ইরাকের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরাক যদি জোরপূর্বক আমাদের সৈন্যদের সেদেশ ত্যাগে বাধ্য করে, তাহলে ইরাকের ওপর আমরা এত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে যে, যা আগে তারা কখনও দেখিনি।
গতকাল রোববার বিকেলে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ হুমকি দেন বলে ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার চেয়ে রোববার দেশটির পার্লামেন্টের একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। মার্কিন বিমান হামলায় শুক্রবার ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান কাসেম সোলেইমানি ও দেশটির শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী হাশদ আল-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল মুহানদিস নিহত হওয়ার দুদিন পর প্রস্তাবটি পাস হয়। এই প্রস্তাব পাসের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাবে ইরাক।
ইরাকের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার আন্তর্জাতিক জোটের কাছে সহযোগিতা চেয়ে ইরাকে সেনা রাখার যে অনুরোধ করেছিল তা বাতিল করার প্রস্তাব করবে। কেননা ইরাকে সামরিক অভিযান শেষ হওয়ার সঙ্গে জয় (আইএসকে পরাজিত) অর্জিত হয়েছে।’
প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যদি তারা (ইরাক) আমাদের (সৈন্যদের) ত্যাগ করতে বলে এবং আমরা যদি এটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে না করতে পারি, তাহলে আমরা তাদের ওপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। আর এ নিষেধাজ্ঞা তারা আগে কখনও দেখেনি।
হুমকির পাশাপাশি ইরাকে নির্মিত যুক্তরাষ্ট্রের বিমানঘাঁটির জন্য ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত মার্কিন সেনারা ইরাক ত্যাগ করবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘সেখানে (ইরাক) আমাদের একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল বিমানঘাঁটি রয়েছে। এটা নির্মাণ করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে আর এটা আমার সময়ের অনেক আগে। আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত এই ঘাঁটি ত্যাগ করব না, যতক্ষণ না তারা আমাদের এর ক্ষতিপূরণ দেবে।’
মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের মদদে হেজবুল্লাহ মিলিশিয়া গত দুই মাসে একাধিক রকেট হামলা চালিয়েছে এই ঘাঁটিতে। ফলে ঘাঁটির ট্রিনিং মিশন বন্ধ রয়েছে। এখন আমাদের কাজ হবে শত্রুর হামলা থেকে এই বিমানঘাঁটিকে রক্ষা করা।
ইরাকের পার্লামেন্টে অনুমোদিত প্রস্তাবে দেশটি থেকে সব বিদেশি সেনাকে ফিরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জাতিসংঘে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইরাকি পার্লামেন্ট। ইরাকের আইনপ্রণেতারা মনে করেন, মার্কিন বাহিনী ইরাকে ঢুকে সোলাইমানিকে হত্যা করায় তাদের (ইরাক) সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে অবশ্য বলা হচ্ছে, ইরাক থেকে মার্কিন বাহিনীকে সরাতে নতুন আইনের প্রয়োজন হবে। যে প্রস্তাব পাস করা হয়েছে, তার মাধ্যমে মার্কিন সেনা সরানো সম্ভব হবে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরাকের চুক্তি রয়েছে।
২০০৩ সালের মার্চে গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুতের মিথ্যা অজুহাতে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে লাখ-লাখ মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হলেও বর্তমানে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা দেশটিতে মোতায়েন রয়েছেন। এই মার্কিন সেনারা আন্তর্জাতিক জোটের অংশ হিসেবে দেশটিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।
সোলাইমানি হত্যাকান্ডের পর ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে কঠিন পরিস্থিতিতে আছে ইরাক। দেশটির জনগণের একাংশ ইরানের প্রতি সহানুভূতিশীল। সোলাইমানি হত্যাকান্ডের পর সেই সহানুভূতি আরও বেড়েছে। এদিকে হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া ইরানের বেশ কিছু মিলিশিয়া বাহিনী ইরাকে তৎপর রয়েছে। অনেক গোষ্ঠীকে ইরান নানাভাবে সহায়তাও করে থাকে। তাই দেশটিতে এই গোষ্ঠীগুলোর হামলা বৃদ্ধির আশঙ্কায় রয়েছে ইরাক।
ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টারা সাংবাদিকদের কাছে সোলাইমানিকে হত্যায় ড্রোন হামলার ব্যাপারে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, সোলাইমানি আমেরিকানদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করছিলেন। যে গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন বলে জানান।
অপরদিকে ইরান সরকার ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৫ সালে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার একটিও আর মানা হবে না। ইরান সরকার বলছে, পরমাণু সমৃদ্ধকরণ, সমৃদ্ধ পরমাণুর মজুত বা পারমাণবিক গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে আর কোনো নিষেধাজ্ঞা মানবে না ইরান।