বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মানবের বিপরীত শব্দ দানব। এর আভিধানিক অর্থ অসুর বা দৈত্য। ফার্সি ভাষায় দৈত্যকে বলা হয় দেও। কোরআন শরীফে সূরা ‘নমল’ এ ইফরীত শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। জ্বিনকে প্রচলিত ভাষায় দানব বলা হয়। ইফরীত বা দেও/দৈত্য জ্বিন শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত।
এ ইফরীত জ্বিনদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, সাবার রাণী বিলকিসের রাজধানী দ্রুত নিয়ে আসার সংকল্প প্রথম ব্যক্ত করেছিল ইফরীত। কিন্তু আসেফ ইবনে বার্ফিয়া নামক আরেক জ্বিন তদপেক্ষা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিলকিসের সিংহাসন হজরত সুলায়মান (আ.)-এর সামনে হাজির করে দিয়েছিল বলে খোদ কোরআনের বর্ণনা হতে জানা যায়। প্রসঙ্গক্রমে মুসলিম বাহিনীর একটি বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ দেখে দেওয়াঁ আমদান! দেওয়াঁ আমদান! দৈত্য বাহিনী এসে গেছে! দৈত্য বাহিনী এসে গেছে! বলে চিৎকার করে শত্রু পক্ষের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করা আমাদের এ রচনার লক্ষ্য।
ফার্সি ভাষায় একটি প্রবাদ আছে, ‘খানা-ই খালিরা দেওয়াঁ গিরান।’ অর্থাৎ খালি ঘর দেও-দৈত্যরা দখল করে। এ প্রবাদের সূত্রপাত হয় একটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী, সাহাবায়ে কেরামের একটি জামাত সামরিক অভিযানে পারস্যের একটি এলাকায় গমন করেন। তাদের গতিপথে একটি দরিয়া পড়েছিল।
তারা সাতরে নিরাপদে দরিয়া পার হয়ে ওপারের ভ‚খন্ডে অবতরণ করেন এবং শত্রু পক্ষের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। সে এলাকার মজুসী (অগ্নি উপাসক) অধিবাসীরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এই বলে পালাতে থাকে, ‘দেওয়াঁ আমদান! দেওয়াঁ আমদান!’ অর্থাৎ- দৈত্য বাহিনী এসে গেছে! দৈত্য বাহিনী এসে গেছে! মুসলিম বাহিনীর দখলে এসে যায় এলাকাটি সম্পূর্ণ বিনা যুদ্ধে।
উল্লেখ্য ফারসি ভাষায় ‘দেও’ শব্দের বহুবচন দেওয়াঁ, শক্তিশালী বলবান জ্বিন দৈত্য নামে পরিচিত। মানব সমাজে এরা মানুষের নানা ভাবে ক্ষতিসাধন করে থাকে, উপকারের পরিবর্তে অপকার বেশি করে থাকে এমনকি মানুষের প্রাণ নাশও করে। জ্বিন-দৈত্য কর্তৃক বহু মানুষের গলা টিপে ধরার বা হত্যা করার অনেক দৃষ্টান্তও রয়েছে। আমাদের সমাজে জ্বিন বা দেও-দৈত্য কর্তৃক নারী শিশুদেরকে হয়রান, উত্যক্ত করার বহু ঘটনা ঘটে থাকে, ভূতে পাওয়া, জ্বিনের আসর ইত্যাদি প্রচলিত।
জ্বিন চালান ভূত ও প্রেত তাড়ানোরও নানা ব্যবস্থা তদবির প্রচলিত। অপ্রকৃতিক বা মানসিক রোগী হিসেবে ডাক্তার, কবিরাজ, তাবিজ লেখক, পানি পড়াদাতা, হুজুরদের স্মরণাপন্ন হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। রোগীর নানা প্রকারের চিকিৎসার সাফল্য যেমন রয়েছে, ব্যর্থতাও রয়েছে অসংখ্য। জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এটি এক জটিল সমস্য হিসেবে বিরাজমান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।