বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
মহানবী হযরত মোহাম্মাদ সা. নিখিল সৃষ্টির জন্য নবী ও রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছেন। এই ব্যাপকতা এ জন্য যে, তার দ্বীন ইসলাম যেন অন্যান্য দ্বীনের উপর বিজয়ী ও মর্যাদাপ্রাপ্ত হয় এবং অন্যসব বাতিল ও রহিতকৃত দ্বীনগুলো নিশ্চিহ্ন, পরাভূত ও লাঞ্ছিত হয়।
তারপর তিনি যখন আল্লাহর মনোনীত ও পছন্দনীয় দ্বীন ইসলাম প্রচার শুরু করলেন, তখন তার আহ্বানে নানা ধরনের লোক প্রবেশ করল। ফলে এ ব্যাপারটি অপরিহার্য হয়ে দাঁড়াল যে, যারা তার দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণরূপে মেনে নিলেন আর যারা মানলেন না তাদের মাঝে সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য ও পার্থক্য সৃষ্টি হোক। তারপর এটা অনুধাবন করাও জরুরি হয়ে দেখা দিলো যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়ে আসা হেদায়াতের আলো কাদের অন্তরে প্রবেশ করে তা উদ্ভাসিত করল। আর যাদের অন্তরে সেভাবে হেদায়াতের আলো প্রবেশ করল না তাদের উভয়ের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা হোক।
এই দৃষ্টিকোণ থেকে ঈমানকে দু’ভাগে বিভক্ত করে বিশ্লেষণ করা যায়। যথা : (ক) এক শ্রেণীর ঈমানের ওপর পার্থিব জীবনের জন্য নির্ধারিত বিধানাবলী নির্ভরশীল। এর অর্থ হলোÑ জান-মালের হেফাযত হওয়া এবং আনুগত্য প্রকাশের প্রকাশ্য ব্যাপারগুলো তার ভিত্তিতে সুশৃঙ্খল হওয়া। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মুখ নিঃসৃত বাণীও এ কথারই সাক্ষ্যবহন করছে। তিনি স্পষ্টতঃই বলেছেন, আমাকে ততক্ষণ জিহাদ চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সাক্ষ্য না দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই ও মোহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা’আলার রাসূল এবং নামাজ কায়েম করে ও যাকাত দেয়। যখন তারা এ কাজগুলো করবে তখন তাদের জান ও মাল আমার হেফাযতে থাকবে, যদি না ইসলামের কোনো বিধি-বিধান তাদের ওপর আরোপিত হয়।
এ অবস্থায় তাদের আসল হিসাব-নিকাশ আল্লাহ তা’আলার ওপর ন্যস্ত থাকবে। এ সম্পর্কে তিনি এ কথাও বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের নামাজ আদায় করল, আমাদের কিবলার দিকে মুখ ফিরাল এবং আমাদের জবেহ করা জীব ভক্ষণ করল সে মুসলমান এবং তার জন্য আল্লাহ তা’আলা ও তার রাসূলের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। সুতরাং তোমরাও আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত দায়িত্বে খেয়ানত করো না। তিনি আরও বলেছেন, তিনটি কথা ঈমানের ভিত্তি। যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করে, তার থেকে বিরত থাকে, গোনাহের জন্য তাকে কাফের আখ্যায়িত করো না এবং কোনো কাজের জন্য তাকে ইসলাম থেকে খারিজ করো না। অতএব এই শ্রেণীর ঈমানের বিপরীত ঘটলে কুফুরী লাজেম হয়, কুফুরী চলে আসে।
(খ) দ্বিতীয় শ্রেণীর ঈমান হলে পারলৌকিক জীবনের বিধি-বিধানের ভিত্তি। এ কথার অর্থ হল, ওই সকল বিধান যা নাজাত প্রাপ্তি ও মর্যাদা লাভ সংশ্লিষ্ট বিধান। এসব কিছু পরিপূর্ণ আকীদা, নেক আমল ও উত্তম যোগ্যতা নিয়ে গঠিত। সময় ও অবস্থা ভেদে এটা কম ও বেশি হয়ে থাকে। তবে শরীয়ত প্রণেতার রীতি হলো এই যে, এর সব কিছুকেই তিনি ঈমান নামে অভিহিত করেছেন, যেন সকলেই ঈমানের অংশগুলো সম্পর্কে পরিপূর্ণরূপে সচেতন হতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সা.) এ দিক-নির্দেশনাই প্রদান করেছেন: ‘যার ভেতর আমানতদারী নেই তার ঈমান নেই এবং যে ব্যক্তি প্রতিজ্ঞা রক্ষা করে না তার দীন বা ধর্ম নেই।’ অন্য এক স্থানে তিনি বলেছেন, ‘মুসলমান তাকেই বলা যাবে যার জিহবা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে।’
বস্তুতঃ ঈমানের বহু শাখা রয়েছে। এর উদাহরণ হলো সেই গাছ যার কা-, ডাল-পালা, পাতা, ফুল ও ফল রয়েছে। যদি তার ডাল পালা কেটে ফেলা হয়, পাতাগুলো ঝরে যায় এবং ফলগুলো ছিড়ে ফেলা হয়, তাহলে একে ঠুঁটো গাছ বলা হয়ে থাকে। আর যখন তার কা-ও উপড়ে ফেলা হয় তখন পুরো গাছটাই নিঃশেষ হয়ে যায়। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং ইরশাদ করেছেন. ‘সে ব্যক্তিই ঈমানদার যার অন্তর আল্লাহর নাম শুনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়।’ এতদসংক্রান্ত ব্যাপার যেহেতু একই ধরনের নয়, সেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) এগুলোকে দু’টো স্তরে বিন্যাস করেছেন।
প্রথম স্তরে রয়েছে আরকান যা ঈমানের সর্বোত্তম অংশাবলী। এজন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ইসলামের ভিত্তি হলো পাঁচটি। ১. সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মা’বুদ নেই ও হযরত মোহাম্মাদ (সা.) তার বান্দাহ ও রাসূল। ২. নামাজ কায়েম করা। ৩. যাকাত আদায় করা। ৪. হজ করা ও ৫. রমাযান মাসের রোজা রাখা।
আর দ্বিতীয় স্তরে রয়েছে ওই সব শাখা যা প্রথম স্তর ছাড়া আছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ঈমানের সত্তরের অধিক শাখা রয়েছে। সর্বোত্তম শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা ও সর্বনিম্ন শাখা রাস্তা থেকে কাঁটা সরানো এবং লজ্জা ঈমানের অংশ বিশেষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।