পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন সংস্কার করে ধর্ষকের শান্তি মৃত্যুদণ্ড করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতি। শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘আমাদের সন্তানতুল্য ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন’ শীর্ষক এক কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল এ দাবি জানান।
আগামীতে কেউ যেন এ ধরণের ঘটনার সাহস না পায় এজন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করতে ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসি দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা। সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি আদায় হওয়ার আগ পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল। সন্ধ্যায় ঢাবি মেয়েদের ৫টি হলের শিক্ষার্থীরা নারী সমাবেশের আয়োজন করে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে। এদিকে এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে হকার, মাতাল ও ভবঘুরে তাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে ডাকসু ও বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন।
ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বুধবার বেলা ১১টায় মানববন্ধনের আয়োজন করে বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম মকসুদ কামাল বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এমন ঘটনা প্রমাণ করে, দেশের প্রশাসন কতটুকুু দায়িত্বজ্ঞানহীন। দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী যে জায়গায় নিরাপদ নয়, সে জায়গায় মফস্বল এলাকার মেয়েরা কোন অবস্থায় আছে, তা প্রমাণিত হয়। তিনি বলেন,এসময় নারী ও শিশু নির্যাতনের যে আইন বাংলাদেশে প্রচলিত আছে, তারও সংস্কার করার দাবি জানান তিনি। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ধর্ষক যদি স্বীকার করে যে ধর্ষন করেছে তখন সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড সেটা কমে ৫ বছরে চলে আসবে। তাই, শিশু ও নারী নির্যাতন আইনের সংস্কারের প্রয়োজন আছে।
মানববন্ধনে শিক্ষকদের সাথে সংহতি জানিয়ে ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাবি দেখিয়ে দিয়েছে তারা কীভাবে পড়ালেখা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক কাজ, যে কোন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করতে হয়। যে অপরাধী এ ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। তিনি বলেন, সমাজে ঘটে যাওয়া নৃশংসতা এবং অমানবিকতার বিষয়ে আমরা সকলে যদি সোচ্চার হই, তাহলে একটি ভালো সমাজ বিনিমার্ণে সক্ষম হবো। আমাদের দাবি হবে, সরকারের আইনি কাঠামোতে যদি কোন ফাঁক-ফোকর থেকে থাকে, তাহলে তা যেন দূর করা হয়। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না হয়। এই ঘটনা যেন শেষ ঘটনা হয়। আর কোন মেয়ে যেন ধর্ষণের শিকার না হয়।
প্রফেসর সাদেকা হালিম বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি। কিন্তু এধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা কখনও দেখিনি। এ ঘটনায় আমরা গভীর শোকাহত এবং ওই ছাত্রীর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। কুর্মিটোলার মতো ভিআইপি জায়গায় এমন ঘটনা ঘটায় পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সমলোচনা করে রোকেয়া হলের প্রভোস্ট প্রফেসর জিনাত হুদা বলেন, আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের প্রতি যে মনোভাব, তার পরিবর্তন করা দরকার। কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর মাহবুবা নাসরীন বলেন, এ অবস্থায় ভিকটিমের সাহসিকতা, দৃঢ়তা আমাদেরকে নতুনভাবে পথ চলতে সহায়তা করে। তিনি আমাদের কাছে প্রেরণা। ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর নিজামুল হক ভূইয়ার সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজের চেয়ারপারসন ড. সানজিদা আক্তার, সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর হুমায়ুন কবির, সাবেক প্রক্টর প্রফেসর এ এম আমজাদ, সহকারী প্রক্টর আব্দুর রহিম প্রমুখ।
সর্বোচ্চ শাস্তি পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে
শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায়ে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মেজবাহ কামাল। বুধবার সকালে অপরাজেয় বাংলায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে ধর্ষণ ও নিপীড়ণ বিরোধী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিলে একথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে। কারণ এদেশের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এখানে রাস্তায় না নামলে বিচার পাওয়া যায় না। তাই আমাদের শিক্ষার্থীর ধর্ষণকারীর সর্বোচ্চ বিচার না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহতভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে হবে। শাস্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিৎ। যখন একজন নারী ধর্ষণের স্বীকার হয় তখন তার জীবনটা নরকে পরিণত হয়। এসময় ওই নারীর পাশে দাঁড়ানো দরকার। একজন ধর্ষকের নানাবিদ পরিচয় থাকতে পারে।
প্রকাশ্যে ফাঁসি চায় শিক্ষার্থীরা
সহপাঠকে ধর্ষণের প্রতিবাদে ধর্ষন ও যৌন নিপীড়ন বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা ধর্ষকের জনসম্মুখে ফাঁসি দাবি করেন। ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আঁখি খানম বলেন, আমরা ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। পাশাপাশি বাংলাদেশে যে আইন রয়েছে তার ও সংস্কারের প্রয়োজন বলে মনে করি। সংস্কার করে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড করা হোক যেন ভবিষ্যতে কেউ ধর্ষণ করার আগে নিজের জীবনের যে অপূর্ণ ক্ষতি হবে তা নিয়ে ভাবতে পারে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার প্রভা বলেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। ধর্ষককে জনসম্মুখে ফাঁসি দেয়া হোক, এরকম শাস্তি নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশে আর এ ধরণের ঘটনা ঘটবে না। আনিকা আনজুম অর্ণি নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রত্যেকটি নারী পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন না কোনভাবে ধর্ষনের শিকার হন। শুধু নারী নন ছেলেরাও যৌন নির্যাতনের স্বীকার হন। আমরা চাই ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়ে দ্বিতীয় ধর্ষনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা হোক।
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় আনতে হবে
ধর্ষককে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ আট দাবি জানিয়েছেন ঢাবির ৫টি ছাত্রী হলের নারী শিক্ষার্থীরা। বিকাল পাঁচটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক নারী সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়। নারী শিক্ষার্থীদের আট দফা দাবি হলো-ধর্ষণের দ্রুত বিচারে ‘দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল’ গঠন; সকল আদালতে নারী নিপীড়ন সেল গঠন করে এক বছরের মধ্যে ধর্ষনর মামলার বিচার; টিএসসি থেকে সুফিয়া কামাল হল, গণতন্ত্র তোরণ থেকে সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট ও সিসি ক্যামেরা স্থাপন; বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের নিজস্ব ইস্যু নিয়ে কনসাল্ট করার জন্য ৪-৫ জন নারী শিক্ষক দিয়ে ফিমেল উপদেষ্টা নিয়োগ; বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের আইনি সহয়তার খরচ বিশ্ববিদ্যালয়কে বহন; ক্যাম্পাস থেকে ভবঘুরে, নেশাখোর ও পাগলদের অপসারণ; ক্যাম্পাসের বাস স্টপেজগুলোর নিরাপত্তা পুনর্বিবেচনা করা; ইমার্জেন্সিতে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে অবস্থান করার অনুমতি।
এদিকে ছাত্রী ধর্ষণে ভবঘুরে হকার জড়িত থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীদিনে সতর্কতার জন্য ঢাবি ক্যাম্পাসে অবস্থানরত পাগল, মাতাল, হকার ও ভবঘুরে নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিযান দাবি করেন তারা। বিষয়টি বিবেচনায় আছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আগামীদিনে প্রক্টর অনুমদিত কার্ডধারী কিছু ফেরিওয়ালার বাইরে কোন হকার, পাগল, মাতাল, ভবঘুরেকে ক্যাম্পাসে থাকতে দেয়া হবে না বলে প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আলাদাভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে ডাকসু। ডাকসু সদস্য মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিয়ে ইনকিলাবকে জানান আগামী ১২ তারিখ থেকে একশত সদস্যের একটি টিম কাজ করবে।
আজ ছাড়পত্র পেতে পারে ভুক্তভোগী
ধর্ষণের শিকার ছাত্রী আগের চেয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ্য হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, মেয়েটি হাসপাতাল থেকে চলে যেতে চায়। চিকিৎসকদের অনুমতি পেলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) তাকে ডিসচার্জ (ছাড়পত্র দেয়া) করার পরিকল্পনা আছে। এদিন হাসপাতালে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দেখতে গিয়ে ঢাবি ভিসি সাংবাদিকদের বলেন, তার সাথে কথা হয়েছে। মেয়েটি আগের চেয়ে ভালো আছে। মানসিকভাবে শক্ত ও সুস্থ্য হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। এসময় ধর্ষকের গ্রেপ্তারে স্বস্তি প্রকাশ করে তিনি বলেন, এই ঘটনাই যেন শেষ ঘটনা হয়।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।