Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিলুপ্তির পথে চৌদ্দগ্রামের কাঁচবালি

মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:২৬ এএম | আপডেট : ১২:২৮ এএম, ৩ জানুয়ারি, ২০২০

কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বিখ্যাত কাঁচবালি এখন বিলুপ্তির পথে। কাঁচবালি উত্তোলনের স্থানে কলকারখানা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন নতুন নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বালি উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয় প্রবীন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এই খনি থেকে বালি উত্তোলন শুরু করা হয়। তখন পাকাঘর ও সরকারি যে কোনো স্থাপনা নির্মাণে এই বালি ব্যবহার করা হত। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় শ্রমিকরা গরুর গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে এ বালি আনা নেয়ার কাজ করত। সভ্যতা ও যুগের বিবর্তনে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে একটা সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, এ বালি কাঁচ ও সিলিকন তৈরির কাঁচামাল। সেই থেকে এ বালি চৌদ্দগ্রামসহ সারাদেশে কাঁচবালি বা সিলিকন বালি হিসেবে পরিলক্ষিত হয়। তখনকার সময়ে জেলা কালেক্টর অফিসার ও রাজস্ব কর্মকর্তা নির্দিষ্ট স্থানের এই বালি খনিটি ইজারা দিত। উত্তোলনকৃত বালি দ্বারা দেশ বিদেশে গøাস তৈরি হত। ফলে সরকারি কোষাগারে মোটা অঙ্কের রাজস্ব জমা পড়ত। কালের বিবর্তনে একবিংশ শতাব্দিতে এসে এই খনি থেকে আর কাঁচবালি উত্তোলিত হয় না। বর্তমানে এটি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাঁচবালি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদগুলোর ১টি। যা সাধারণত কাঁচ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশের পিএইচপি গøাস ফ্যাক্টরিতে সবচেয়ে বেশি ৭১% ভাগ কাঁচবালি ব্যবহার করা হয়। কোয়ার্টজ কাঁচশিল্প ছাড়াও সোলার প্যানেলের সিলিকনের চিপ তৈরিসহ এ ধরনের বিভিন্ন কাজে কাঁচবালি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, দেশ বিভাজনের পর থেকে এ খনি থেকে বালি উত্তোলন করত উপজেলার চিওড়া কাজী বাড়ির কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর একান্ত সহযোগি বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মরহুম কাজী আফতাবুল ইসলাম গেদু মিয়া। তিনি তৎকালীন কালেক্টর অফিসারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে বালি উত্তোলন করে চট্টগ্রামের ওসমানিয়া গ্যাস ফ্যাক্টরীতে চালান করতেন। তার মৃত্যুর পরে স্থানীয় কর্তা-ব্যক্তিরা বিভিন্ন সরকারের আমলে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এ বালি উত্তোলন করত এবং রাতের আঁধারে চোরাই পথে তা পাচার করে দিত। ২০০৫ সালে ভারত সরকার সীমান্তবর্তী এলাকায় নো-ম্যান্স ল্যান্ডে কাটা তারের বেড়া নির্মাণ করলে এ খনিজ সম্পদটি ধ্বংশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে এই খনি থেকে বালি উত্তোলনের চেষ্টা করেও এর দেখা মিলেনি। ভূ-তত্ত¡বিধ ও বিশেষজ্ঞদের মতে খনিটির অবস্থান ছিল রগুনন্দন পাহাড়ের পাদদেশে। বাংলাদেশের লাইফ-লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে উত্তরে-দক্ষিণে প্রায় দশ কিলোমিটার জুড়ে এই খনিটি বিদ্যমান ছিল।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, বালি খনির মুখটি ভারতে অবস্থান পরিবর্তন করে, যার ফলে অনায়াশেই সে দেশের সরকার এই বালি উত্তোলন করছে। বর্তমানে বালি উত্তোলনের স্থানটিতে বড় বড় স্থাপনাসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন নতুন নতুন আবাসিক ভবন নির্মিত হওয়ায় কাঁচবালি সম্পদটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এখানকার এলাকা ঘুরে দেখা মেলেনি কোনো বালি শ্রমিকের।
সীমান্তের ওপারে ত্রিপুরা রাজ্যের এক বাসিন্দার সাথে কথা বলে জানা যায়, কাঁচবালি এখন তাদের দখলে। অথচ কিছুদিন আগেও এখানকার বালি শ্রমিকরা মেশিনের সাহায্যে বালি উত্তোলন করে তারপর ১টি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা শোধন বা পরিস্কার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাত।
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কলকারখানা ও ব্যক্তি মালিকানাধীন নতুন নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁচবালি উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত আসলে উপজেলা প্রশাসন সকল প্রকার সহযোগিতা করবে’।



 

Show all comments
  • abdul jalil choudhury ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:২০ পিএম says : 0
    বাংলাদেশের উন্নয়নে চৌদ্দগ্রামের সম্ভাবনাময় প্রকল্পঃ(৩) সিলিকা বালু উত্তোলন, বাজারজাতকরন ও শ্রমিক ওয়েলফয়ার। এক সময় ছোট বেলায় দেখেছি ফেনী- কুমিল্লার রাস্তার দু'পাশে অনেক উঁচু উঁচু সাদা বালুর তুব বা ডিপো।এছাড়া ও বর্ষাকালে পাহাড়ি ছরা দিয়ে পানি নামার সময় প্রচুর সাদা ও লালচে বালির পলেস্তারা পড়তো। পানি নেমে গেলে মানুষরা তা সংগ্রহ করে রাস্তায় রাখতো ও বিক্রয় করতো রাস্তার কাজে, ইমারত ও গ্লাস কারখানার লোকদের কাছে।অনেক সময় ধানী জমিন থেকেও বালু উত্তোলন করতো।শ্রমিকরা মৌসুমী এ কাজটি দলবদ্ধ ভাবেই করতো তবে তাঁদের কোন সমিতি ছিলনা।পরবর্তীতে ফ্লোট গ্লাস টেকনোলজি আসায় এ বালু যাওয়া শুরু করে নাসির ফ্লোট গ্লাস ও পি এইচ পি কারখানায়।পাকিস্তানের শেষ আমল ও বাংলাদেশের শুরু ও মাঝামাঝি সময় পরযন্ত ওসমানিয়া গ্লাস কারখানায়, কোহিনুর কেমিকেলস্ ও বিভিন্ন সাবানের কারখানায় যেত।সাবান তৈরীতে সিলিকার পানি যুক্ত ফেনা লাগতো।হাজার হাজার মৌসুমী শ্রমিক এ কাজ করতো।তবে কাঁচা মাল থাকা স্বত্তেও চৌদ্দগ্রামে কোন কারখানা গড়ে উঠেনি।১৯৭৪ সনের দিকে সাদা বালুর খনি হতে বালু তুলতে গিয়ে কয়েকজন শ্রমিক মাঠি চাঁপা পড়ে মারা যাওয়ায় কোন ক্ষতিপূরন না পাওয়ার কারনে শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে সমিতি করতে গেলে সুবিদাভোগী মহল কাজটি হতে দেয়নি।পাহাড়ি ছরা ও কাকরি নদীর পানির বহতার উপর এ সম্পদের ঠিকে থাকা নির্ভর করছে।এ দিকটি সুনজরে আসলে অনেক মানুষের কর্ম সৃষ্টি হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাঁচবালি
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ