বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঈদ কেন্দ্রিক মসলার দাম বাড়ে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু ঈদ ছাড়াই দফায় দফায় বাড়ছে এলাচের দাম। মাসের ব্যবধানে দ্বিগুণ এবং বছরের ব্যবধানে ছয়গুণ হয়েছে এই মসলার দাম। মাস বা বছর নয় সপ্তাহের ব্যবধান ধরলেও এলাচের দাম বেড়েছে হাজার টাকার ওপরে।
বর্তমানে দাম বেড়ে এখন রাজধানীর বাজারে এই মসলা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। অবস্থা এমন হয়েছে যে, এখন অনেক ব্যবসায়ী ১০ থেকে ২০ টাকায় এলাচ বিক্রি করতে চাচ্ছেন না। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন নিম্ন আয়ের লোকজন। খুচরা দোকানে ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ টাকার এলাচ কিনলে পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ২০টি। এতে একটি এলাচের দাম পড়ছে ২ টাকা করে।
এলাচের এমন দাম বাড়ার কারণ হিসেবে খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে তারা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে কমেছে সরবরাহ। এ কারণে এলাচের দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে এলাচের কেজি ছিল ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। তবে গত বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি এ পণ্যটির দাম বেড়ে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় ওঠে। এরপর রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে মার্চে এই মসলাটির দাম ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায় পৌঁছে যায়।
অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি গোশত রান্নার অপরিহার্য এলাচের দাম বাড়ার প্রবণতা। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে হু হু করে বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম। ফলে ২০১৯ সালের আগস্টে এলাচের কেজি ৩ হাজার টাকায় পৌঁছে যায়। কোরবানির ঈদের পরও বাড়তে থাকে এলাচের দাম। গত বছরের ডিসেম্বরে এ পণ্যটির দাম বেড়ে ৪ হাজার টাকায় পৌঁছে। ২০১৯ সাল জুড়ে দফায় দফায় দাম বাড়ার প্রবণতা চলতি বছরের শুরুতেও অব্যাহত। বছরের প্রথম ১১ দিনই কেজিতে এলাচের দাম বেড়েছে ২ হাজার হাজার টাকা।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এক বছর আগে এলাচের কেজি ছিল ১৫৫০ থেকে ২০০০ টাকা। দফায় দফায় দাম বেড়ে গতকাল পণ্যটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪০০০ থেকে ৪৫০০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ৩০০০ থেকে ৩৬০০ টাকা কেজি।
রামপুরার বাসিন্দা মো. আশরাফুল বলেন, গত শুক্রবার বাজারে গরম মসলা কিনতে গিয়ে দোকানির কাছে ২০ টাকার এলাচ চাই। দোকানি বলেন, ভাই ২০ টাকার এলাচ দেয়া সম্ভব নয়। এখন এলাচের অনেক দাম। কমপক্ষে ৩০ টাকার নিতে হবে। এরপর ৩০ টাকার এলাচ নিলে দোকানি মাত্র ১৬টি দেন। দোকানিকে বললাম, ভাই এ কয়েকটা দিলেন। উত্তরে দোকানি বলেন, ভাই মাপে নিলে আরও কম পাবেন। এ পরিস্থিতিতে ৩০ টাকার এলাচ হাতে নিয়ে মনে মনে শুধু হেসেছি।
তিনি বলেন, বাজারে একের পর এক জিনিসের দাম বাড়ছে। কিন্তু দাম বাড়ার প্রবণতা ঠেকানোর কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ছোট একটা এলাচের দাম ২ টাকা পড়ছে। বড় এলাচ হলে তো দাম আরও বেশি পড়বে। বিষয়টি একটু চিন্তা করে দেখেন। এটা কীভাবে স্বাভাবিক হয়। এভাবে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি দেখা উচিত।
মালিবাগ হাজীপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, আগে ১০ টাকার এলাচ কিনলে ১৫ থেকে ২০টি পাওয়া যেত। এখন ১০ টাকা তো দূরের কথা ২০ টাকা দিয়েও এলাচ কেনা যায় না। অনুরোধ করলে ব্যবসায়ীরা ২০ টাকায় ৮ থেকে ১০টি এলাচ দেন। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে গোশত রান্না করলে নামমাত্র এলাচ দেই। এতো দাম হলে এলাচ কিনে খাবো কীভাবে?
রামপুরার ব্যবসায়ী সামছু বলেন, পাইকারিতে আমরাই এক কেজি এলাচ কিনছি ৫ হাজার টাকায়। এ দামে কিনে কতই বিক্রি করব আপনিই বলেন? আগে বেশিরভাগ ক্রেতাই ১৫ থেকে ২০ টাকায় এলাচ কিনতেন। এখন এলাচের যে দাম ২০ টাকার এলাচ ওজনে বিক্রি করলে ৫ থেকে ৬টা হবে। তাহলে ২০ টাকার এলাচ বিক্রি করা কি সম্ভব?
এলাচের এই দামের বিষয়ে পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এলাচের দাম বেড়ে গেছে। ভারতেও এলাচের দাম বাড়তি। সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণেই এলাচের দাম বেড়েছে। ৬ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হওয়া স্বাভাবিক কি না? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, পাইকারিতে আমরা এলাচের কেজি সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। তাহলে খুচরাই ৬ হাজার টাকা কেজি হওয়া তো আমার মতে স্বাভাবিক নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।