Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা আমলা!

দুই সিটিতে ফেয়ার নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ এবং দলের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটির নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন কৌশলে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী হলে জনগণের প্রকৃত মনোভাব বোঝা যায় না। যেহেতু সিটি নির্বাচন সরকারে প্রভাব ফেলবে না তাই এই নির্বাচনে জনমত যাচাই করা যেতে পারে। কিন্তু প্রশাসন যন্ত্র চায় না নিরপেক্ষ ভোট। তাদের শঙ্কা নিরপেক্ষ ভোট হলে তাদের বিপদের মুখে পড়তে হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে গত ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে গেলে সরকারের ওপর আকাশ ভেঙে পড়বে না। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আমরা বিএনপিকে স্বাগত জানাই। নির্বাচন প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ হোক। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা আশ্বস্ত করতে চাই নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশের এমন উন্নয়নের কারণেই জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। আমাদের দল সব সময় জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। সে কারণে জনগণ যাতে ভোট দিতে পাবে সেটা করা হয়েছে।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং এরপর খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়; সেই বিতর্ক দূর করতেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। আর জনগণর যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেটি করতে চায় আওয়ামী লীগ। তাদের সরকারি দলের প্রধান বাধা আমলা নির্ভর প্রশাসন। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সিটি নির্বাচন করতে চান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপির মেয়র প্রার্থীও জয়ী হন তাকে স্বাগত জানাবেন সরকারি দল।
বিএনপি টেস্ট কেস হিসেবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। ২০১৪ সালের পরে দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতিত্ব, ডাকাতি, রেজাল্ট ছিনতাই করে একটি দলের পক্ষে যে কাজ করছে সেটি জনগণের কাছে বারবার তুলে ধরতেই নির্বাচনে যাওয়া। সরকারি দলের নেতা কর্মীদের চেয়ে পুলিশ প্রশাসন এবং কমিশনের কর্মকর্তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না। সরকার ও সরকারি দল তাদের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। সরকার ও ইসির সেই রূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিএনপির।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ইনকিলাবকে বলেন, পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তা আমার জানা নেই। যাদের নামে ওয়ারেন্ট আছে তাদের গ্রেফতার করবেন। এর বাহিরে কিছু করছে আমার মনে হয় না। তার পর নির্বাচন এখনো শুরু হয়নি। অন্যায়ভাবে কাউকে হয়নারি করা হলে সেই কর্মকর্তার কিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, স¤প্রতি বিতকির্ত নির্বাচনের কারণে নির্বাচন পরিচালনা প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। আমাদের দেশে উন্নয়ন হচ্ছে নিঃসন্দেহে। জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাবে কি না এ নির্বাচনে দেখা যাবে। আমার মনে হয় সরকারকে এ বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত।

ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরবাসী যাতে ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে ইসি নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতি-নির্ধারকরা নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক দূর করতে জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য বলেন, সিলেট সিটি নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়ী হওয়ায় ওই নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়। কিন্তু খুলনা, রাজশাহী এবং বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন জনগণের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ তিন সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা বিজয়ী হন। এই নেতার মতে, ‘রাজধানীর মানুষের ভোটে যদি ঢাকার দুই অংশের কোনো একটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী জয়ী হন, তা আমাদের মেনে নিতে হবে। এর ফলে নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক দূর হবে।

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় সে ব্যাপারে হাইকমান্ডের প্রতি দলের ভেতর থেকে চাপ আছে। দুই অংশেই জিততে হবে, দলের নেতারা এমনটা মনে করেন না। যদি একটিতে বিএনপি জয়ী হয়, তাহলে তা মেনে নিতে হবে। নেতাদের এমন ভাবনা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ব্যক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
সম্পতি ধানমন্ডি কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নেতিবাচক রাজনীতির কারণে দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ বিএনপিকে ক্ষমতায় চায় না। তিনি বলেন, এই শতাংশের মাত্রা আরো বাড়বে। আসন্ন ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য বিএনপিকে স্বাগত জানান তিনি।

গত বুধবার চট্টগ্রামে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হবে। সঠিক নির্বাচন হবে। সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে। প্রতিযোগিতামূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নির্বাচন হবে। এখানে কারো আশঙ্কার কোনো কারণ নেই।

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি বারবার অনাস্থা প্রকাশ করলেও স্থানীয় ও সংসদ সদস্য নির্বাচনগুলোতে অংশ নিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা ছিল ন্যূনতম হলেও দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এবং সেটি সম্ভব হলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জনগণের সেবা করার সুযোগ পাবে। তবে তাদের সে আশার গুড়ে বালি দেয়া হয়েছে বলে মনে করেন তারা। ফলে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না ধরেই নিয়েছেন বিএনপি নেতারা। এর পরও তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান সরকার ও ইসিকে শেষ সুযোগ দেয়ার জন্য। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়ার কারণটা প্রমাণ করার জন্যই আমরা ২০১৮ সালে নির্বাচনে গেছি, আওয়ামী লীগের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, তা প্রমাণ করার জন্য গেছি। আজকেও প্রশ্ন এসেছে, আপনারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে গেছেন কেন? ওই একই কথা বলতে চাই, নির্বাচনে এ জন্য যাচ্ছি যে, এই কথা বারবার প্রমাণ করার জন্য যে আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা জানা গেছে, সরকারি মেকারিজমের কারণে পরাজিত হওয়া, হামলা-মামলার পরও নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়ার পেছনে দুটি কারণ মুখ্য। প্রথমত আর কত বছর প্রশাসনের কর্মকর্তারা রাজনৈতিক ফায়দা লটুবে তা দেখা। দ্বিতীয়ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখা ও কর্মসূচি পালনের স্পেস বের করা। রাজনৈতিক ফায়দার বিষয়টি খোলাসা করতে গিয়ে নেতারা বলেন, সরকার ও তার সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যত বেশি অনিয়ম করবে, জনগণের কাছে তত বেশি নেতিবাচক বার্তা যাবে এবং তাদের স্বরূপ উন্মোচন হবে এবং একটা সময় অবশ্যই জনগণ এই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে, রুখে দাঁড়াবে। দ্বিতীয়ত, মানববন্ধনের মতো নিরীহ কর্মসূচি করতে গেলেও এখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি নিতে হয়। ঢাকা মহানগরের নেতাকর্মীরা নিজ থেকে বড় ধরনের কর্মসূচি করতে পারেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৌরাত্ম্যের কারণে। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহানগরের নেতারা নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচি কিছুটা হলেও স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবেন। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বাধা এলেও সেটি জনগণের কাছে বেশি বেশি প্রচার হবে। সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে ভালোভাবেই নামার পরিকল্পনা বিএনপির। স্থায়ী কমিটির ইকবাল হাসাস মাহমুদ টুকু ইনকিলাবকে বলেন, ন্য‚নতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলে যেকোনো নির্বাচনে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। জনগণ তো দেখছে, বিচার নিশ্চয় তারা একদিন করবে।



 

Show all comments
  • Ahmed Moha ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৭ এএম says : 0
    Abar amladerke gali deyar jonne b n p Ke uskiya dicche ... e c hoilo mol are kew Na
    Total Reply(0) Reply
  • Shahid Islam ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:০৮ এএম says : 0
    এটা তাদের মনের কথা না।
    Total Reply(0) Reply
  • Anisur Rahman ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধিনে সুষ্ঠ নির্বাচন, এটা শুধু হাস্যকরই নয়,বেয়াক্কেলের উক্তিও বটে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rafiqul Islam ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১০ এএম says : 0
    রাতের অন্ধকারে না কি দিনের আলোয়???
    Total Reply(0) Reply
  • Meton Robi Das ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    এর মানে আগেরগুলো নিরপেক্ষ হয়নি। চোর কেমনে ধরা খায়!!
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Awal Tipu ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    ভোট রাতে হবে না দিনে।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Heru Prodhan ৪ জানুয়ারি, ২০২০, ১:১১ এএম says : 0
    ভোট রাতে না দিনে, জিবিত লোক না মৃত্যু লোকও ভোট দিবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ