ইবি ভিসির অফিসে তালা, অডিও ক্লিপ বাজিয়ে আন্দোলন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভিসি প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালামের অডিও ফাঁসের ঘটনায় তৃতীয় দিনেও ভিসি
চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে...অন্তরে আজ দেখবো সেথা আলোক নাহিরে” মুনিয়ার কণ্ঠে গাওয়া এই গানটিতে যে কারোরই মন জুড়াবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়। উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুনিয়া যখন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয় তখন কেউ ভাবেনি এই ক্ষণজন্মা এক সময় সকল মানুষের হৃদয় জুড়ানো গান গাইয়ে আসর মাতাবে। উম্মে তানজিলা মুনিয়া ভাইবোনদের মধ্যে সবার অনুজ। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়ায় সামাজিকভাবে কতটা হেয় প্রতিপন্ন কিংবা তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয় তা একমাত্র সেই প্রতিবন্ধী বা তার পিতামাতা ও স্বজনেরা উপলব্ধি করতে পারেন। মুনিয়া পিতামাতার কাছে শুধু মুনিয়া নয় এরকম আরো তিন কন্যা সন্তান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তার বাবা মো. নাসির উদ্দিন ও মা শামীমা আক্তারের কাছে এই চারটি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী কন্যা সন্তানকে নিয়ে এক সময়ে কতটা দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হয়েছে তা একমাত্র তারাই বুঝতে পারেন। আশে পাশের প্রতিবেশীদের হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে তারা রেহাই পাননি। তবে মুনিয়ার অধম্য মেধাশক্তি আর ইচ্ছাশক্তির কাছে সেসব কণ্টকাকীর্ণ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তার পিতা মাতাকে। উম্মে তানজিলা চৌধুরী মুনিয়া চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার আজিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই পড়াশুনার প্রতি মুনিয়ার ছিল প্রবল আগ্রহ। মুরাদপুরের সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে চট্টগ্রামের হামজার বাগের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক পাস করে হাজেরা তজু কলেজ হতে কৃতিত্বের সাথে উ”” মাধ্যামিকে উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হন। উচ্চ শিক্ষার ধাপে এসেই যেন মুনিয়ার কাছে একে একে সব আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন হাতে এসে ধরা দিতে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এসে প্রথম সাংগঠনিকভাবে যোগ দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ডিসঅ্যাবল্ড স্টুডেন্ট সোসাইটি অব চিটাগং ইউনিভার্সিটি (ডিসকু) তে। পড়াশুনার বাইরে তার গান চর্চা, ফেইসবুকে লেখালেখি, অনলাইনে এ্যাপস তৈরি করার চেষ্টা, কো- কারিকুলাম কার্যক্রম সবকিছুকেই সমানভাবে চালিয়ে গেছেন। প্রতিবন্ধীদের দ্বারা পরিচালিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল জীবনের আলো ডট কম এ সম্পাদক মন্ডলী পরিষদের একজন তিনি। চোখের আলো না থাকলেও মনের আলো দিয়ে তিনি জয় করে নিয়েছেন অনেক বাঁধা বিপত্তিকে। মুনিয়া এখন শুধু শিক্ষার্থীই নয় বরং বনে গেছেন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে। তিনি পটিয়ার মোহছেনা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। কোমলমতি শিশুদের পড়াশুনার সুবিধার্থে তিনি তৈরি করেছেন তার নিজস্ব একটি এ্যাপ্স। আর তাতেই নজর কাড়েন সকলের। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও সমাজে ব্যাপক অবদান রাখায় তিনি পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে এটুআই প্রকল্পের লিডারশীপ এওয়ার্ড, এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান হতে সম্মাননা পদক, কৃতিত্ব সনদসহ আরো অনেক অর্জন। মুনিয়ার এই বর্ণিল জীবনের বিষয়ে কথা বলা হয় তার প্রিয় শিক্ষক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদের সাথে, তিনি বলেন- উম্মে তানজিলা মুনিয়া ছোটবেলা থেকে প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে পড়াশুনা করেছে আর আজকে সেই মুনিয়াই আমাদের সকলের কাছে সেলিব্রিটি। মুনিয়ার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সকল প্রতিবন্ধী মানুষ এর উন্নয়নে কাজ করতে চাই এবং সমাজে যাতে তারা ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে ব্যাপারে অবিরত অবদান রাখতে চাই। সকলের শুভকামনা থাকলে জয়ী আমি হবই।
ষ এম. এইচ. নিলয় ও ওয়াহিদুল ইসলাম
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।