Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে

বছরের ব্যবধানে কমেছে ৭৩ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ১১ জানুয়ারি, ২০২০

সুদের ওপর উৎসে কর, টিআইএন বাধ্যতামূলক, অপ্রদর্শিত অর্থে ক্রয় প্রতিরোধ করাসহ নানা ধরণের কড়াকড়ি আরোপ করা সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমে এসেছে। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছরের নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে বিক্রি হয়েছিল ৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র। এছাড়া চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরের একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এ বছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে ৭৩ শতাংশ। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরে ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা, এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলক করা, সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। দুর্নীতি কিংবা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধ করতে ক্রেতার তথ্য একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভিন্ন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যত তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এসব কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, মূলত একের পর এক সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেয়ার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমেছে। সুদের ওপর কর বসাতে গ্রাহক আগ্রহ হারাচ্ছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের পঞ্চম মাস নভেম্বরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ১৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ২ হাজার ৩৭৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার ৮৬২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ১২ হাজার ৮০৮ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ঋণ নেয়।

গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্য ছিল সরকারের। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। সরকারের এ খাতের ঋণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা বেশি। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৪ হাজার কোটি টাকা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিক্রি হয় ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার পেয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে মাসের পর থেকে এই হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।



 

Show all comments
  • Khan Muhammad Jubayer Imran ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    অনেক কিছু ক্লিয়ার হোলো।
    Total Reply(0) Reply
  • Mursaleen Rumi ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫৮ এএম says : 0
    very informative and logical writeup
    Total Reply(0) Reply
  • সাকা চৌধুরী ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    কড়াকড়ি তুলে নেওয়া হোক তাহলে আাবার ঠিক হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান মুনাব্বেহ সাআদ ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০২ এএম says : 0
    সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুজ্জামান ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:১২ এএম says : 0
    একের পর এক সরকারের কড়া পদক্ষেপ নেয়ার কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি তলানিতে নেমেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • শফিক রহমান ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:১২ এএম says : 0
    সুদের ওপর কর বসাতে গ্রাহক আগ্রহ হারাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Amir ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১১:২০ এএম says : 0
    আমার মনে হয় সরকারি কোষাগার টাকা পয়সায় ওভার ফ্লো হয়ে আছে, তাই আভ্যন্তরীণ এই খাত থেকে সরকারের আর ঋণনেওয়ার প্রয়োজন নেই ;এই কারনে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে সঞ্চয়পত্রের খাতটিতে জনগণকে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে !তবে উন্নত সমাজব্যবস্থা গড়তে এই খাতটা যে সামাজিক সুরক্ষার একটি অংশ তা সরকার বেমালুম ভুলে গিয়েছে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সঞ্চয়পত্র

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ