পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মেয়র প্রার্থীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুটছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে। ঢাকা সিটিকে নতুন করে গড়ে তোলার নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। স¤প্রীতির রাজনীতি, পরিবর্তনের রাজনীতির প্রতিশ্রুতি ছাড়াও ঐতিহ্যের ঢাকা, সুন্দর ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা এবং সর্বোপরি উন্নত ঢাকা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ভোটাররাও প্রার্থীদের ‘স্বতঃস্ফ‚র্ত সাড়া’ দিচ্ছেন। স্থানীয় ভোট হলেও ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। কথাযুদ্ধে নেমেছেন বড় দুই দলের সিনিয়র নেতারাও।
পৌষের শেষ সাপ্তাহে হাড় কাঁপানো শীতে সূর্যের দেখা নেই। প্রচন্ড ঠান্ডায় হীম হওয়া আবহাওয়ায় জমে উঠেছে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা। ভোর হতেই মাঠে নামছেন মেয়র ও কমিশনার প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর নানা প্রতিশ্রুতির বয়ান দিয়ে ভোট চাইছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ইসলামী ধারা ও বাম ধারার দলগুলোর প্রার্থীরাও সীমিত পরিসরে প্রচারণায় নেমেছেন।
জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রচারণার অন্যরকম দৃশ্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীরা প্রচারণায় নামলেও ধানের শীষের প্রার্থীদের প্রচারণায় নামতে দেয়া হয়নি। ধানের শীষ প্রার্থীরা যেখানেই প্রচারণায় নেমেছেন কোথাও পুলিশী বাধা কোথাও ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার মুখে পড়েছেন। ওই নির্বাচনের এক বছর পর ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে ধানের শীষ ও নৌকার মেয়র প্রার্থীরা নির্বিঘেœ প্রচারণা চালাচ্ছেন। যদিও গতকাল ঢাকা উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে নুর তাপস প্রচারণায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলেছেন।
ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন স্থানীয় ভোট হলেও জাতীয় রাজনীতিতেও ঝাকুনি দিয়েছে। সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চ্যালেঞ্জ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। প্রথমে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের উক্তি ‘এ কেমন লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনী প্রচারণায় চালাচ্ছে আমি প্রচারণায় নামতে পারছি না’। জবাবে ওবায়দুল কাদেরের প্রতি মির্জা ফখরুলের আহবান, ‘মন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় আসুন, আমিও প্রচারণায় রয়েছি, দেখবো ভোটাররা কার দিকে যায়’। অতপর বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য ‘মন্ত্রী-এমপি লাগবে না ফখরুল সাহেব আমাদের মেয়র প্রার্থীরাই যথেষ্ট’। বড় দুই দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার এই কথা যুদ্ধ রাজনীতিতে কিছুটা হলেও উত্তাপ ছাড়িয়েছে।
ঢাকা দুই সিটির আওয়ামী লীগ ও বিএনপির চার মেয়র প্রার্র্থীই সম্ভ্রান্ত ঘরের সন্তান। অভিজাত পরিবেশে তাদের চলাফেলা করা চার প্রার্থীই উচ্চ শিক্ষিত এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী। প্রতিদ্ব›িদ্ব মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে একের অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি এবং এক প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীর বাসায় গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দেশের রাজনীতিতে এমন দৃশ্য বহুদিন অনুপস্থিত। তবে গতকাল ঢাকা উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারণা থেকে ৫ জন ও ঢাকা দক্ষিণের ইসরাক হোসেনের প্রচারণার সময় ৪ জন কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রচারণায় হামলা চালানোর অভিযোগ তাপসের:
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মোনাজাতের কারণে নির্ধারিত সময় থেকে একটু দেরি করে তৃতীয় দিনের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
গতকাল তাপস শান্তিনগর, মালিবাগ, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, কাকরাইল ও মতিঝিল এলাকায় প্রচারণা চালিয়েছেন। প্রচারণার সময় শান্তিনগর বাজারের সামনে এক পথসভায় শেখ ফজলে নূর তাপস নেতা-কর্মীদের তিনি বলেন, সুশৃঙ্খলভাবে প্রচার চালাবেন। প্রচারের জন্য রাস্তায় যেন যানজট তৈরি না হয়। তিনি বলেন, সুন্দর সম্প্রীতির রাজনীতি ঢাকাবাসীকে উপহার দিতে চাই। আমি পরিচ্ছন্ন রাজনীতি চাই। সবাইকে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
তাপস বলেন, নির্বাচিত হলে শহরে মাদকসহ অন্যান্য অপরাধমূলক সামাজিক ব্যাধিগুলো দূর করা হবে। এলাকাভিত্তিক সমস্যা সমাধান করা হবে। রাস্তা-ঘাট পুনর্বিন্যাস করে জনগণের ভোগান্তি কমানো হবে।
এতিকে তাপস অভিযোগ করে বলেন, গত শনিবার আরকে মিশন রোডে নির্বাচনি প্রচারণা চালানোর সময় বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বাসায় দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। ভোট প্রার্থনা করেছি। কিন্তু, সেখান থেকে বের হওয়ার পর আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীসহ গণসংযোগে যারা ছিল, তাদের ওপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ হয়েছে। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তাপস জানান, আমি প্রাথমিকভাবে বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানাবো। এরপর যদি দ্বিতীয় কোনও ঘটনা ঘটে, তাহলে লিখিতভাবে জানানো হবে। আমরা চাই সম্প্রীতির রাজনীতি।
এ সময় শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সাবেক সদস্য মাহবুবুর রহমান, সাবেক প্রচার সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
নতুন ওয়ার্ডে উন্নয়নের ব্যাপক প্রতিশ্রুতি আতিকের:
ঢাকা উত্তর সিটির সাথে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল দুপুরে উত্তরা সংলগ্ন নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোতে গণসংযোকালে তিনি এসব প্রতিশ্রুতি দেন। সকালে উত্তরার রাজলক্ষী এলাকায় গণসংযোগ শুরু করার পর সেখান থেকেই বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন আতিকুল ইসলাম। এরপর উত্তরা সংলগ্ন কসাইবাড়ি রেলগেট, কাঁচপুরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, ময়নারটেক, ফায়দাবাদ এলাকায় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগ করেন তিনি। এরপর আব্দুল্লাহপুর হয়ে তুরাগ, কামারপাড়া, নয়ানগর মাদরাসা, রানাভোলা হয়ে বাওনিয়া এলাকায় গণসংযোগ করবেন আতিকুল ইসলাম।
গণসংযোগকালে নতুন যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন নতুন ওয়ার্ডগুলো উন্নয়নের মাধ্যমে ভালোভাবে সাজানোর জন্য। আমরা বলতে চাই, নৌকা উন্নয়ের মার্কা, এ নৌকায় ভোট দেয়ার মাধ্যমে আমাকে যদি নির্বাচিত করেন তাহলে প্রথমেই এসব এলাকায় যেন জলাবদ্ধতা না হয়, রাস্তা উন্নয়ন হয় আর এলইডি বাতিতে যেন আলোকিত হয় সেই কাজ করব। এছাড়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর উন্নয়নের জন্য অনেক বড় বড় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
গণসংযোগকালে সাধারণ পথচারী থেকে শুরু করে দোকানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট চান মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, উন্নয়ন চলছে, চলবে। এ শহরের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এবার গন্তব্যে নেয়ার পালা। সবাই মিলে সবার ঢাকা, সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা গড়তে চাই। তাই ৩০ জানুয়ারি উন্নয়নের মার্কা নৌকায় ভোট দিন
বাধা উপেক্ষা করেও মাঠে থাকার ঘোষণা তাবিথের: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রচারণা মিছিলে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। এসময় একজন আহত হয়। হামলাকরীরা প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাবিথ আউয়াল। তিনি বলেন, বেলা ১১টায় মিরপুর এক নম্বর মাজার রোড এলাকায় প্রচারণাকালে প্রতিপক্ষের লোকজন জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাদের প্রচারণায় হামলা করেছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। আমরা প্রচার কাজ চালাতে পারছি না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাতে চাই। হামলায় আল আমিন নামের এক কর্মী আহত হয়েছেন। আমার কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে তা ইসিকে জানাবো। প্রচারণাকালে নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকার দিকে তাকিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী।
এর আগে গতকাল বেলা পৌনে ১১টায় মিরপুর শাহ আলীর মাজার জিয়ারত করে ওই এলাকা থেকে তৃতীয় দিনের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ। এরপরে তিনি উত্তর বিশিল, গুদারাঘাট, চিড়িয়াখানা রোড, ১ নং মিরপুর ঈদগাঁ মাঠ , ডি বøক মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, ১২ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ বিশিল, হাজী বশির উদ্দিন স্কুল রোড, হাবুলের পুকুর পাড়, ১৩ নং ওয়ার্ডে উত্তর পীরের বাগ, ৬০ ফিট, মধ্য পীরের বাগ, মোল্লা পাড়া, মনিপুরি স্কুল রোড, জোনাকি রোড, বড়বাগ হয়ে মিরপুর থানা, ১০ নং ওয়ার্ডে মিরপুর মাজার থেকে ২য় কলোনী, ৩য় কলোনী হয়ে দারুস সালাম ফুরফুরা শরীফে জনসংযোগ করবেন।
মাজাররোডে গণসংযোগকালে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা ইতোমধ্যে নাগরিক সমস্যার ১২টা জায়গা চিহ্নিত করেছি। দায়িত্ব পেলে এই ১২টা জায়গায় আমরা সমন্বয় ও গুরুত্বের ভিত্তিতে একযোগে কাজ শুরু করবো। ডেঙ্গু, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও যানজটের মতো বাসা ভাড়াও ঢাকার বাসিন্দাদের জন্য একটি বড় সমস্যা। এই লড়াইয়ে জয়ী হতে পারলে ঢাকার নাগরিক সমস্যার সমাধানে কাজ করা সহজ হবে। তিনি বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিটি স্তর ‘দুর্নীতিতে ভরে গেছে’। মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি সবার আগে এই দুর্নীতি দমনে কাজ করতে চান বলে জানান। তাবিথ বলেন, পুলিশের মামলা হবে, হামলা হবে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের পক্ষ থেকে। আমরা শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করেও নির্বাচনী মাঠে থাকবো ইনশাআল্লাহ।
এ সময়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু, ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, স্বেচ্ছাসেবক দল উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক রেজোওয়ান ইসলাম রিয়াজসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরে শাহ আলী মাজার মসজিদে যোহরের নামাজ পড়ে মাজার জিয়ারত করেন তাবিথ আউয়াল। সেখান থেকে ৮নং ওয়ার্ড বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টি নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় রাস্তার দু’ধারে সাধারণ জনগণ বিএনপি মেয়র প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে দোয়া করেন। মিরপুর এলাকাবাসী নানা সমস্যার কথা জানান তাবিথ আউয়াল। তিনি হাসিমুখে সবার কথা শুনেন। নির্বাচিত হলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। গুদারাঘাট এলাকায় তাবিথ আউয়াল ফের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভুলুন্ঠিত করেছে। মানুষের সে অধিকার ফিরিয়ে দিতেই নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মেয়র প্রার্থী বলেন, মিরপুর এলাকার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পুরো শহরে বায়ু দূষণে ঢেকে গেছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার কারণে এডিস মশার জন্ম হচ্ছে। ফলে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, অনেক প্রাণহানীও হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আগামী দিনে জনকল্যাণ ও জনগণের মেয়র হিসেবে কাজ করতে চেষ্টা করবো। আমি নগরবাসীর সব সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখবো। তিনি বলেন, আমি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কাজ করবো। তিনি আরও বলেন, মানুষ যাতে কোনো ধরণের ভয়-ভীতি ছাড়া চলতে পারে, বসবাস করতে পারে সে পথ আমরা তৈরি করবো, আশা করি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। জনসংযোগে কেমন সাড়া পাচ্ছেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, আপনারাই দেখতে পাচ্ছেন আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ উৎফুল, তারা ৩০ জানুয়ারি ভোট দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে আমরা প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখী হচ্ছি। এর মধ্যেও সাধারণ মানুষ আমাদের পাশে রয়েছেন। সবাই ভোট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, উৎসাহ দিচ্ছেন। কেন বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নানাভাবে বাধার সম্মুক্ষীণ হচ্ছি, আজও কয়েকটি এলাকায় নানাভাবে আমাদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এ সময় তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি দলের লোকজন আমাদের প্রচারণা বাঁধা দিয়েছেন। রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে, হুমকি দিচ্ছে, এমনকি দূর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এরপরও আমরা আমাদের পক্ষ থেকে ধৈর্য্য ধরে শৃঙ্খলা বজায় রাখছি।
গণসংযোগ চলাকালে মিরপুর সনি সিনেমা হল এলাকা থেকে তাবিথ আউয়ালের ৫জন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হামলা-গুম আ.লীগের চরিত্র: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, গুম, হামলা-মামলা-অপহরণ আওয়ামী লীগের অতীত চরিত্র। সেখান থেকে তারা কখনো বের হতে পারেনি। নির্বাচন এলে তারা প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুপুরে কারওয়ান বাজারে তাবিথ আউয়ালের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। হামলার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এ সব করে জনস্রোত থামানো যাবে না। জনগণ মাঠে নেমে পড়েছে। জনস্রোত দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যত বাধাই আসুক আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ, নিরাপত্তা দাবি : মিরপুর দারুসসালাম থানা এলাকায় প্রচার চালানোর সময় নেতা-কর্মীদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ ও কয়েকজনকে গুরুতর আহত করার ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন তাবিথ আউয়াল। গতকাল সন্ধ্যায় এ চিঠি পাঠান তিনি। চিঠিতে তিনি গণসংযোগে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের হামলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানিয়েছেন।
তাবিথের সোমবারের কর্মসূচি: সকাল ১০ টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করবেন। বেলা ১১টায় ফার্মগেট আলরাজি হাসপাতালের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু হবে।
দক্ষিণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টির দাবি ইশরাকের: দলীয় কাউন্সিলরদের প্রচারণায় বাঁধা দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় আমার গোপীবাগের বাসার সামনে ‘সরকার দলীয়’ লোকজন গিয়ে আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর চড়াও হয়েছে, হামলা করেছে। এটা কী সুষ্ঠু নির্বাচনের আচরণ? যদিও আমাকে এখনো প্রচারনায় বাঁধা দেয়া হয়নি। তবে আমার দলের কাউন্সিলর ও সমর্থকদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণায় ওরা বাঁধা দিচ্ছে, প্রচারণা চালাতে দিচ্ছে না। এটা থেকে প্রমাণ হয় যে, ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। নির্বাচনে অবশ্যই সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল রোববার পুরনো ঢাকার দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গন থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইশরাক বলেন, হামলার যে অভিযোগ করা হচ্ছে- এটা সঠিক নয়। আমাদের কাছে এভিডেন্স আছে, ছবি আছে। আমাদের কোনো কর্মী-সমর্থক হামলা করেনি। বরং ওনাদের লোকজন গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। আমার বাসার কাছে থাকা কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাংচুর হয়েছে ওদের হামলায়।
বেলা ১২টার পর জজকোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ইশরাক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, সদস্য খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মীর সরফত আলী সপু, কাজী আবুল বাশারসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে আদালন সড়ক, ইংলিশ রোড, বংশাল, তাঁতীবাজার হয়ে নয়া বাজারের মোড়ে এসে এই প্রচারণা শেষ হয়।
ইশরাক যখন মিছিলের অগ্রভাগে সিনিয়র নেতাদের নিয়ে লিফলেট দিচ্ছিলেন তখন সড়কের দুই ধারে নারী-পুরুষরা দাঁড়িয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে দেখাতে যায়। অনেক মূরুব্বী ইশরাকে মাথায় হাত বুলিয়েও দেন। ইশরাকের বাবা সাদেক হোসেন খোকা বেড়ে উঠেছেন এই পুরনো ঢাকায়। তিনি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন টানা ১০ বছর। সেজন্য খোকার ছেলে হিসেবে ইশরাকের প্রতি পুরনো ঢাকার মানুষজনের অন্যরকম টান দেখা গেছে। মূরুব্বীদের অনেকে ‘খোকার বেটা’ বলে সম্বোধন করতেও শোনা যায়।
ইশরাক বলেন, আমার বাবা এই পুরনো ঢাকার সন্তান। এখানে মূরুব্বী আছেন তারা বাবাকে চিনেন। আমি আজকে আপনাদের দোয়া চাইতে এসেছি। আপনাদের দোয়াই আমার একমাত্র ভরসা। আমি মেয়র পদে নির্বাচন করছি ধানের শীষে।এই প্রতীক গণতন্ত্রের প্রতীক, এই প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রতীক, এই প্রতীক তারেক রহমানের প্রতীক। পুরনোর ঢাকার ঐতিহ্যে আমি ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরীেেত ঢেলে সাজাতে চাই, যানজট, দুষণমুক্ত আধুনিক ঢাকা বিনির্মানে কাজ করতে চাই। বিগত ১৩ বছরে মেয়রগণ ঢাকাকে বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত করেছে বলেও অভিযোগ করেন ইশরাক।
দুপুরে ওয়ারীর বলদা গার্ডেনের দেওয়ালে ইশরাকের পোস্টার লাগানোর সময়ে ৪জনকে পুলিশ আটক করে বংশাল থানা নিয়ে যায়, বিকালের দিকে তাদের ছেড়ে দেয় বলে জানিয়েছেন ইশরাকের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির এক নেতা।
এদিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার লহ্মীবাজার কবি নজরুল মোড়ে বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সংক্ষিপ্ত পথসভা করেন ইশরাক। ওয়ারি থানায় সেচ্ছাসেবক দলের ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। গ্রেফতারের ওই ঘটনা উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, আমাদেরকে নানা ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মিছিল থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করার ঘটনা আমারা শুনতে পেরেছি। আমি বলতে চাই, কোনো ধরণের বাধা আমরা মানবো না। কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কোনো ভাবেই দমে যাবো না। আপনাদের কতো শক্তি আছে আপনার দেখান। আপনাদের কতো পুলিশ আছে আপনারা দেখান, আমাদের থামাতে পারবেন না। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের আসবেই। আশা করি আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন, গণতন্ত্র মুক্ত করবেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে। এসময় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ স্থানীয় শত-শত নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে নয়াবাজারে নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন ও দুপুরের বিরতি দেওয়া হয়। পরে আবার গণসংযোগ শুরু করে কলতাবাজার-মিউনিসিপাল মার্কেট, পানির ট্যাংকি, বাহাদুর শাহ পার্ক, বাংলাবাজার, শ্যামবাজার, সুত্রাপুর, লহ্মীবাজার এলাকায় গণসংযোগ করেন ইশরাক। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।