বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহান রাব্বুল আলামীন আল কোরআনের সূরা আম্বিয়ার মধ্যে হযরত লুত আ.-এর পরিচয় এভাবে তুলে ধরেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর লুতকে আমি প্রজ্ঞা ও জ্ঞান দান করেছিলাম। আমি তাকে এমন এক জনপদ থেকে উদ্ধার করেছিলাম, যার অধিবাসীরা অশ্লীল কাজে লিপ্ত ছিল। তারা ছিল এক মন্দ ও পাপাচারী কওম। আর আমি তাকে আমার রহমতের মধ্যে শামিল করে নিয়েছিলাম। সে ছিল সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভূক্ত।’ (সূরা আম্বিয়া : আয়াত ৭৪-৭৫)।
আল কোরআনের সূরা শোয়ারাতেও কওমে লুতের ঘটনা বিবৃত হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘ অনুরূপ লুতের স¤প্রদায় পয়গম্বরগণকে মিথ্যাবাদী বলেছে। যখন তাদের ভাই লুত তাদেরকে বললেন, তোমরা কি ভয় করো না? আমি তোমাদের বিশ্বস্ত পয়গম্বর। অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না। আমার প্রতিদান তো বিশ্ব-পালনকর্তা দেবেন। সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরুষদের সাথে কুকর্ম করো? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য যে স্ত্রীগনকে সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন করো? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী স¤প্রদায়।
তারা বলল, হে লুত, তুমি যদি বিরত না হও, তবে অবশ্যই তোমাকে বহিস্কৃত করা হবে। লুত বললেন, আমি তোমাদের এই কাজকে ঘৃণা করি। হে আমার পালনকর্তা, আমাকে এবং আমার পরিবারবর্গকে তারা যা করে, তা থেকে রক্ষা করো। অতঃপর আমি তাকে ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম। এক বৃদ্ধা ব্যতীত, সে ছিল ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত। এরপর অন্যদেরকে নিপাত করলাম। তাদের ওপর এক বিশেষ বৃষ্টি বর্ষণ করলাম। ভীতি-প্রদর্শিতদের জন্য এই বৃষ্টি ছিল কত নিকৃষ্ট। নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।’ (সূরা শোয়ারাহ : আয়াত ১৬০-১৭৪)।
আল কোরআনের ২৭ নং সূরা আন নামলে কওমে লুতের ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো লুতের কথা, তিনি তার কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ-এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর স¤প্রদায়। উত্তরে তার কওম শুধু এ কথাটিই বলল, লুত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাকে ও তার পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তার স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্য ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। আর তাদের ওপর বর্ষণ করেছিলাম মুষলধারে বৃষ্টি। সেই সতর্ককৃতদের ওপর কতই না মারাত্মক ছিল সে বৃষ্টি।’ (সূরা আন নামল : আয়াত ৫৪-৫৮)।
হযরত লুত আ. ছিলেন হযরত ইব্রাহীম আ.-এর ভাতিজা অথবা ভাগিনা। হযরত ইব্রাহীম আ. অগ্নিকুন্ড হতে সহীহ সালেম রূপে বের হয়ে আসলে তিনি তার প্রতি ঈমান আনয়ন করেন এবং সঙ্গী হয়ে যান। হযরত ইব্রাহীম আ. হযরত লুত আ. ও বিবি সারাকে সাথে নিয়ে শাম দেশের দিকে হিজরত করে চলে যান। আল্লাহপাক হযরত লুত আ.-কে নবুয়ত দান করেন।
তারপর তিনি সিরিয়া হতে ‘মুতাফিকাহ’ নামক স্থানে
গমন করেন এবং সেখানকার লোকদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানান। এ বিষয়টি আল কোরআনের ২৯ নং সূরা আনকাবুতে এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হযরত লুত আ. হযরত ইব্রাহীম আ.-এর প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। ইব্রাহীম বলল, আমি আমার প্রতিপালকের নির্দেশ পালনার্থে দেশ ত্যাগ করছি, তিনি পরাক্রান্ত জ্ঞানবান।’ (সূরা আনকাবুত : আয়াত ২৬)।
এই একই সূরায় মুতাফিকাহ বা কওমে লুতের ধ্বংসের কাহিনী আল্লাহপাক এভাবে বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর স্মরণ করো, লুত যখন তার স¤প্রদায়কে বলল, তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে পৃথিবীর কেউ করেনি। তোমরা কি পুংমৈথুনে লিপ্ত আছ, রাহাজানি করছ এবং নিজেদের মজলিসে গর্হিত কর্ম করছ? জওয়াবে তার স¤প্রদায় কেবল একথা বলল, আমাদের ওপর আল্লাহর আযাব আন যদি তুমি সত্যবাদী হও।
সে বলল, হে আমার পালনকর্তা, দুস্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর। যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা এই জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয়ই-এর অধিবাসীরা জালেম। সে বলল, এই জনপদে তো লুতও রয়েছে। তারা বলল, সেখানে কে আছে, তা আমরা ভালো জানি। আমরা অবশ্যই তাকে ও তার পরিবারবর্গকে রক্ষা করব তার স্ত্রী ব্যতীত; সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। যখন আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ লুতের কাছে আগমন করল, তখন তাদের কারণে সে বিষন্ন হয়ে পড়ল এবং তার মন সঙ্কীর্ণ হয়ে গেল।
তারা বলল, ভয় করবেন না এবং দুঃখ করবেন না। আমরা আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করবই আপনার স্ত্রী ব্যতীত, সে ধ্বংস প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত থাকবে। আমরা এই জনপদের অধিবাসীদের ওপর আকাশ থেকে আযাব নাজিল করব তাদের পাপাচারের কারণে। আমি বুদ্ধিমান লোকদের জন্য এতে একটি স্পষ্ট নিদর্শন রেখে দিয়েছি। (সূরা আনকাবুত : আয়াত ২৮-৩৫)।
তারপর কোরআনুল কারীমের ৩৭ নং সূরা আস সাফফাতে এ কওমে লুতের ধ্বংস কাহিনীর সমাপ্তি এভাবে টানা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই লুত ছিলেন রসূলগণের একজন। যখন আমি তাকে ও তার পরিবারের সবাইকে উদ্ধার করেছিলাম; কিন্তু এক বৃদ্ধাকে ছাড়া; সে অন্যান্যদের সঙ্গে থেকে গিয়েছিল। অতঃপর অবশিষ্টদেরকে আমি সমূলে উৎপাটিত করেছিলাম। তোমরা তোমাদের ধ্বংস স্তুপের উপর দিয়ে গমন করো ভোর বেলায় এবং সন্ধ্যায়, তার পরেও কি তোমরা বোঝ না?’ (সূরা আস সাফফাত : আয়াত ১৩৩-১৩৮)।
বর্তমানে যে এলাকাটি ট্রান্স জর্ডান বলা হয়, সেখানেই ছিল কওমে লুতের বসবাস। আরবের হেজাজ থেকে সিরিয়া এবং ইরাক থেকে মিশর যাবার পথে এ ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকাটি পড়ে। এটি মৃত সাগর তথা লুত সাগরের পূর্ব ও দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।