস্থা। কুনিপাড়ায় ময়লা ডাস্টবিন দেখে সেখানে থেমে যান তিনি। এ সময় স্থানীয় জনগণ তার কাছে এসে বলেন, এখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকেন। চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, অস্বাস্থ্যকার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাবিথ আউয়াল বলেন, এ সমস্যা সমাধানে তার পরিকল্পনা আছে। তিনি নির্বাচিত হলে এ সকল সমস্যার সমাধান করা হবে। তেজকুনি পাড়ায় প্রচারের সময়ে তিনি বলেন, আগের মেয়র খাল উদ্ধারের কথা বললেও বাস্তবে উদ্ধার হয়নি। বরং হাইকোর্টের আদেশ থাকার পরও মেয়র নিজেই খালের উপর বিজিএমই ভবন তৈরি করে রেখেছেন। এর আগে কাওরানবাজার এলাকায় তিনি বলেন, আমি নির্বাচিত হতে পারলে কাওরান বাজারসহ প্রতিটি মার্কেটে পার্কিং তৈরির উদ্যোগ নিবো। চাঁদাবাজি ও মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবো। এই শহরে জলবদ্ধতা একটি অন্যতম সমস্যা। জলবদ্ধতা নিরসনে আমি কাজ করব। কারওয়ানবাজার কাঁচাবাজার এলাকায় তিনি দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলেন। দোকানে দোকানে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করেন। বাজার এলাকায় অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দৃষ্টিতে এনে সিটি করপোরেশনের উদাসীনতাকে দায়ী করেন। এ সময় অফিস আদালত থেকে সাধারণ জনগণ তাকে দেখতে বের হয়ে আসেন। তার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। রাস্তার ধারে ফুটপাতের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মুখে চাঁদাবাজি ও নানা রকম হয়রানি কথা শুনেন। রিক্সাওয়ালা এবং যাত্রীদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলে লিফলেট বিতরণ করেন। এ সময় অনেক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা হার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন।

নিকেতনে সাধারণ জনগণ ও নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভোটারদের নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে কেন্দ্রে যেতে হবে। আমাদের এজেন্টরা অবশ্যই কেন্দ্রে যাবেন। তবে তাঁদের যদি ধাক্কা মেরে বের করে দেওয়া হয় বা আগের দিন রাতে নির্বাচন কমিশন এজেন্টদের তালিকা ফাঁস করে পুলিশের মামলা বা হামলা জড়িয়ে দেয়, তাহলেও আমরা কেন্দ্রে থাকব। আশা করব, নির্বাচন কমিশন এবার আগের মতো আচরণ করবেন না। ৬ টায় নাখালপাড়া লোকাসের মোড়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। এ সময় তিনি বলেন, তিনি জনগণের ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। ঐক্যবদ্ধ শক্তি আমাদের বিজয় নিশ্চিত করবে ইনশাল্লাহ।

উন্নত ঢাকা গড়তে নব সুচনার উন্মেষ হচ্ছে: তাপস
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস রাজধানীর মানিকনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে গতকাল নির্বাচনী প্রচারণার শুরু করেন।

মানিকনগর বাসস্ট্যান্ডে পথসভা শেষ করে তাপস মুগদা, খিলগাঁও ও সবুজবাগ জনসংযোগে যোগ দিয়ে নৌকা মার্কায় ভোট চায়।

এ সময় তাপস বলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকায় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। সুশাসিত ঢাকার আওতায় সকল নাগরিকের মৌলিক সুবিধা দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে। দায়িত্ব গ্রহণের দিন থেকেই ঢাকাবাসীর জন্য কাজ করবো। সিটি কর্পোরেশনে কোনো ধরনের দুর্নীতি বরদাস্ত করা হবে না।

তাপস বলেন, উন্নত ঢাকা করতে মহাপরিকল্পনা করছি আমরা। ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা করে আমরা উন্নত ঢাকা গড়ে তুলবো। সেখানে প্রত্যেকটি রাস্তা-ঘাটের অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয় থাকবে। পয়ঃনিস্কাশনের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। সকল নাগরিকের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধ ভাবে উন্নত ঢাকা গড়তে নব সুচনার উন্মেষ হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। প্রথম ৯০ দিনের মধ্যেই নাগরিকদেরন মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা মধ্যে সকল সংস্থা সমন্বয় করে কাজ করবে। ঢাকার কোনো স্থানের কাজ হলে ৩ বছরের মধ্যে অন্য সংস্থাকে কাজ করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ঢাকাবাসী আগামী ৩০ তারিখ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নত ঢাকা গড়ার সুযোগ দিবে। তাদের সেবা করার সুযোগ দিবে।

মোকাবেলায় প্রস্তুত: ৩ মাসের মধ্যে টয়লেট সমস্যার সমাধান করবেন ইশরাক: প্রতিপক্ষের হামলা, পুলিশী হয়রানির প্রতি ইঙ্গিত করে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, এরকম সকল কিছু মোকাবেলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। হামলা-বাঁধা-গ্রেফতারে বিষয়ে তিনি বলেন, এই ধরণের ঘটনা আমরা অতীতেও দেখেছি। ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনের সময়ও আমরা দেখেছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে সন্ত্রাসীরা। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও এর থেকে ন্যাক্কারজনক ঘটনা, আমাদের মোস্ট সিনিয়র নেতাদেরকেও রক্তাক্ত করা হয়েছিল, গুলি করা হয়েছিল। আমরা এসকল কিছু মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি। গতকাল সকালে রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়াররত শেষে তিনি এসব কথা বলেন।

এরপর গোপীবাগে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের সামনে থেকে চতুর্থদিনের প্রচারণা শুরু করেন ইশরাক। এসময় বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক তার প্রচারণায় অংশগ্রহণ করে। ৩ মাসের মধ্যে দক্ষিণের পাবলিক টয়লেটের সমস্যা সমাধাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে, তিন মাসের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রত্যেক ওয়ার্ডে জনবসতি অনুপাতে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করব। সেখানে নারীদের জন্য এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেসব এলাকায় গণসংযোগ করছি সেখানকার বাসিন্দা, আমাদের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ আমাদেরকে সমর্থন করছে।

তিনি বলেন, আমরা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি, যত বাঁধাই আসুক কোন বাধা আমরা মানবো না। আমাদের কাজ আমরা চালিয়ে যাব। ভোটারদের উদ্দেশ্যে ইশরাক বলেন, ৩০ তারিখ আপনার ভোট দিতে আসবেন। আপনারা যাতে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন সেজন্য আমরা মাঠে থাকবো। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়েছে নাকি জানতে চাইলে বলেন, ফিল্ড একটা তৈরি হয়েছে। ভোট ডাকাতির, ভোট কারচুপির এবং প্রতিপক্ষকে দমন করার একটা ফিল্ড তৈরি হচ্ছে। এটাকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে নাকি জানি না।

তিনি টিকাটুলির অভয়দাস লেনের সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজ থেকে ফোল্ডার স্টেট রোড হয়ে জয়কালী মন্দির রোড, কাপ্তান বাজার, নবাবপুর রোড হয়ে বংশাল যুবদলের অফিসে এসে দুপুরের বিরতি দেন। এসময় হাজার হাজার নেতা-কর্মী ধানের শীষে ভোট চেয়ে শ্লোগান দেন। তার সাথে বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, কাজী আবুল বাশারসহ বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয়, মহানগর, থানা, ওয়ার্ড নেতারা অংশগ্রহণ করেন। পুরাতন ঢাকার ওলি, গলি দিয়ে প্রচারণার বহর যখন এগিয়ে যায় রাস্তার দু’পাশ থেকে নারী, পুরুষ বাসা, দোকান থেকে হাত নেড়ে বিএনপি প্রার্থীকে শুভেচ্ছা জানান।

মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনী প্রচারণার চতুর্থ দিনেও ব্যাপক ও জোরেশোরে প্রচারণা চালিয়েছেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান। গতকাল সোমবার চকবাজার, চুড়িহাট্টা, সোয়ারীঘাট, উর্দূরোড, সাত রওজা লালবাগ, পোস্তা, ঢাকেশ্বরী রোড, আমলীগোলা এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন মেয়রপ্রার্থী ।

এ সময় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পথ সভাগুলোতে আলহাজ্ব আব্দুর রহমান বলেন, ঢাকা সিটির প্রতিটি মানুষকে সাথে নিয়ে একটি নিরাপদ ও বাসযোগ্য আদর্শ নগরী গড়ে তোলা হবে। সকলের অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার ঘোষণা দেন মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান-এর। এদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির এক সভা দক্ষিণ কার্যালয়ে দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়রপ্রার্থী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, মাওলানা আহমদ আব্দুল কাইয়ূম, আলহাজ্ব আলতাফ হোসেন ও আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

তাবিথের গাড়িতে হামলা চেষ্টা, আহত ১০ : ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের গাড়ীতে হামলার চেষ্টা চালানো হয়। এসময় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার রাত ৮ টার দিকে রাজধানীর শাহাজাদপুর সুবাস্তুনজর ভ্যালির উল্টোপাশে ঢাকা উত্তর সিটির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির মনোনীত কাউন্সিল প্রার্থী শরিফ উদ্দীন জুয়েলের নির্বাচনী প্রচারণার অফিস উদ্বোধন শেষে ফেরার পথে এ হামলা চালানো হয়।

শরিফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল আমার নির্বাচনী প্রচারণার অফিস উদ্বোধন করতে এসেছিলেন। অফিস উদ্বোধন শেষে আমরা (তাবিথ আওয়াল, ফুটবলার আমিনুল হক, যুবদল উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন) একই গাড়িতে ফিরছিলাম। তখন আমাদের গাড়িতে লাঠি সোটা নিয়ে হামলা করা করা হয়। এসময় আমার ১০-১২ জনকর্মী আহত। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিল প্রার্থী জাকির হোসেল বাবুলের অফিস পাশের ওখান থেকে তার কর্মীরা এ হামলা চালায়।

ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম জানান, ‘জুয়েল ভাই এর অফিস উদ্বোধন করে, গাড়ি বহর ঢাকা ফার্মার গলি সামনে আসতেই তাবিথ আউয়ালের গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এসময় সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রদলের মাঈনুল, সিরাজসহ প্রায় ১০ দশ আহত হন।গাড়ি বহরের বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মশিউর রহমানের গাড়িও ছিল। তিনি জুয়েলের নির্বাচন পরিচলানা কমিটির দায়িত্ব পালন করেছেন। তাবিথ, জুয়েলসহ বিএনপির নেতাদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি।



 

Show all comments
  • তফসির আলম ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৩ এএম says : 0
    ভোট কি আদৌ দিতে পারবো ?
    Total Reply(0) Reply
  • Sohag Khin ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৪ এএম says : 0
    সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ ধানের শীষের বিজয় হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Rasel Khan ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    দোয়া রইলো ইশরাক ভাইয়ের জন্য
    Total Reply(0) Reply
  • আবদু ছবুর ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    ইনশাআল্লাহ জয় হবে ইশরাক ভাই
    Total Reply(0) Reply
  • Md Salam ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    সকল বেধাবেদ ভুলে সবাই সুদু ধানের শীষ শে আপনাদের একটিকরে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন বিএনপি ধানের শীষ মোঃইসরাক ভাইকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ধন্যবাদ বন্ধুরা।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Jahidul Islam Rasel ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৫ এএম says : 0
    খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই, ধানের শীষে ভোট চাই
    Total Reply(0) Reply
  • এইচ এম সোহাগ ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    কি করে লাইনে দাঁড়াবে , লাইনে দাড়িয়ে থাকার কিছুক্ষণ পরে আসবে মিডিয়ার লোক জন। মিডিয়ার লোক জন ছলে যাবার পরে কিছু ক্ষন পর দেখবেন গুন্ডা বাহিনী এসে শিবির শিবির বলে হামলা বা বাধা দিয়ে লাইন চেড়ে ছলে যেতে বলবে। তাও যদি মানুষ বা সাধারণ ভোটার আবার লাইনে দাড়াবে এর পরে ককটেল ফাটিয়ে আতংক চড়ানো। তাও যদি মানুষ না মানে এর পরে পুলিশ কে নিয়ে আওয়ামী লীগের লোক জন, ভোটের দের পিটিয়ে সরিয়ে দিবে। এমন টা গেলো সংসদ নির্বাচনে দেখেছে সাধারণ মানুষ। এবং এর মাঝে আছে কেন্দ্রের ভিতরে ভোটার গেইট কৃত্তিম জটলা তৈয়ারি করে শুধু আওয়ামী লীগের কিছু ভোটার ঢুকতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Asraf Ahamed ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    ভোটতো আগেই হবে অভিনয়ের কি দরকার
    Total Reply(0) Reply
  • কৃষানীর স্বপ্ন ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৪৬ এএম says : 0
    রাখেন আপনার জমজমাট প্রচারণা, ভোট হলে তো ????
    Total Reply(0) Reply
  • রফিক ১৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:০৭ এএম says : 0
    ভোট দিতে পারবো কিনা সেটা নিয়েই সন্দেহ আছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ