বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
ঈমানদারদের জন্য প্রতি পদে পদে শঙ্কা ও ভয় রয়েছে। গত নিবন্ধে আমরা মৃত্যুর সময়ের আশঙ্কার কথা আলোচনা করেছিলাম। আশঙ্কা রয়েছে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন নিয়েও। পরকালের বিচারের মাঠে যখন ছোট-বড় গোপন-প্রকাশ্য ভালো-মন্দ সব আমল উপস্থিত থাকবে, সে বিচারে আমার গন্তব্য কোথায় নির্ধারিত হয়! সে বিচারের মাঠে তো আমার হাত, আমার পা, আমার চোখ-কান আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা, ‘কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করলে সে তা দেখবে। কেউ অণু পরিমাণ অসৎকর্ম করলে সে তাও দেখবে।’ (সূরা যিলযাল (৯৯) : ৭-৮)।
‘যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে, সেদিন তাদেরকে বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের সন্নিকটে পৌঁছবে তখন তাদের কান, চোখ ও চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।’ (সূরা হামীম আস-সাজদা (৪১) : ১৯-২০)। নিশ্চিন্ত থাকার তাই কোনো সুযোগ নেই।
আল্লাহ তায়ালা একদিকে যেমন আমাদেরকে আশার বাণী শুনিয়েছেন এভাবে, ‘বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। সন্দেহ নেই, আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা যুমার (৩৯) : ৫৩)।
আবার তিনিই জানিয়ে দিয়েছেন পরকালে অপরাধীদের উদ্দেশে কী বলা হবে, ‘আর হে অপরাধীরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও। হে বনি আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিইনি, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করো না, কারণ সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রুু? আর আমারই ইবাদত করো, এটাই সরল পথ। শয়তান তো তোমাদের বহু দলকে বিভ্রান্ত করেছিল, তবুও কি তোমরা বুঝনি? এই হলো সে জাহান্নাম, যার কথা তোমাদের বলা হয়েছিল। আজ তোমরা তাতে প্রবেশ করো, কারণ তোমরা তা অবিশ্বাস করেছিলে। (সূরা ইয়া-সীন (৩৬) : ৫৯-৬৪)।
তিনি যেমন রাহমানুর রাহীম- অফুরন্ত দয়ার মালিক, তিনি যেমন গাফুরুন হালীম- অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও সহনশীল, তেমনি তিনি কাহহার- পরাক্রমশালী, তিনি ‘যুনতিকাম’- শাস্তিদাতা। তাঁর শাস্তি সম্পর্কে কুরআনের ভাষ্য- ‘সন্দেহ নেই, আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।’ (সূরা হাশর (৫৯) : ৭)। ঈমানদার বান্দাকে আল্লাহ তায়ালা আশার বাণী শুনিয়েছেন।
পাপ যত বেশিই হোক, যত জঘন্যই হোক, খাঁটি মনে তাওবা করলে সে পাপরাশিও পুণ্যে পরিবর্তিত হওয়ার আশাও আমাদের দিয়েছেন। দেখুন, ‘যারা তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের পাপগুলো পুণ্য দিয়ে পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সূরা ফুরকান (২৫) : ৭০)।
শুধু ক্ষমা পেলেই যেখানে আমরা যথেষ্ট প্রাপ্তি বিবেচনা করতাম, সেখানে তিনি পাপগুলোকে পুণ্যে পাল্টে দেয়ার আশাও দিচ্ছেন! এমন দয়া ও রহমতের অনেক আশার বাণী শুনিয়েছেন আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও। কিন্তু একটু লক্ষ করলেই আমরা দেখব, এসব আশার বাণীতে কিছু শর্তও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এসব শর্তে উন্নীত হতে পারলেই না ঘোষিত সেই রহমত ও দয়া পাওয়া যাবে।
উপরোক্ত আয়াতটিতে বলা হচ্ছে তাওবা, ঈমান ও নেক আমলের কথা। অর্থাৎ পাপ ছেড়ে খাঁটি মনে তাওবা করতে হবে, ঈমানবিরোধী সব কর্মকান্ড পরিহার করতে হবে আর সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে নেক আমল। এখন কথা হলো, যে আমল আমরা করছি, তার কতটুকু আল্লাহ পাকের দরবারে কবুল হচ্ছে- কে জানে? যে তাওবা করলাম, তার কতটুকু আল্লাহ কবুল করেছেন- কে বলতে পারে? তাই নিশ্চিন্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।