Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকিতে

প্রকাশের সময় : ২৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমানে দেশের ১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক দূষণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
গতকাল শনিবার সকালে সংসদে চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা জানান।
সংসদে মন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৩ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সারা দেশের ২৭১টি উপজেলায় ৫০ লাখ নলকূপে আর্সেনিক পরীক্ষা করে। যার মধ্যে ১৪ দশমিক ৫ লাখ অর্থাৎ ২৯ শতাংশ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত (৫০ পিপিবি’র উপরে) আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
মন্ত্রী জানান, পরবর্তীতে সরকার কর্তৃক প্রতিকারমূলক নানা ব্যবস্থা নেয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে ১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক দূষণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে পল্লী এলাকায় প্রতি ৮৮ জনের জন্য ১টি পানির উৎস নিশ্চিত করা হয়েছে। পানি সরবরাহের কভারেজ ৮২ শতাংশ থেকে ৮৮ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০০টির বেশি গ্রামকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে প্রায় ৩ লাখ পানির উৎস স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে দুই লাখ ১০ হাজারটি পানির উৎস আর্সেনিক সমস্যাসংকুল এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরে ১ লাখ ৫৭ হাজার পানির উৎসের গুণগতমান পরীক্ষা করা হয়েছে। ১২২টি পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় পাইপ লাইন ও নলকূপের মাধ্যমে নিরাপদ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গুলিস্তান-সদরঘাট ফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা নেই
সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদেও টেবিলে উত্থাপিত এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রাজধানীর পুরান ঢাকার তীব্র যানজট নিরসনে আপাতত গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে না।
মন্ত্রী জানান, এলজিআরডির অধীনে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের আপাতত নেই।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, রাজধানী ঢাকাকে সুন্দর করতে ও আধুনিক নাগরিক সেবা দিতে সক্ষম নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে একটি ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে ঢাকা ওয়াসা। এটি বাস্তবায়নে এরই মধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০৪০ সালের মধ্যে এ মাস্টার প্ল্যানের বাস্তবায়ন কাজ সম্পন্ন হবে।
সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ঢাকা ওয়াসার কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরির মাধ্যমে ওয়াসার প্রতিটি জোনের গুণগতমান নিয়মিত পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া কোনো গ্রাহকের অভিযোগ পেলে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করে পানির মান যাচাই করা হয়।
সোয়া ২৪ লাখ আয়বর্ধক খামার গড়ে তোলা হয়েছে
এুহাঃ গোলাম মোস্তফা বিশ্বাসের এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দরিদ্র জনগণের গড়ে উঠা মোট তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা। ওই তহবিল থেকে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সমিতির সদস্যরা ক্রমপুঞ্জিতভাবে ২ হাজার ৯৯৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে ২৪ লাখ ২৫ হাজার ১৩৪টি আয়বর্ধক খামার গড়ে তুলেছেন।
মন্ত্রী বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজস্ব স্বপ্নপ্রসূত একটি প্রকল্প। শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগ-১ হিসেবে চিহ্নিত এ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪টি জেলায় ৪৮৫টি উপজেলার সব ওয়ার্ডে মোট ৪০ হাজার ৫২৭টি গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠনের মাধ্যমে প্রায় ২২ লাখ হতদরিদ্র ও দরিদ্র পরিবার তথা ১ কোটির ওপর নি¤œ আয়ের জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় আনা হয়েছে।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের মূল দর্শন হচ্ছে ‘মাইক্রো-ক্রেডিট নয়, মাইক্রো-সেভিংস-এর মাধ্যমে স্থায়ী দারিদ্র্য বিমোচন’। এ প্রকল্পের মাধ্যমে সমিতির সদস্য প্রতি মাসে ২শ’ টাকা হিসেবে বছরের ২ হাজার ৪শ’ টাকা সঞ্চয় জমার বিপরীতে প্রকল্প থেকে সমপরিমাণ উৎসাহ বোনাস এবং সমিতি প্রতি বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আবর্তক তহবিল প্রদান করা হচ্ছে।
সোয়া ১৫ লাখ যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ
সরকারি দলের সদস্য একেএম রহমতুল্লাহর এক প্রশ্নের জবাবে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার বলেছেন, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে সরকারের বিগত মেয়াদ থেকে এই পর্যন্ত ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৯৮২ জন যুবক ও যুব মহিলাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবদের মধ্য থেকে একই সময়ে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৬৭ জন যুবক ও যুব মহিলাকে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, এছাড়া যুবদেও বেকারত্ব দূরীকরণ ও যুবসমাজকে যুব সম্পদে পরিণত করার জন্য সরকার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, যুবসমাজের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪৯৫টি উপজেলায় (১০টি মেট্রোপলিটন ইউনিট থানাসহ) বেকার যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণ, প্রশিক্ষণদান, প্রশিক্ষণোত্তর আত্মকর্মসংস্থান প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বীকরণ, যুব ঋণ প্রদান, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি কর্মসূচি চালু রয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদফতর বেকার যুবদের চাহিদা পূরণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ সমন্বয়ে (৩৩+৪১) মোট ৭৪টি ট্রেডে দেশব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সরকার যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত যুবদের প্রকল্প স্থাপন ও সম্প্রসারণের জন্য অধিদফতরের ঋণ কর্মসূচির আওতায় ঋণ প্রদান করছে। যুব ক্লাবের মাধ্যমে যুবদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে ১ হাজারটি যুব সংগঠনকে ১ হাজারটি কম্পিউটার প্রদান করা হয়েছে। এই সব যুব সংগঠনের সহযোগিতায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বেকার যুবদের কম্পিউটার-তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বীরেন শিকদার বলেন, যুব কার্যক্রমবিষয়ক তথ্যের সহজ প্রাপ্তির লক্ষ্যে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে যুব কার্যক্রম গতিশীল করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে সরকারিভাবে বিদেশে পাঠানোর সরাসরি কোনো কার্যক্রম নেই। এই বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কোনো বাজেট সংস্থানও নেই। তবে নিজের অর্থে কেউ বিশেষ উদ্যোক্তা কিংবা সফল আত্মকর্মী হয়ে থাকলে যেতে পারে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের বেকার যুবসমাজের বেকারত্ব দূর করা আত্মনির্ভরশীল ও কর্মমুখী করা জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের কার্যকর কর্মসূচিসমূহের মধ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি একটি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় ২৪-৩৫ বছর বয়সী এবং উচ্চ মাধ্যমিক ও তদূর্ধ্ব শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন বেকার যুবক-যুব মহিলাকে ১০টি সুনির্দিষ্ট মডিউলে ৩ মাস মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ প্রদানের পর জাতি গঠনমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি বলেন, এই কর্মসূচিটি প্রাথমিকভাবে কুড়িগ্রাম, বরগুনা ও গোপালগঞ্জ জেলায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রংপুর বিভাগে ৭টি জেলার ৮টি উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দেশের ১৭টি জেলার ১৭টি উপজেলায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চতুর্থ পর্বে দেশের ৪টি জেলার ২০টি উপজেলায় এই কর্মসূচির কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় সরকারের বিগত মেয়াদ হতে এই কর্মসূচির আওতায় এই পর্যন্ত মোট ১ লাখ ৪ হাজার ৮২৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে ১ লাখ ২ হাজার ৪০৭ জন জাতি গঠনমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। পর্যাক্রমে এই কর্মসূচি দেশের সকল জেলা ও উপজেলা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বেকার যুবদের কর্মমুখী করার লক্ষ্যে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্প, উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলার বেকার যুবদের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি প্রকল্প রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের নিজস্ব কার্যক্রমের অতিরিক্ত হিসেবে সরকার বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে যুব উন্নয়ন অধিদফতর বেকার যুবদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে। এই সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের বিদেশেও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ১২ শতাংশ মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকিতে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ