Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দায়বদ্ধতা নেই অবৈধভাবে নির্বাচিতদের

নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার চান ইসি মাহবুব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সংস্কার আনার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার বলেছেন, অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না। নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। তাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য কার্যকর কমিশন করতে চাইলে সংস্কার আনতে হবে। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁও ইটিআই ভবনে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য তিনি এসব কথা বলেন। অবৈধভাবে নির্বাচিতদের জনগণের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ নয় উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এ জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তা হলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।
মাহবুব তালুকদার বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের তিন বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। বাকি দু’বছর সময়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হচ্ছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে রাজধানীবাসীর আগ্রহ ও উদ্বেগ অন্তহীন।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও জাতীয় নির্বাচনের মতোই এতে সমগ্র দেশবাসীর দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে। গাজীপুর, বরিশাল ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় উল্লেখ করে এই কমিশনার বলেন, অতীতে যেসব সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হয়েছে, তাতে প্রথম দুটি নির্বাচন কুমিল্লা ও রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের সফলতা ছিল। কিন্তু বেশি দিন আপনার রূপে আপনি বিভোর থাকা হলো না। পরবর্তী পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তিনটির বিষয়ে আমি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি এককভাবে দায়িত্ব পালন করি এবং গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি প্রতিবেদন তৈরি করতে গিয়ে এই তিনটি নির্বাচনের স্বরূপ সন্ধান করি। কিন্তু এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমার কাছে মোটেও সুখকর নয়।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিগত ওই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। কেন নির্বাচন নিরপেক্ষ শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য হয় না? এ প্রশ্নের উত্তর আত্মজিজ্ঞাসার কারণেই আমাকে খুঁজতে হয়েছে।

নিজের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় এ কমিশনার বলেন, আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন আইনত স্বাধীন। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে সেই স্বাধীনতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাছে বন্দি। এ জন্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সংস্কার প্রয়োজন। নির্বাচন যদি গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হয়, তা হলে গণতন্ত্রের পদযাত্রা অবারিত করতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হতে হবে। অবৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জনগণের প্রতি বা গণতন্ত্রের প্রতি কোনো কমিটমেন্ট থাকে না।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের হুশিয়ারি দিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই জিরো টলারেন্স নীতি দেখাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইভিএম ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশন দ্বিধাদ্ব›েদ্ব জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, ঢাকার উভয় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারই সার্বিকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়ে অনেকের মধ্যে দ্বিধাদ্ব›দ্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য এটি একটি অগ্নিপরীক্ষা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা যদি সফলকাম হতে পারি, তা হলে পরে সর্বক্ষেত্রে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে হুশিয়ার করে দিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আমি কোনো নিরাশার কথা শোনাতে চাই না। এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার, সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও অন্যান্য সহায়ক কর্মকর্তা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যে দক্ষতা ও পারদর্শিতা অর্জন করবেন, তা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যেহেতু আপনারা সবাই নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা, সেহেতু আপনারা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতাবলে সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায় সব অপশক্তিকে পরাজিত করে সাফল্য লাভ করবেন। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে আপনারা নিশ্চয়ই শূন্যসহিষ্ণু নীতি বা ‘জিরো টলারেন্স’ দেখাবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাদের শিথিলতাও সহ্য করা হবে না এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইসি সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। বক্তব্য রাখেন, ইসি কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. নূরুজ্জামান তালুকদার।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ