Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

গারো পাহাড়ের পাদদেশে

মো. মেরাজ উদ্দিন, শেরপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি শেরপুরের গারো পাহাড়। নীল আকাশের নিচে লাল-সবুজের টিলার সমারোহ। পাহাড়ি টিলা বেয়ে সমতলের দিকে ছুটে চলা ছোট ছোট ঝরনা ও ছড়ায় পানির কলকল শব্দ আন্দোলিত করবে প্রকৃতিপ্রেমীদের। সেই সঙ্গে শত শত বছর ধরে বসবাসকারী উপজাতী নৃ-গোষ্ঠীর নানা স¤প্রদায়ের সংস্কৃতি ও জীবন-জীবিকা পাহাড়ের সৌন্দর্যকে করেছে আরো সমৃদ্ধ।
ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়ের গায়ে মেঘ-রোদ্দুরের খেলা আর সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অধিবাসীদের ঘর-বাড়ির দৃশ্যে মন ছুঁয়ে যায়। গজনী অবকাশ কেন্দ্রের পাশাপাশি এ জেলায় রয়েছে মধুটিলা ইকো পার্ক। ওপারে মেঘালয়ের সবুজ গাছপালা ও পাহাড়। এসব দৃশ্য দেখে শুধু অবাকই হবেন না বরং আপনাকে মুগ্ধ করবে।

গজনি অবকাশ কেন্দ্র : এ পর্যটন কেন্দ্রে দর্শনীয় ও আর্কষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে শিহরণ জাগানো পাহাড়ের চ‚ড়ায় ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’, সূড়ঙ্গ পথে পাতালপুরী, ইলেক্ট্রিক ট্রেন ও নাগরদোলা সমৃদ্ধ শিশু পার্ক, গারো মা’র কর্নার, ব্যাঙের ছাতা, মিনি চিড়িয়াখানা, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিস্তম্ভ, মৎস্যকন্যা, মুক্তমঞ্চ, প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের বিলুপ্ত ডাইনোসর, বাঘ, হাতি, জিরাফ, বানর, কুমির, হরিণসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি। যা দেখে সবার মনকেই আনন্দে উদ্বেলিত করে। এখানে সুউচ্চ ‘সাইট ভিউ টাওয়ার’ এর ওপরে উঠলে সারা গারো পাহাড়ের সৌন্দর্যকে অবলোকন করা যায়। ভারতীয় সীমান্ত এলাকাসহ বিশালা পাহাড়ি অঞ্চলকে দেখে আনন্দিত হন দর্শনার্থীরা।

কিন্তু গত তিন বছরে কয়েকদফার পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ভেসে যায় লেকের মাছ ও পানি। ফলে পানি শূন্য হয়ে লেকের সেই সৌন্দর্য আর নেই। বন্ধ হয়ে যায় প্যাডেল বোর্ড, স্পীড বোর্ড ও ময়ুর পঙ্খী নৌকা। এতে পর্যটকদের আকর্ষণও অনেকটা নষ্ট হয়ে যায়।
এ অবকাশ কেন্দ্রে যেতে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে এসে বাসযোগে সরাসরি শেরপুর জেলা শহরে আসতে পারবেন। শহরে নামার পর রিকশায় খোয়ারপাড় শাপলা চত্বর মোড়ে নেমে সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়া যায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রে।

মধুটিলা ইকোপার্ক : এখানে রয়েছে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোটিং, স্টার ব্রিজ, স্ট্রেম্পিং রোড বা সুউচ্চ পাহাড়ে উঠার জন্য ধাপ রাস্তা (সিঁড়ি), মিনি শিশু পার্ক, মহুয়া রেস্ট হাউজ ইত্যাদি
পার্কের প্রবেশ পথ ধরে গেলে দেখা যায় বিভিন্ন সড়কের পাশে স্থাপন করা হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর ভাস্কর্য। এছাড়া আছে ওষুধি ও সৌন্দর্যবর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান। মৌসুমী ফুল এবং সাত রঙের গোলাপ বাগান।

শেরপুর জেলা সদরের বাস স্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকার মহাখালী থেকে বাসে যাত্রা করে সরাসরি নালিতাবাড়ি উপজেলা শহরে নামতে পারেন।
এরপর নালিতাবাড়ি শহর থেকে মধুটিলা ইকো পার্ক পর্যন্ত রিকশা বা অটোরিকশায় যাওয়া যাবে। এছাড়া শেরপুর জেলা শহর থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা অথবা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও ইকো পার্কে যাওয়া যাবে।
তারানি পানিহাতা : নালিতাবাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী তারানি এলাকায় মনোরম দৃশ্যের তারানি পাহাড় ও পাহাড় সংলগ্ন নদীকে ঘিরে গড়ে উঠছে পিকনিক স্পট। সেখানে গেলে দেখতে পাবেন উত্তরে ভারতের তুরা পাহাড়কে আবছা আবরণে ঢেকে আছে মেঘ-কুয়াশা। দূরের টিলাগুলো যেন সারাক্ষণ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে। তুরার অববাহিকা থেকে সামনে সোজা এসে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। নদীর একপাশে শত ফুট উঁচু দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড়। নদীর টলটলে পানির নিচে নুড়ি পাথরগুলো ঝিকিমিকি করছে।

এখানে যেতে হলে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাঁও স্থল বন্দরের কাছাকাছি গিয়ে প‚র্ব দিকটায় মোড় নিয়ে ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হয়। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। এ মোড়ে এসে আবারও গতিপথ বদলে যেতে হয় উত্তরে। উত্তরের এ রাস্তা ধরে প্রায় এক কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির মূল পয়েন্ট।
কোথায় থাকবেন : জেলার উল্লেখিত স্থানগুলো ঘুরে ঘুরে বা বিশ্রাম নিয়ে দেখতে চান এবং রাতে থাকতে চাইলে শেরপুর জেলা সদরেই থাকতে হবে। কারণ সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকার কোনো স্পটেই থাকার ব্যবস্থা বা অনুমতি নেই। জেলা শহরে হাতে গোনা দুই তিনটি ভালো মানের আবাসিক হোটেল ছাড়াও ভিআইপিদের জন্য জেলা সার্কিট হাউস, জেলা পরিষদ ও এলজিইডির রেস্ট হাউস রয়েছে। সেখানে থাকতে হলে সংশ্লিষ্ট অফিসে অগ্রিম বুকিং দিতে হবে।

কোথায় খাবেন : সীমান্ত এলাকায় ভালো মানের খাবার হোটেল নেই। তবে শেরপুর শহরে আছে কয়েকটি। জেলার বাইরে থেকে এই এলাকার গারো পাহাড়ে বেড়াতে এসে রান্না-বান্নার ব্যাবস্থা না করতে পারলে শহরের ওইসব হোটেল থেকে খাবারের জন্য অগ্রিম বুকিং দিলে প্যাকেট সরবরাহ করা হয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গারো পাহাড়

১০ জানুয়ারি, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ