Inqilab Logo

সোমবার ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১, ০১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তরে তাবিথ দক্ষিণে ইশরাক

ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০২ এএম

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। উত্তর সিটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও দক্ষিণে অবিভক্ত ঢাকা সিটির সর্বশেষ মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দুই সিটিতে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এর আগে বিকাল চারটায় দলের মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. আসাদুজ্জামান রিপন, তাবিথ আউয়াল ও ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। সাক্ষাৎকার বোর্ডে বিএনপি মহাসচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলান খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
২০১৫ সালের উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হকের কাছে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। যদিও ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অনিয়মের অভিযোগে তিনি ভোট বর্জন করেন। অন্যদিকে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন এবারই প্রথম কোন নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
এর আগে একই দিন বিকাল ৪টার দিকে নয়াপল্টনের কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে এক লাখ টাকা জামানতসহ মনোনয়নপত্র জমা দেন উত্তরের জন্য দলের বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ও তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণের ইশরাক হোসেন। কয়েক হাজার নেতা-কর্মী সমর্থকদের মিছিল নিয়ে তারা দলীয় কার্যালয়ে এসে এই ফরম জমা দেন। মিছিলে নেতা-কর্মীদের হাতে খালেদা জিয়ার মুক্তির প্লেকার্ড ছিলো।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। বিএনপি নির্বাচনকে বির্তকিত করার জন্য অংশগ্রহণ করছে শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন না সরকারি দলের এমন অভিযোগের এবিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, নির্বাচন আমাদের, জনমত আমাদের। নির্বাচন থেকে আমরা সরবোই না। আমরা শেষ পর্যন্ত, শেষের পরের থেকেও লড়াই করে নির্বাচনের ফলাফলই ছিনিয়ে আনবো না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি করার পরেই আমরা মাঠ থেকে ফেরত যাবো।
ইশরাক হোসেন বলেন, যদি কেউ বলে থাকে যে, নির্বাচনকে আমরা বিতর্কিত করা চেষ্টা করছি- এটা মোটেই ঠিক না। আমরা কেনো, গোটা দেশবাসী দেখেছে যে, ৩০ বা ২৯ তারিখ কি ধরনের নির্বাচন বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়েছে। সেটা কোনো নির্বাচন হয় নাই। তবে আমরা নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি বুঝে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না তাই সরে যাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন উত্তরের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার পর তিনি বলেন, এই নির্বাচনে যাওয়ার কোনো অর্থ নাই। কারণ আমাদের পার্টি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে। উনাকে এখন পর্যন্ত আমরা মুক্ত করতে পারি নাই। শেখ মুজিবুর রহমান যখন জেলে ছিলো তখন তাকে মুক্ত করেই গোল টেবিল বৈঠকে যাওয়া হয়েছিলো।
তিনি বলেন, আমরা জাতীয় নির্বাচনের সময় এরকম অনেক কিছু বলতে পারতাম, করতে পারতাম কিন্তু আমাদের নেত্রীকে ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে গিয়েছি। কোনো লাভ হয় নাই, আমাদের দাবি পূরণ হয় নাই এবং নির্বাচন কী হয়েছে তা আপনারা সবাই জানেন। এই সরকার এবং এই দল যখন ক্ষমতায় থাকবে এবং এর অধীনে যখন নির্বাচন কমিশন থাকবে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মনোনয়ন পাওয়া এর মধ্যে আমি কোনো ফারাক দেখি না। আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দিচ্ছে না, তার সুচিকিৎসা হচ্ছে না তার প্রতিবাদে আমাদের পার্টির এই নির্বাচন ছেড়ে দেয়া উচিত।
রিপন বলেন, আমি নিজে আজকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। তবে আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, এই নির্বাচনে যেয়ে লাভ হবে না। বরং অবৈধ সরকারকে আরো বৈধ্যতা প্রদান করা হবে। এটা ৩০ তারিখে যে নির্বাচন হয়েছে ওই জাতীয় আরেকটি নির্বাচনের খেলা হবে। নির্বাচনের নামে প্রহসন হবে। এই প্রহসনের পার্ট হতে আমি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী না। যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে দল করি, আমি দলের শৃঙ্খলা ও সিদ্ধান্ত মানি। সেজন্য আমি মনোনয়ন নিয়েছি, মনোয়নপত্র জমা দিয়েছি। পরে সাক্ষাতকার শেষে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড তাকে মনোনয়ন দেয়নি।
নিজের ভাবনার কথা উল্লেখ করে তাবিথ আউয়াল বলেন, আমরা দেশবাসীকে দেখিয়ে দিতে চাই, নগর উন্নয়নে নতুন প্রজন্মকে এখন দরকার, মেধাবীদেরকে দরকার। ঢাকা শহর বর্তমানে প্রত্যকটা ইনডেক্সে নিম্নস্তরে আছে। বাসস্থান, পানি, আবহাওয়া দুষণ -এসব থেকে আমরা চাচ্ছি ঢাকাবাসীকে মুক্ত করতে। এই মুক্তির সাথে শুধু আমাদের জীবনের মুক্তি না, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্যও পুরো দেশ বসে আছে, আন্তর্জাতিক মহলও তাকিয়ে আছে। এই আন্দোলন থেকে আমরা সরে আসি নাই।
নির্বাচনের পরিবেশ কেমন দেখছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যার কাছে যাচ্ছি আমাকে প্রশ্ন করছে-ভোট দিতে পারবেন কিনা, ভোট দিতে পারলে ভোট গণনা হবে কিনা, ভোট গণণা হলেও ভোট সঠিকভাবে প্রকাশ করা হবে না। আমি চাইব, অবিলম্বে ইভিএম থেকে উনার সরে যাক। এই দুর্নীতিগ্রস্থ মেশিনের কোনো দাম নাই এই মুহুর্তে।একটা বিতর্কিত নির্বাচন করার কোনো দরকার নাই এই মুহুর্তে। আমরা চাইব গণমাধ্যমকে মুক্ত করে দেয়া হোক, বিশেষ করে সিকিউরিটি এ্যাক্ট বাতিল করে দিতে যাতে করে আগামী নির্বাচনে ভোট সেন্টারের ভেতরে গিয়ে সব কিছু প্রকাশ করতে পারে।
ইশরাক হোসেন বলেন, আমার এই নির্বাচন কমিশনের প্রতি কোনো আস্থা নাই। গত ২৯ বা ৩০ তারিখ এই কমিশনের অধীনে কি নির্বাচন হয়েছে। আমি তাদের থেকে খ্বু বেশি আশা করতে পারছি না। তারপরেও যেহেতু আমরা একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রয়েছি, সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছি। নিজের ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি এলাকায় বিপুল সাড়া পাচ্ছি। আপনারা জানেন আমার বাবা (সাদেক হোসেন খোকা) দীর্ঘ সময় অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন প্রায় সাড়ে ৯ বছর/১০ বছর। আমি উনার কাছে প্রায় শুনতাম যে নগরীর কি কি সমস্যা রয়েছে। মেট্রোপলিটন গর্ভামেন্ট অথবা নগর সরকারের দাবি জানাতে চাই। কারণ একটি সিটি করপোরেশনে যে অথোরেটি দেয়া হয়েছে ঢাকা শহরের তার পক্ষে নাগরিক যে সমস্যাগুলো রয়েছে এবং নাগরিকদের জীবনমানের যে প্রতিজ্ঞা তারা করছে সেটা তাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ তাদের সেই ক্ষমতা অথবা আর্থিকভাবে সেই ক্ষমতা তাদের নাই।
কাউন্সিলদের চূড়ান্ত করার নিয়ম কী জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কাউন্সিলর বাছাই করার জন্য তিনটি টিম কমিটি গঠন করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই সেই টিম করবেন। মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের মনোনয়নপত্র জমা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের নেতৃত্বে উত্তর এবং দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালামের নেতৃত্বে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রত্যাশীদের বাছাইয়ের জন্য তিনটি কমিটি করা হয়েছে বিএনপি। ঢাকা সিটি করপোরেশনের দক্ষিণে কাউন্সিলর পদে ২২০ টি, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬০টি এবং উত্তরে কাউন্সিলর পদে ১৬২টি এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিল পদে ৩৪টি মনোনয়ন ফরম জমা পড়েছে।##



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিটি করপোরেশন নির্বাচন

২৯ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ