বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
পৌষের অকাল বর্ষণের সাথে দু দফার মাঝারী প্রাকৃতিক দুর্যোগে শস্যের গুনগত মান ভাল না হওয়ায় দেশে দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের দর পতনে কৃষককুল দিশেহারা। বরিশালের বিভিন্ন হাটে ধানের গড় দাম এখন ৬শ টাকারও নিচে। অথচ এবার আমন রোপনের শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ এবং কর্তনের আগে ‘বুলবুল’এর আঘাতে দক্ষিণাঞ্চলের উৎপাদন ব্যয় অন্তত ২০ ভাগ বেড়ে গেলেও ধানের দর গত বছরের চেয়ে কম। সর্বশেষ গত শুক্রবার দক্ষিণাঞ্চলের ধানের পাইকারী হাটগুলোতে যে মূল্য পরিস্থিতি লক্ষ করা গেছে, তাতে কৃষকের মুখ আরো মলিন হয়েছে। দুশ্চিন্তার ছাপ সব কৃষকের চোখে মুখে।
অগ্রহায়নের শুরতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল প্রবল বৃষ্টির সাথে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়া নিয়ে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ জেলায় আঘাত হানে। ফলে এসব জেলার মাঠে থাকা কয়েক লাখ হেক্টর উঠতি আমন ধান মাটিতে ফেলে দেয়ায় তা প্রবল বৃষ্টি আর জোয়রের পানিতে নিমজ্জিত হয়। বুলবুল’এর বয়ে আনা মেঘমালায় বরিশালে দেশের সর্বোচ্চ প্রায় ২৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় মাত্র ৫ ঘন্টায়। ঐ বর্ষনে আমন সহ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির আর জলোচ্ছাসের পানিতে নিমজ্জিত হয়। পানি সওে যেতে সপ্তাহখানেকে সময় লাগলেও উঠতি আমনের বেশেীরভাগ ধানেই চিটা হয়ে যায়। এমনকি থোর পর্যায়ের ধানের গুনগত মানও বিনষ্ট হয়।
সদ্য সমাপ্ত খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় আবাদকৃত সোয়া ৭ লাখ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আমন থেকে ১৬ লাখ টনেরও বেশী চাল পাবার লক্ষ থাকলেও তা অর্জন নিয়ে যথেষ্ঠ সংশয় রয়েছে কৃষিবীদদের মধ্যে। বুলবুল-এর আঘাতে মাটিতে শুয়ে পড়া ধানের প্রায় পুরোটাই নিমজ্জিত হয়েছে কৃষি আর বাড়তি জোয়ারের পানিতে। ফলে অনেক এলাকার ২৫Ñ৩০ ভাগ ফসল কাটাই সম্ভব হয়নি। উপরন্তু যে ফসল ঘরে উঠেছে তাতেও চিটার পরিমান বেশী। বুলবুল-এ ভর করে অগ্রহায়নের ক্ষতিকর বর্ষনের পরে গত কয়েকদিনের অকাল বর্ষনেও ধানের আরো ক্ষতি হয়েছে। অনেক কৃষক ধান কাটলেও পৌষের বৃষ্টির কারনে তা শুকানোও যাচ্ছেনা।
আর ধান বিক্রী করতে গিয়েও দাম মিলছে না। এবার দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিমন আমন-এর উৎপাদন ব্যায় হয়েছে সাড়ে ৫শ টাকারও বেশী। অথচ ধান হাটে পৌছানোর পরিবহন ব্যায়ের পরে দাম মিলছে সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ টাকারও কম। এ অবস্থায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক চরম দুরবস্থায়। খাদ্য অধিদপ্তর দক্ষিণাঞ্চলে যেসব শর্তে ধান কিনছে, তাতে কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন না। তাদের নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে ফরিয়াদের ওপরই। আর সেখানে দাম মিলছে ফরিয়া সিন্ডিকেটের হিসেব অনুযায়ী।
ফলে এবার মারাত্মক ক্ষতির কবলে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির প্রান কৃষি ও কৃষক। এমনকি এবার বাজারে শীতকালীন সবজির দাম সাম্প্রতিককারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছলেও তাতে লাভবান হননি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক। কারন সারা দেশের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা দক্ষিণাঞ্চলে রবি মৌসুম শুরু হয় প্রায় দুমাস বিলম্বে। উপরন্তু বুলবুল-এর ছোবলে আগাম শীতকালীন সবজির পুরোটাই নষ্ট হয়ে কৃষকদের পরিপূর্ণভাবেই সর্বশান্ত করেছে। সব মিলিয়ে ২০০৮ সালের ১৫ নভেম্বর ভয়াল ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’এর তান্ডবের পরে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ও কৃষক পুনরায় আরেকটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে। ১১-১-২০২০.
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।