Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিমে কৃষকের স্বপ্নপূরণ

হবিগঞ্জে ৫০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ

কামাল আতাতুর্ক মিসেল, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা (হবিগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ৫ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

গ্রামের জমি, ঘরবাড়ি পুরো জায়গাজুড়ে এখন শুধু শিম আর শিম। গ্রামের যেখানে যতটুকু ফাঁকা জায়গা আছে তা পূরণ করা হয়েছে শিম চাষ করে। খালি চোখে যতদূর দৃষ্টি যায় বিস্তীর্ণ শিম গাছের সবুজের সমারোহ আর বেগুনী-সাদা শিম ফুলের সম্মিলন।
মৌসুমী সবজি হলেও বার মাস এখন শিমের চাষ হয়। তবে শীতে এর স্বাদ বেশি হয়ে থাকে। কমখরচে বেশি লাভ হওয়ায় শীতকালের জনপ্রিয় সবজি শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন নবীগঞ্জ উপজেলার পানি উমদাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা। প্রতিবছরের মতো এ বছরও নবীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্যাপক আবাদ হয়েছে শীতের সবজি শিম।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কঘেঁষা সবুজের সমারোহ, খাদ্য শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত ও পাহাড়ি দ্বীপখ্যাত দিনারপুর অঞ্চলের পানিউমদা ইউনিয়নের মাঠজুড়ে শুধু শিম বাগান। এ ছাড়াও নবীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে শিমের চাষ। এখানকার আবাদি জমির একটি বড় অংশে গত দুই যুগের মতো নিজ উদ্যোগে কৃষকরা নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করে আসছেন। এ অঞ্চলে গ্রামের প্রায় সব বাড়িতে শিমের চাষ হয়। এ কারণে তাদের এই সিজনে শীতে শিম কিনতে হয় না। অনেকে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করতে পারেন। ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে শিম চাষ করে আসছেন অনেকে। এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক ও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই অল্প পুঁজিতে বেশি আয়ের আশায় এই সবজি চাষ শুরু করেছেন।
নবীগঞ্জ কৃষি অফিসের হিসাব মতে, উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। শনিবার শীতের পড়ন্ত বিকেলে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সরেজমিনে দত্তগ্রাম বড়চর, খাগাউরা, বড়গাঁও এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, এলাকাগুলো যেন শিম দিয়ে ঘেরা। এসব গ্রামে শিমের ব্যাপক আবাদ হওয়ায় শিমের বাগান দেখলে যেন মনে হয় মাঠের পর মাঠ ঘিরে রয়েছে সবুজ শিম ক্ষেত। গাছের সবুজ পাতার বাহার পথিকের মন জুড়াচ্ছে। বড়গাঁও গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, এবার ৬০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে ফলন ভালো হওয়ায় অন্তত দুই লাখ টাকার শিম বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। আরেক চাষি আলমগীর হোসেন বলেন, এক একর জমিতে শিমের আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে বাম্পার। এবার তিনি কমপক্ষে ২০০ মণ শিম পাবেন।
কৃষি অফিস ও এলাকাবাসী জানান, এ সব এলাকার অধিকাংশ জমিই শিম চাষের জন্য উপযোগী। মাঠের পর মাঠ একসময় বিভিন্ন সবজিতে ঠাসা থাকলেও প্রায় এক যুগ ধরে স্থানীয় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে শিম চাষ শুরু করেছেন। হবিগঞ্জের খাগাউরার শিম চাষি কামরুল বলেন, জমি ছাড়াও রাস্তার ধারে, পথের আইলে, ঘরের চালে শিম ফলানো যায়। গত মৌসুমে কেজিপ্রতি শিমের দাম পেয়েছেন ৮ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত কেজি প্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে শিম।
স্থানীয় বড়চর পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাজার শিমে ভরপুর। এখান থেকে ব্রাক্ষণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট ও সিলেটের বাইরের অনেক পাইকাররা সবচেয়ে বেশি শিম কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই ট্রাক লোড হয় এখান থেকে। এখানকার কৃষকরা শিম চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর্থিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম মাকসুদুল আলম জানান, শিম চাষিদের সঠিক সময়ে পরামর্শ দেয়ার কারণে তারা ভালো ফলন পেয়েছেন। ফলে প্রতিবছরেই শিম চাষে তাদের আগ্রহ বেড়েছে। এ মৌসুমে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নবীগঞ্জবাসীর জন্য খুশির সংবাদ হচ্ছে, নবীগঞ্জের শিম দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য শিম পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই নবীগঞ্জের শিম দেশের বাইরেও বিক্রি হবে বলে আশাবাদী। আগামীতে এ অঞ্চলে শিমের আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কৃষকের স্বপ্নপূরণ

৫ জানুয়ারি, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ