বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
গাড়ি গিয়ে পৌঁছল বোখারার সেরা হোটেলে। একটি কৃত্রিম টিলার উপর সুন্দর ভবন। লাউঞ্জে বসার পরপরই পাঁচতলায় পার্ক ফেসিং এক নাম্বার স্যুট দেখিয়ে দেয়া হলো। সামান্য বিশ্রাম সেরে জোহরের নামাজ। এরপর আফসানা রেস্তোরায়। উজবেকরা লেখে আফসোনো। এখানে গাড়িতে করে বুফে খাবার খেতে এসেছি বোখারায় থাকার তিনদিনই।
সকালের নাশতাটা হতো হোটেলের রেস্টুরেন্টে। সারাটা দেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। চোখ ধাঁধানো আলোকোজ্জল বা উন্নত স্থাপনার জৌলুস সমৃদ্ধ নয়। নীরব সরল সুন্দর একটি শান্তিময় দেশ। বাংলাদেশের তুলনায় সাতগুণ বড়। অথচ জনসংখ্যা এক পঞ্চমাংশ। অর্থাৎ তিন কোটির কিছু বেশি মানুষ। বলা চলে, উজবেকিস্তানের জনসংখ্যা ঢাকা জেলার সমান।
নানা জায়গা ঘুরতে গিয়ে আসা-যাওয়া মিলিয়ে আমরা কয়েক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছি। দেশটির মহাসড়কের পাশে কোনো গাছ এমন দেখিনি যাতে নিচের কয়েকফুট জায়গা চুনা দেয়া নেই। দেয়াল ও ভবনের রং সাদামাটা এবং প্রায় একই ধরনের।
বড় শহরগুলোতেও দু’তলা বা তিন তলার বেশি উঁচু ভবন নেই। শুধু নির্দিষ্ট স্থানেই হাতে গোনা কিছু হাইরাইজ বিল্ডিং। এমনিতে গ্রাম এলাকার সব বাড়ি একতলা এবং একই প্যাটার্নের। বৈচিত্রের সৌন্দর্য্য না থাকলেও সরল ও অভিন্ন রূপের মাহাত্ম্য মনে প্রশান্তি ছড়ায়।
বলা হয়, বোখারা শহরের বয়স তিনহাজার বছর। হতে পারে, তবে খ্রিস্টপূর্ব হাজার বছর আগে বোখারার উল্লেখ ইতিহাস ও সাহিত্যে যেহেতু পাওয়া যায়। অতএব, কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর তো হবেই। মানে বৌদ্ধধর্মের সমবয়সী। এটি চীনার নির্মাণ করে বলে ইতিহাসের সূত্রে উল্লেখ আছে। তবে স্থানীয় লোকদের সাথে বিরোধে এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত হয়ে একসময় চীনারা বোখারা ছেড়ে চীনা ভূখন্ডে ফিরে যায়।
এরপর থেকে ইসলাম প্রচারিত ও বিজয়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত বোখারা ও তৎসংলগ্ন এলাকা স্থানীয় লোকদের হাতেই থাকে। যারা প্রকৃতিপূজা ও কুসংস্কারে নিমগ্ন ছিল। যোদ্ধা ও পরিশ্রমী জাতি। কৃষি, পশুপালন যাদের স্বাভাবিক পেশা। প্রতিভাধর মনীষীদের উর্বর ভ‚মিও এটি। আধ্যাত্মিকতা, বিজ্ঞান, দর্শন ও সাহিত্যের বহু বরপুত্র এ মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন।
প্রাচীনকাল থেকে বোখারা বাণিজ্য কেন্দ্র ও সময়ে সময়ে রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছে। যুদ্ধ বিগ্রহে বিধ্বস্ত এবং পুননির্মাণও এর ভাগ্যে বারবার ঘটেছে। রেশম, পশমী ও সুতি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। সিল্কের কার্পেট, শতরঞ্জি কাপড় বোখারার ঐতিহ্য। হস্তশিল্প, কারুকাজ, নকশার জন্যও বোখারার সুনাম স্বীকৃত।
ঐতিহাসিক সিল্করোড চীন থেকে ইউরোপের প্রবেশদ্বার পর্যন্ত বোখারার বুক চিরে প্রলম্বিত ছিল। তাতার, খাকান, মোঙ্গল জাতি মধ্যশিয়ায় বোখারাসহই তাদের কর্মকান্ড চালিয়েছে। চেঙ্গিস, হালাকু, তৈমুর, বাবর তাদের শাসন সমরকন্দ ও বোখারা ঘিরেই মজবুত বানায় এবং অতলান্তিক প্রতীচী প্রলম্বিত করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।