পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দিনেদুপুরে ডাকসু’র অফিসে ঢুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের নেতারা। এ হামলায় ভিপি নুরসহ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণের পরিষদের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ হামলা করে; পরে ছাত্রলীগ নির্বাচিত ভিপির ওপর আক্রমন করে। তবে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিপি নুরকে প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে ছাত্রলীগ বলছে তারা হামলাকারীদের ‘নিবৃত্ত’ করেছে। গতকাল দুপুরে ডাকসু ভবনে হামলার এ ঘটনা ঘটে। পরে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে ছয় জনকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ এক সাপ্তাহ আগে ডাকসুর অফিসে ভিপি নুরের রুমে তালা লাগানো হয়েছিল।
শুদ্ধি অভিযান চলার মধ্যেই গত ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণার পরদিন ২২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ‘এই হামলা’ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছেন, কাউন্সিলের পর ডাকসু ভিপির ওপর ছাত্রলীগের হামলা আওয়ামী লীগের আগামীর রাজনীতির গতিপ্রকৃতির বার্তা দিচ্ছে। হামলার পর সংবাদ সম্মেলন করে আহত নুরুল হক নুর বলেন, ভিপি নির্বাচিত হওয়ার পর গত এক বছরে আমার উপর ছাত্রলীগ ৮ বার হামলা করেছে। এসব হামলার সাথে জড়িতদের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
ডাকসু অফিসে ভিপি নুরের ওপর ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠনের নেতাদের হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ছিল। ঘটনার প্রায় ৪৫ মিনিট পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী ভিপি নুরুলসহ আহতদের ডাকসু ভবন থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির পর মিছিল নিয়ে ডাকসু ভবনের দিকে যায়। এ সময় ভিপি নুরুল ২০/২৫ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে ডাকসু ভবনে প্রবেশ করছিলেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। তারপর ভিপি নুরুল ডাকসু ভবনে নিজের কক্ষে চলে যান। এর মধ্যেই ডাকসু ভবনের সামনে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজীত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন এবং তাঁদের কয়েকজন অনুসারী। এ সময় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের নেতারা ডাকসু ভবনের দিকে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকেন। এ সময় নুরুলের নির্দেশে ডাকসু ভবনের কর্মীরা ভবনের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেন।
ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন একপর্যায়ে বাইরে থাকা নিজ সংগঠনের ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কর্মীদের সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। কোনো ধরনের হামলা মারামারি করতে নিষেধ করেন। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসেন।
ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন নিজেও ডাকসুর এজিএস। তিনি গেটের সামনে এলে ডাকসুর কর্মীরা গেট খুলে দেন। তখন সাদ্দাম, সনজীতের এবং মঞ্চের কর্মীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। তারা সরাসরি নুরুলের কক্ষে ঢোকেন।
নুরুল কেন বহিরাগত নিয়ে ডাকসুতে এসেছেন তা জানতে চান সাদ্দাম হ্সোাইন। তখন নুরুল বলেন, তিনি সব সময় হামলার আশঙ্কার মধ্যে থাকেন। এ কারণে নিজের নিরাপত্তার জন্য অনেককে সঙ্গে রাখেন। একপর্যায়ে নুরুল সনজীতকে বলেন, আপনি তো ডাকসুর কেউ না। আপনি কেন এখানে এসেছেন। সনজীত তখন বলেন, আমি কে, তা কিছুক্ষণ পরেই বুঝবি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলার শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ঘটনাস্থলে সহকারী প্রক্টররা উপস্থিত থেকেও হামলা থামাতে পারেননি।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানান, ঘটনার সময় থেকে তারা একাধিকবার প্রক্টরকে ফোন করলেও তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। পরে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অবরুদ্ধ নেতাকর্মীরা শাহবাগ থানা পুলিশের সাহায্য চান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি (অব্যাহতিপ্রাপ্ত) আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ দুপুর ১২টার দিকে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠানোর প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে তারা ডাকসু ভবনে যান। সেখানে ভিপি নুরুল হক নুর তার সমর্থকদের নিয়ে প্রতিদিনের মতো অফিসে ছিলেন। একপর্যায়ে সেখানে তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে ডাকসুর এজিএস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভবনে প্রবেশ করেন। তারা নুরের সমর্থকদের বহিরাগত উল্লেখ করে বের করে দেন। এ সময় নিচে থাকা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা লাঠি, রড, কাঠের টুকরো নিয়ে হামলা শুরু করে। হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্য়বাক হাসান আল মামুনের পা ভেঙে যায়। এ ছাড়া তাদের অনেক সমর্থক মাথায় আঘাত পান।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দেখা যায়, থেমে থেমে ঘণ্টাব্যাপী হামলা চলতে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। পরে নুরসহ কয়েকজনকে স্ট্রেচারে করে বাইরে এনে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে পাঠান তিনি।
ঘটনার বিষয়ে নুরের প্যানেল থেকে ডাকসু’র সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বে প্রশাসনের প্রশ্রয়ে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, হাসান আল মামুন, রাশেদ খান, ফারুক হোসেন, মশিউর রহমানসহ অন্তত ৪০ জনের ওপর হামলা হয়েছে। কারও পা ভেঙে গেছে, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, বমি করছে, বুকের হাড় ভেঙে গেছে। অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে আমরা আশঙ্কা করছি।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর এ জি এস সাদ্দাম হোসেন ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটুক। গত কয়েকদিন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও নুরের সঙ্গে শিবির সংশ্লিষ্টদের ধারাবাহিক সংঘর্ষের ঘটনা দেখছি। আজও ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন ও ডাকসু ভবনে দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করছিল। আমরা নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। আমরা দুই পক্ষকেই আহ্নবা জানাই, তারা যেন নিজেদের ভেতরের সমস্যা সমাধান করে নেয়।
হামলায় ছাত্রলীগের হল প্রার্থীদের অনেককেই দেখা গেছে উল্লেখ করলে সাদ্দাম বলেন, আমরা থামানোর জন্য গিয়েছিলাম।
ঘটনার বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার নিজের ফেসবুক ওয়ালে তিনি লিখেছেন, ‘বহিরাগত শিবির ক্যাডারদের নিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা ও অস্থিতিশীল করতে চেয়েছিল পাগলা ন‚রা। সচেতন শিক্ষার্থী ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ স্বাধীনতাবিরোধীদের সমুচিত জবাব দিয়েছে। এ ক্যাম্পাসে কোনো স্বাধীনতাবিরোধীদের জায়গা হবে না। নুরুর নাটক সবাই বুঝে গেছে!
ঘটনার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি ও অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজকের ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নুরুকে প্রতিহত করেছে।
ঘটনাস্থলে আপনি নিজে ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রাখেন, আমি ছিলাম? যদিও ঘটনাস্থলে তাকে হেলমেট মাথায় লাঠি হাতে দেখা গেছে। তার হামলায় অংশ নেওয়ার ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।
ঘটনার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ভিপি নুরসহ আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পাঠিয়েছি। সেখানে সহকারী প্রক্টররা আছেন। আগে আহতদের চিকিৎসা হোক, পরে সবার কথা শুনব।
এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল স‚ত্রে জানা গেছে, আহত ২৪ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছয় জনকে ভর্তি রাখা হয়েছে। তারা হলেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, আমিনুল হক, সোহেল, নাজমুল, ফারাবী ও নাজমুল হক। তবে তাদের কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, এ পর্যন্ত হাসপাতালে ২৪ জনকে নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে নুরসহ ছয় জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের সবারই হাতে-পায়ে ও মাথায় আঘাত আছে। এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। তাদের অবস্থা তেমন গুরুতর নয়। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব, চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।