বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
অদৃশ্য-অশরীরী শক্তি বলতে জ্বিন-পরী, দেও-দৈত্য এবং ভ‚ত-প্রেত ইত্যাদিকে বুঝিয়ে থাকে। মানুষের ন্যায় জ্বিন জাতির ওপরও ইসলামী শরিয়ত আরোপিত। তাই হযরত মোহাম্মদ (সা.) জ্বিন জাতির জন্যও ছিলেন নবী-রাসুল। পবিত্র কোরআনের ২৬টি সুরায় শতাধিকবার জ্বিনের কথা নানা আঙ্গিকে উল্লেখ করা হয়েছে এবং বহু হাদিসেও জ্বিনের নানা দিকের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। বাস্তবক্ষেত্রে এ অদৃশ্য শক্তির দুশমনির চিত্র আরবিসহ বিভিন্ন ভাষার বহু গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে এবং ওদের হামলা হতে আত্মরক্ষার নানা তদবির উপায়ও বর্ণিত হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। জ্বিন-পরীর নানা বাস্তব ঘটনা ও বিচরণ তৎপরতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ওদের গতিবিধি, বিচরণ, অবস্থান ইত্যাদি প্রসঙ্গে নানা বিবরণ রয়েছে।
মানুষের মধ্যে যেমন শ্রেণীভাগ রয়েছে, জ্বিন-পরী ও শয়তানের মধ্যেও অনুরূপ শ্রেণীবিভাগ বিদ্যমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি হাদিসে জ্বিন জাতির শ্রেণিবিন্যাস করেছেন, যাতে এ অদৃশ্য শক্তির সকল প্রকার অন্তর্ভুক্ত। তিনি বলেছেন: ‘জ্বিন জাতি তিন শ্রেণীতে বিভক্ত : ১. এক শ্রেণীর জ্বিন, যারা বাতাসে উড়ে বেড়ায়। ২. এক শ্রেণীর জ্বিন, যারা সাপ ও কুকুরের রূপে আত্মপ্রকাশ করে এবং ৩. এক শ্রেণীর জ্বিন, যারা উ™£ান্তের ন্যায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়।’
জ্বিন-পরীর শ্রেণীবিন্যাস ও অবস্থান সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এ হাদিসের বিবরণ অকাট্য প্রামাণিক দলিল, এর ব্যাখ্যার প্রয়োজন করেনা। তবুও পরবর্তীকালে যুগে যুগে জ্বিন-পরী ও শয়তান নিয়ে মুসলিম গবেষক ও ঐতিহাসিকগণ ব্যাপক আলোচনা পর্যালোচনা অব্যাহত রেখেছেন এবং এতদসংক্রান্ত আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় বহু কিতাবাদি রচনা করেছেন।
তাতে জানা যায় যে, নানা স্থানে জ্বিন-পরীর কিছু আস্তানা বা ঘাঁটি রয়েছে এবং মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার জন্য মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত রয়েছে। বর্ণিত হাদিসের আলোকে ওদের অবস্থান ও বিচরণ ক্ষেত্রগুলোর নামও উল্লেখিত হয়েছে। ওই স্থানসমূহের একটি তালিকাও রয়েছে। ওসব স্থানে মানুষকে সাবধান ও সতর্কতার সাথে চলাচল করতে বলা হয়েছে অথবা চলাচল হতে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সেসব স্থানের তালিকা নিম্নরূপ : ১. বায়তুল খালা ২. পশুঘর ৩. নোংরা নালা, জলাশয় ৪. প্রাক্তন বৃক্ষ ৫. বৃহৎ ছায়াযুক্ত বৃক্ষ ৬. বড় গাছ (এক প্রকারের বৃক্ষ যাতে লাল বর্ণের দড়ির ন্যায় অতি সরু মূল বের হয়, পাঞ্জাবে একে বলা হয় জামন বৃক্ষ) ৮. আনার বৃক্ষ ৯. ধ্বংসস্ত‚প ও বিরানভ‚মি ১০. নদী-নালা ১১. শ্বশান ও বিরান এলাকা ১২. গহীন বন জঙ্গল ১৩. সামুদ্রিক দ্বীপ ১৪. পর্বত ১৫. দুই পর্বতের মধ্যবর্তী উপত্যকা ১৬. অনাবাদী গৃহ ১৭. যেসব গৃহ প্রায় বন্ধ থাকে ১৮. বিভিন্ন স্থলজ সৃষ্টি যেমন সাপ-ইদুর প্রভৃতির গর্তে ১৯. কাফেরদের পূজার স্থানসমূহ (মন্দির, গির্জা প্রভৃতি) ২০. আবাদি ভ‚মির মধ্যবর্তী খালি স্থানসমূহ ২১. পানি বা জলাশয় ২২. গন্ধ নোংরা পানির ঝিল ২৩. ভ‚মির নিম্নাঞ্চল এবং ২৪. গ্রামীণ এলাকায় এসব স্থান ছাড়াও এমন বহু স্থান আছে, যেখানে এ অদৃশ্য অপশক্তির বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।