Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে

মুনশী আবদুল মাননান | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০৬ এএম

এ দেশের মানুষের এমন কি হয়েছে যে, তারা আর্তমানবতার সেবা থেকে নিজেদের বিরত রাখাকে শ্রেয় জ্ঞান করছে? এখন শীতে গোটা দেশ কম্পমান। দরিদ্র, সহায়সম্বলহীন ও নিরাশ্রয় মানুষের কষ্ট-দুঃখ ও দুর্ভোগের শেষ নেই। অথচ তাদের সাহায্য ও সহযোগিতায় মানুষ এগিয়ে আসছে না। এটা একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়। যারা ধনী, বিত্তবান, সঙ্গতিসম্পন্ন, তাদের জন্য শীত কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা তাদের, যাদের ঘর নেই, বাড়ি নেই বা কারো থাকলেও ভাঙাচোরা এবং শীতের বস্ত্র নেই, কাজ নেই, খাদ্য নেই। এমন বিপন্ন, বিপর্যস্ত মানুষের জন্য সাহায্যের অভাব, সহযোগিতার কার্পণ্য অতীতে কখনো হয়নি।

আমাদের দেশ তো প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বৃষ্টি-বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টি-ফসলহানি, খাদ্যাভাব ইত্যাদি নতুন নয়। অতীতে আমরা দেখেছি, যে কোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে দলে দলে মানুষ দুর্গত মানুষের সেবায় এগিয়ে এসেছে। প্রয়োজনে রাস্তায় নেমেছে সাহায্যের জন্য। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষায়তন ছেড়ে খাদ্য, বস্ত্র ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করেছে।

রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত সামগ্রী পরে দুর্গত এলাকায় নিয়ে বিতরণ করা হয়েছে। সেই মানবিকতাবোধ, সেই সহানুভূতি, সেই সেবামূলক সহৃদয় মনোভাব গেলো কোথায়? ধর্মোপদেশ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতার প্রণোদনা কি তবে নিঃশেষ হয়ে গেছে?

দেশের জনসংখ্যার ৯২ শতাংশ ইসলামের অনুসারী। আর ইসলাম মূলতই মানবতার ধর্ম। মহানবী (সা.) সর্বোচ্চ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন এবং তিনি তার অনুসারীদের মানবিক গুণে গুণান্বিত হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। ইসলাম ও মহানবী (সা.)-এর অনুসারীদের দেশে মানবতা বিপন্নতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হবে, কিংবা অবহেলিত হবে, এটা হতে পারে না। দরিদ্র ও অসহায় মানুষের সেবা ও কল্যাণে তারা ঝাঁপিয়ে পড়বে, সেটাই প্রত্যাশিত। ব্যতিক্রম দেখলে দুঃখ ও উদ্বেগ দুই দেখা দেয়া স্বাভাবিক।

সামনে শীতের প্রকোপ আরো বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদদের মতে, এ মাসে আরো একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, যার অর্থ মানুষের যাতনা-দুর্ভোগ, কষ্ট আরো বাড়বে। ইতোমধ্যে বেশকিছু মানুষ শীতজনিত রোগব্যধিতে মারা গেছে। যারা মারা গেছে, তাদের মধ্যে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুই বেশি। শীতের সঙ্গে কুয়াশাও আছে। এ সময় কাজের অভাব দেখা যায়। যারা দিন আনে দিন খায়, তাদের অর্ধাহারে-অনাহারে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।

শীতার্ত মানুষের জন্য লেপ-কম্বল ও শীতবস্ত্র যেমন দরকার তেমনি শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য উপায়-উপকরণ দরকার। একই সঙ্গে দরকার খাদ্য। দেশের কয়েক কোটি মানুষ শীতের অসহায় শিকার। এদের সকলের লেপ-কম্বল, শীতবস্ত্র ও খাদ্য যোগান দেয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য সর্বস্তরের মানুষ বিশেষ করে যাদের সামর্থ আছে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। এটা শুধু অধিকতর সুবিধাপ্রাপ্ত ও সম্পন্ন মানুষ হিসাবে তাদের কর্তব্য নয়, ধর্মীয় অপরিহার্য দায়িত্বও বটে। দুস্থ ও অভাবীদের সাহায্য করা, তাদের প্রয়োজনে এগিয়ে আসা প্রতিটি মুসলমানের নৈতিক দায়। রাসূলে খোদা (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, মহান আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করে দেবেন।

প্রতিটি বিত্তশালী ও সামর্থবান মুসলমানের স্মরণ রাখতে হবে, তাদের ধন-সম্পদ ও উন্নত অবস্থান আল্লাহরই অনুগ্রহ ও দান এবং তার ওই ধন-সম্পদে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের অংশ রয়েছে বলে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন : তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও অভাবীদের অধিকার রয়েছে। (সুরা যারিয়াত : ১৯) দুস্থ ও অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করা সৎকর্মের অন্তর্ভুক্ত।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় সৎকর্ম করার জন্য তাকিদ দিয়েছেন এবং সৎকর্মশীল হওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এক জায়গায় তিনি বলেছেন : তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকাজ করো, আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণ লোকদের ভালোবাসেন। (সুরা বাকারাহ : ১৯৫)

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : পৃথিবীবাসীর ওপর সদয় হও, ঊর্ধ্বলোকের অধিপতি তোমার ওপর সদয় হবেন। অন্য এক হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ক্রীতদাস মুক্ত করা, অভাবের দিনে অনাহারীকে খাদ্য দান করা এবং দরিদ্র আত্মীয় ও অনাথ ব্যক্তির পাশাপাশি ভুলুণ্ঠিত অভাবী ব্যক্তির সাহায্য করা অন্যতম শ্রেষ্ঠ পূণ্যের কাজ।
আমরা আশা করি, শীতার্ত মানুষের সাহায্যে ও কল্যাণে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবে এবং আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্যলাভের সুযোগ গ্রহণ করবে।



 

Show all comments
  • Manik Saha ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৫ এএম says : 0
    সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির।
    Total Reply(0) Reply
  • Md MostafizurRahman Banijjo ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    এই শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে দরিদ্র মানুষের। শিশু ও বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ঠান্ডাজনিত নানা রোগে। হাসপাতালেও ভর্তি করতে হয়েছে অনেককে।
    Total Reply(0) Reply
  • Babul Bhuiyan ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কৃষিকাজও। এই সময়ের স্বাভাবিক বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। কুয়াশায় অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে। কৃষককে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ সময় সবার আগে শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Khorshed Gazi ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৬ এএম says : 0
    দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ, যাদের শীতবস্ত্র নেই, শীত নিবারণের জন্য সামান্য একটি কম্বল নেই, এখন যত দ্রুত সম্ভব এসব মানুষের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Alam ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৭ এএম says : 0
    সরকারের পাশাপাশি দেশের বিত্তবান মানুষদেরও এ সময় এগিয়ে আসতে হবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টায়ই শীতের কষ্ট থেকে দরিদ্র মানুষদের রক্ষা করা সম্ভব। তবে সবার আগে প্রয়োজন শীতবস্ত্র। আমরা আশা করি, সমাজের সবাই দরিদ্র মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির উদ্দিন ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:০৯ এএম says : 0
    এটাই ইসলামের শিক্ষা
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক আহমেদ ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:১০ এএম says : 0
    লেখাটির জন্য লেখক ও দৈনিক ইনকিলাবকে অসংখ্য ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • শাহে আলম ৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১০:১০ এএম says : 0
    ইসলাম মানবতার ধর্ম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন