রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে
ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাথুলী এলাকায় অতিরিক্ত ওজনের যানচলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থাপন করা ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’-এ শুরু হয়েছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পরিবহন চালক ও মালিকরা। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ টনের অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন আগত পথে ফিরিয়ে দেয়া অথবা মামলা দেয়ার কথা থাকলেও পণ্যবাহী ট্রাক ও কভার্ডভ্যানপ্রতি ৫শ’ থেকে তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আবার অনেক সময় যানবাহনে অতিরিক্ত ওজন না থাকলেও টাকা না দিলে চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে চালকদের। প্রায় চার বছর আগে চাঁদাবাজির অভিযোগে এ স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়া হলেও সুবিধাভোগীদের তদবিরে তা আবার চালু করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, গোলরা হাইওয়ে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও। তাদেরকে মাসিক মাসোহারা দিয়েই মালবাহী ট্রাকপ্রতি চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন চলাচলের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দ্রুত নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ অহরহ দুর্ঘটনা ঘটে। তাই দ্রুত মহাসড়ক বেহাল অবস্থায় পরিণত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা ও দুর্ঘটনা রোধের জন্য কয়েক বছর আগে ঢাকা-আরিচার মহাসড়কে বাথুলী এলাকায় এ স্টেশনটি স্থাপন করা হয়। স্টেশনটি স্থাপন করেন রেগনাম রিসোর্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চালু হওয়ার পর থেকেই এ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। পরিচালনা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই রেগনাম রিসোর্ট লিমিটেড নামক কোম্পানির কর্মচারীরা শুরু করে চাঁদাবাজি। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চাঁদাবাজির পরিমাণ। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ টনেরও বেশি লোড ট্রাক আগত থেকে ফেরত পাঠানো ও অতিরিক্ত ওজন বহনের দায়ে মামলা দায়ের করা। সাইনবোর্ডেও তা লিখে রাখাও হয়েছে। কিন্তু রেগনাম রিসোর্ট লিমিটেডের কর্মচারীরা ট্রাকপ্রতি ৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে এসব ট্রাক। এ ঘটনা এখন ওপেন সিক্রেট। স্টেশনে ঢোকার মুখেই ব্যারিকেড দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা নিত্যদিনের চিত্র। আবার তাদের রয়েছে স্থানীয় কিছু ‘মাস্তান’। কেউ এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে ওই ‘মাস্তান’ দিয়ে সায়েস্তা করা হয়। সরেজমিন রাতে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাথুলী এলাকার এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনে রেগনাম রিসোর্ট লিমিটেড কোম্পানির ৩০/৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি প্রবেশমুখে লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ৪/৫ জন লোক (মাস্তান)। এ সড়ক দিয়ে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক আসলেই তারা ওজন মাপার যন্ত্রের ওপর দিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। স্টেশনটির কন্ট্রোল রুমের সামনে পৌঁছামাত্রই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা নাসিরসহ আরো তিনজন লোক অভারলোড (প্রায় ২০ টন) একটি ট্রাকটিকে থামায়। পরে তারা ট্রাকের ভেতের থাকা পণ্যের চালানপত্র বের করতে বলে। ওই ট্রাকটির চালক আজিজুর রহমান প্রায় ২০ টন মাল বহন করে নিয়ে আসার দায়ে রেগনাম রিসোর্ট লিমিটেডের শ্রমিক নাসির তার কাছ থেকে ১৫শ’ টাকা দাবি করেন। চালক নাসিরের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দেয়ার পরই এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি থেকে ছাড়া পায়। এছাড়া ঘটনাস্থলে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে বেশিরভাগ ২৫ থেকে ২৮ টনের অভার লোড ট্রাক মামলা না দিয়ে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এভাবে প্রতিদিন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচলরত শত শত পণ্যবাহী যানবাহন থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা আদায় করছেন। এছাড়াও মহাসড়কে প্রতিদিন অতিরিক্ত ওজন নিয়ে শত শত যানবাহন চলাচল করলেও মাঝেমধ্যে দেখানোর জন্য ১৫/২০টি যানবাহনের নামে মামলা দায়ের করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেগনাম রিসোর্ট কোম্পানির এক কর্মচারী জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা মাঝে-মধ্যে এসে টাকা নিয়ে যায়। এছাড়াও তাদের মাসোহারা দিতে হয়। ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা ট্রাকের চালক জহির মিয়া বলেন, তিনি প্রায়ই এ সড়ক দিয়ে পণ্যবাহী মালামাল নিয়ে যাতায়াত করেন। ১৫ টনের বেশি হলেই তাকে এক হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত ওজন না থাকলেও টাকা না দিলে অনেক সময় নানান অভিযোগ করে ভোগান্তিতে ফেলেন এখানকার লোকজন। আর এখন ঈদ উপলক্ষে তাদের চাঁদার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এছাড়াও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একাধিক চালকরা অভিযোগ করে বলেন, এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটি এখন চাঁদাবাজির মহাফাঁদে পরিণত হয়েছে। পরিবহন মালিক ও চালকদের অভিযোগ চাঁদাবাজি ছাড়া এই স্টেশনটি সরকারের কোনো উপকারেই লাগছে না। বরং প্রতিদিন স্টেশন থেকে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজির কারণে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এব্যাপারে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটির দায়িত্বরত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, আগে ১৫ টনের বেশি হলেই মামলা দেয়া হতো। এখন মৌখিক নির্দেশে ২০ টন করা হয়েছে। তবে অতিরিক্ত পণ্যবাহী গাড়ি (২৫ থেকে ২৮ টন) মামলা না দিয়ে টাকা (চাঁদা) নিয়ে ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, শিশুখাদ্য, ঔষধ ও গার্মেন্ট পণ্যসামগ্রী ছাড়া হয়। এদিকে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক সাভারের হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত ওভারলোড করা ট্রাক যাতায়াত করছে। কিন্তু এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন থেকে কোনো ওভারলোড করা ট্রাক ফিরে এসেছে বলে তাদের জানা নেই। মাঝে-মধ্যে ১৫৪ ধারায় মামলা দেয়ার কথা শুনেছেন তারা। তবে পরিবহন চালক ও মালিকদের দাবি দ্রুত এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশনটির চাঁদাবাজি বন্ধ না করলে যে কোনো মুহূর্তে আন্দোলনে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।