পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নয়া নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় গতকাল ফের কলকাতায় মিছিল করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মিছিলের আগে ও পরে সমাবেশ থেকে সিএএ-এনআরসি নিয়ে বিঁধলেন বিজেপি-কে। পাশাপাশি ক্রমাগত হুমকি, বাধার পরও নাগরিক আইন বিরোধী আন্দোলনের জন্য দেশের ছাত্র-যুব সমাজকে সাধুবাদ জানান তৃণমূল নেত্রী। শিক্ষার্থীদের নিশানা করলে ‘দেশের মানুষ ভালো ভাবে নেবে না’ বলে হুঁশিয়ারিও দেন গেরুয়া শিবিরকে। শুধু তাই নয়, নিজের উদাহরণ দিয়ে বোঝালেন সাধারণ মানুষকে এনআরসি নিয়ে কতটা বিপদে পড়তে হতে পারে।
এদিন মিছিল শেষের জমায়েতের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আমাকে যদি মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দিতে বলা হয়, আমি দিতে পারব না। মা-বাবার জন্মদিন কবে, জানিই না। মৃত্যুদিনটা জানি।’ তার দাবি, যেভাবে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে, সেভাবে নাগরিকত্বের প্রমাণ দেয়া বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। সেই প্রেক্ষিতেই অত দিনের পুরনো নথি তার কাছেই নেই, সাধারণ মানুষের কাছে কীভাবে থাকবে? প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মিছিলের আগে সমাবেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলব, কাউকে ভয় পাবেন না। সিএএ-এনআরসির বিরুদ্ধে লড়াই করা জামিয়া মিলিয়া, আইআইটি-কানপুর এবং অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি আমরা। আর বিজেপি-কে সাবধান করব, আগুন নিয়ে খেলবেন না।’ তার অভিযোগ, এনআরসি-সিএএ বিরোধী বিক্ষোভে সামিল শিক্ষার্থীদের ক্রমাগত ‘হুমকি’ দিচ্ছে বিজিপি।
অন্যদিকে, কর্নাটকে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভে নিহতদের পরিবারকে কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। আগে নিহত ২ জনের পরিবারের জন্য ১০ লাখ ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। ইয়েদুরাপ্পার এহেন ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা। গতকাল তিনি বলেন, ‘কর্নাটকে বিজেপির এক নেতা এই ধরনের মন্তব্য করছেন।’
তার দলের তরফে মেঙ্গালুরুতে সিএএ-বিক্ষোভে নিহতদের ‘পরিবার প্রতি ৫ লাখ রুপি দেয়া হবে’ বলেও ঘোষণা করেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মনে রাখবেন আপনি একা হিন্দু নন এদেশে।’ সেইসঙ্গে বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কেও বিজেপি একেবারেই ওয়াকিবহাল নয় বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। বলেন, ‘বাংলার সংস্কৃতি যারা জানেন না, তারা এসব কথা বলেন। আমি তো সব রাজ্যকেই ভালবাসি।’
উত্তর প্রদেশে ১৩০ জনকে ক্ষতিপূরণের নোটিশ!
সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর প্রদেশের বিস্তৃত অঞ্চলে। নষ্ট হয়েছে বহু সরকারি সম্পত্তি। তারই ভিত্তিতে উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন জেলার প্রশাসনের তরফে মোট ১৩০ জনের বিরুদ্ধে রিকভারি নোটিশ জারি করা হয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে, তাদের জন্যে যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। তা না দিলে, যত সম্পত্তি আছে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে।
বুধবার এই সরকারি নোটিশ ধরানো হয় রামপুরের ২৮ জনকে, সাম্ভালের ২৬ জনকে, বীজনোরের ৪৩ জনকে এবং গোরক্ষপুরের ৩৩ জনকে। নোটিশে বলা হয়েছে, রামপুরে প্রায় ১৪.৮ লাখের সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে, সাম্ভালে নষ্ট হয়েছে ১৫ লাখের সম্পত্তি এবং বীজনোরে ১৯.৭ লাখের ক্ষতি হয়েছে। গোরক্ষপুরে ঠিক কত টাকার ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি প্রশাসনিক কর্মীরা।
রামপুরের জেলা শাসক অনুজানেয় কুমার সিং জানিয়েছেন, ‘ভিডিয়োয় যেসব লোককে দেখা গেছে পাথর ছুঁড়তে অথবা সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করতে, তাদেরই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদের এক সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছে উত্তর দেয়ার জন্যে। যে ২৮ জনকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে কয়েক জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ সাম্ভালের জেলা শাসক অবিনাশ কৃষ্ণন সিং জানিয়েছেন, ‘আমরা ২৬ জনকে নোটিশ পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন পুলিশের হেফাজতে।’
নিহত দুই মুসলিম ব্যক্তির বাড়ি যাওয়া এড়ালেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী
উত্তরপ্রদেশেরবিজনৌর জেলায় গত শুক্রবার নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ আন্দোলনে আহত এক ব্যক্তির বাড়িতে যাওয়ার সময় বিতর্কে জড়ালেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি মন্ত্রী কপিল দেব আগরওয়াল। বিতর্কের সূচনা আন্দোলনে দুই নিহত মুসলিম ব্যক্তির বাড়ি ওই নেতা না যাওয়ায়। এদিন তিনি ওমরাজ সাইনির বাড়িতে দেখা করতে যান। ওমরাজ ওই প্রতিবাদ আন্দোলনে আহত হন। উত্তরপ্রদেশের ওই শহরে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাননি কপিল দেব।
ওমরাজ সাইনি ও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর বিজনৌরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কপিল দেব আগরওয়াল উপস্থিত হলে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন তিনি ওই দুই নিহত মুসলিম ব্যক্তির বাড়ি গেলেন না। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, ‘সরকার বলে ‘সব কে সাথ, সব কা বিকাশ। নেহতৌরে আপনি ওমরাজ সাইনির বাড়িতে গেলেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু এরপর তিনি মৃত দুই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গেও দেখা করেন। এঁদের মধ্যে একজন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। এভাবে ‘সব কে সাথ, সব কা বিকাশ’ কী করে হবে?’
উত্তরে ওই মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কেন দাঙ্গাবাজদের বাড়ি যাব? আমার কথা শুনে নিন। যারা দাঙ্গা বাধায় তারা সমাজের অংশ হয় কী করে? কেন আমি সেখানে যাব? এটা হিন্দু-মুসলিমের ব্যাপার নয়। আমি কেন দাঙ্গাবাজদের কাছে যাব?’
ওমরাজের পরিবারে দাবি, ওমরাজ কোনও হিংসায় জড়িত নন। তিনি মাঠ থেকে ফিরছিলেন। তখনই তার গায়ে গুলি লাগে। নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দেশের বহু অঞ্চলে বিপুল প্রতিবাদের ঘটনা ঘটেছে।
জয় শ্রীরাম বলে স্টান গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ
ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের পুলিশ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ছাত্র বিক্ষোভের সময় লাগামহীনভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে একটি স্বাধীন তদন্তকারী দল। ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের সময় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সহিংসতা ঘটে, সেই সময় পুলিশের বিরুদ্ধে বর্বর আচরণ করার অভিযোগ করে এ দলটি। স্বাধীন তদন্তকারী দলে ছিলেন- আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং শিক্ষাবিদরা।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমটি জানিয়েছে, ছাত্রদের ব্যাপক মারধর করার সময় পুলিশের মুখে জয় শ্রীরাম ধ্বনি শোনা গেছে। ছাত্রদের ওপরে ব্যবহার করা হয়েছে ‘স্টান গ্রেনেড’- যা সাধারণত সন্ত্রাসী হামলার সময় করা হয়ে থাকে। একজন ছাত্রের হাত কেটে কেটে ফেলতে হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, ছাত্ররাই প্রথমে নিরাপত্তা বাহিনীকে হামলা করেছিল এবং তারা ‘ন্যূনতম’ শক্তি প্রয়োগ করেছে শুধু ‘আত্মরক্ষার’ স্বার্থে। ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন স্থানে বুধবারও বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এ মাসের প্রথম দিকে পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনটিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়ার প্রক্রিয়া দ্রুততর করার কথা বলা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে হাজার হাজার লোক বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সমাবেশ করে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ বলেন, তার সরকার ওই রাজ্যে কখনই এ আইন প্রয়োগ করবে না। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর সংঘটিত ওই পুলিশি বর্বরতার তদন্তের জন্য ১৭ তারিখে সেখানে গিয়েছিল একটি তথ্য অনুসন্ধানী দল বা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম। তারা বলছে, বিক্ষোভ শুরু হতেই প্রায় ২১ হাজার শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়। তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে পুলিশ। ওই তথ্যানুসন্ধানী দলের অন্যতম সদস্য, সাবেক আমলা ও মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা যখন ঘটনার দুদিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাই, চারদিকে ধ্বংসের ছবি। আমরা জানতে পারি যে, একদিনের মধ্যে ২১ হাজার ছাত্রকে হোস্টেল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। সূত্র : এনডিটিভি, বিবিসি, টাইমস নাউ, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।