বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
চলমান বিশ্বে বসবাসকারী মানুষ জ্ঞান, প্রজ্ঞা মনীষা ও মেধা বিকাশের এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, মানুষ এখন জলে-স্থলে, অন্তরীক্ষে ও মহাশুন্যে স্বচ্ছন্দে ঘোরাফিরা করতে পারে। এগুলোর তথ্য উপাত্ত নিয়ে গবেষণা করতে পারে এবং নতুন নতুন আবিষ্কার দ্বারা সকলকে চমৎকৃত করে তুলতে পারে। কিন্তু এতকিছুর পরও জলজ্যান্ত মানুষ নিজের হাতের নাগালে সংঘটিত এমন অনেক কিছু সম্পর্কে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, এমনকি অপারগতার নাগরদোলায় হিমশিম খেতে থাকে, যা প্রকৃতই বিস্ময়ের ব্যাপার। এই বিস্ময়ের মাঝে একটি হলো ‘দাবানল’।
পৃথিবীর ক্ষুদ্র-বৃহৎ বনাঞ্চলগুলোতে দাবানলের ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায় যে, বিজ্ঞানের এই চরম উন্নতির যুগেও মানুষ দাবানলের কাছে হেরে যাচ্ছে। শত চেষ্টা-তদবির করেও দাবানলের আগুন নিভানো সম্ভব হচ্ছে না বা আগুনকে আয়ত্তে আনা যাচ্ছে না।
আমেরিকার ক্যালেফোর্নিয়ায় দাবানল, আমাজন অঞ্চলের দাবানল, চিলির দাবানল, ব্রাজিলের দাবানল এবং বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়ার দাবানল এ কথারই চূড়ান্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখে আঙ্গুল দিয়ে বর্তমান বিশ্বের মানুষগুলোকে তা দেখিয়ে দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
আর আমরা একথাও জানি যে, মানুষ সৃষ্টির মৌলিক উপাদান চতুষ্টয়ের একটি হলো আগুন। আগুন, পানি, মাটি ও বাতাসের রাসায়নিক মিশ্রণ দ্বারা মহা বিজ্ঞানী আল্লাহ তায়ালা মানব দেহ সৃষ্টি করেছেন। আবার পাপাচারে লিপ্ত ও অভিযুক্ত মানুষকে তিনি আগুন দ্বারাই শাস্তি প্রদান করবেন।
সুতরাং আগুন হতে মানুষ যেমন উপকার লাভ করে, তেমনি সময়ভেদে আগুন মানুষের এমন কি অন্যান্য সৃষ্টির ক্ষতির সমূহ কারণও হতে পারে। আগুনের ব্যবহারিক দিকের মধ্যে আল্লাহপাকের নিদর্শনাবলির অন্যতম নিদর্শন প্রচ্ছন্ন রয়েছে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়।
তবে, এই নিদর্শন থেকে মানবজাতির সকলেই ঢালাওভাবে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে না। আল কোরআনে পিয়ারা নবী রাসূল (সা.) কে খেতাব করে মহান রাব্বুল আলামীন এই বিশেষত্বটি এভাবে ব্যক্ত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, আর আপনি অন্ধদের তাদের গোমরাহি থেকে সুপথে আনতে পারবেন না। আপনি তো উপদেশবানী কেবল তাদেরকেই শোনাতে পারবেন, যারা আমার নিদর্শনাবলিতে বিশ্বাস রাখে, কেননা তারা তো আত্মসমর্পনকারী। (সূরা রুম : আয়াত ৫৩)।
একদা হযরত আনাস বিন মালেক রা. পিয়ারা নবী রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এই পৃথিবীতে শক্তিশালী জিনিস কি? রাসূলেপাক (সা.) বললেন, পাহাড়সমূহ। কেননা, পৃথিবী সৃষ্টির পর একে শুন্য মার্গে স্থাপন করা হলে তা আল্লাহর ভয়ে কাঁপতে থাকে। আল্লাহপাক তাতে পাহাড় সৃষ্টি করে খিলাম স্বরূপ পৃথিবীতে সংস্থাপন করেন। ফলে পৃথিবীর অনুকম্পন বন্ধ হয়ে তা স্থির হয়ে যায়।
আবার জিজ্ঞেস করা হলো, পাহাড় হতে শক্তিশালী জিনিস কি? উত্তর হলো, পাথর। কেননা পাথর পাহাড় অভ্যন্তরে অবস্থান করে আল্লাহপাকের ভয়ে ক্রন্দন করে। যার অশ্রুধারা ছোড়া, নালা রূপে ঝর্ণা ও নদীর রূপ ধারণ করে। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, পাথর থেকে শক্তিশালী জিনিস কি? উত্তরে বলা হলো, লোহা। কেননা, লোহার আঘাতে পাথর খন্ড বিখন্ড হয়ে যায়।
আবার জিজ্ঞেস করা হলো, লোহা থেকে শক্তিশালী কি জিনিস? উত্তরে বলা হলো, আগুন। কেননা আগুনের উত্তাপে লোহা গলে যায়। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, আগুন হতে শক্তিশালী কি জিনিস? বলা হলো, পানি। কেননা, পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, পানি হতে শক্তিশালী কি জিনিস? উত্তরে বলা হলো, বাতাস। কেননা, বাতাস শুন্যে ভাসমান মেঘমালাকে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এবং এক দেশ থেকে অন্য দেশে তাড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে।
এতে বোঝা যায় যে, আগুন আল্লাহপাকের একটি নিদর্শন। এই নিদর্শন তিনি অপরাধীদের শাস্তির উদ্দেশ্যে কখনো কখনো ব্যবহার করেন, যা আমরা দাবানল রূপে প্রত্যক্ষ করে থাকি। এ পর্যায়ে স্বভাবতই মনের কোণে প্রশ্নের উদয় হয়, কেন এহেন শাস্তির অবতারণা? এর উত্তরে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘পৃথিবীর স্থলভাগে ও জলভাগে বিপর্যয় সৃষ্টি হয় মানুষের কৃতকর্মের ফলে।’
তাই বোঝা যায় যে, দাবানল জনিত বিপর্যয় মানুষের হাত দ্বারা সম্পাদিত অপকর্মেরই শাস্তি মাত্র। অতএব মানুষ যতবেশি অপকর্ম পরিত্যাগ করবে, ততই মঙ্গল। যা কল্যাণ ও মঙ্গলের পরিচায়ক, তা-ই কেবল মানুষকে বিপর্যয়ের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় নির্দেশ করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।