মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
১৯৯১ সালে মিয়ানমারের দ্বিতীয় দরিদ্রতম রাজ্যের মংডু টাউনশিপে রোহিঙ্গা বাবা-মায়ের সংসারে আমার জন্ম হয়। একই বছর নোবেল পুরস্কার পান অং সান সু চি। সকল বার্মিজদের মতো এলাকার প্রত্যেক রোহিঙ্গাও আনন্দে মেতে ওঠে। তার সম্মানটা যেন আমাদের নিজেদেরই সম্মান ছিল।
কিন্তু সেই একই নারী মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসলেন এবং আমাদেরকে যখন হত্যা করা হলো আর দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হলো, তখন আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি।
এ বছর গাম্বিয়া ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছে। একইসাথে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে আর্জেন্টিনাকে ইউনিভার্সাল জুরিসডিকশান মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক ও রাজনৈতিক নেতাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে। এদের মধ্যে সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং লাইং এবং অং সান সু চিও রয়েছেন। প্রথমবারের মতো এই সঙ্কট নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হলেন নোবেল বিজয়ী সু চি।
১০ থেকে ১৩ ডিসেম্বর সু চি হেগে আইসিজেতে দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যেখানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জেনোসাইড কনভেনশান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে গাম্বিয়া। যে নারী কোনদিন বাংলাদেশের কক্সাবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি দেখতে যাননি, তিনি এখন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে রক্ষার কাজে নেমেছেন, যারা রোহিঙ্গাদের গণহত্যার দায়ি অভিযুক্ত।
আমি যখন বড় হয়েছি, আমার দাদা সবসময় অং সান সু চির কথা বলতেন। আমার পরিবারের সবাই তার শক্তিশালী কণ্ঠস্বর এবং তার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি অনুরক্ত ছিল। অন্যান্য বার্মিজদের মতো সু চি আমাদের কাছে ছিরেন মিয়ানমারের নেলসন ম্যাÐেলার মতো। দাদা ও বাবা-মায়ের সূত্রে আমি এই নারীকে শ্রদ্ধা করতে শিখি। তিনি ছিলেন আমার অনুপ্রেরণা। তিনি ছিলেন আমার ছেলেবেলার নায়ক।
আমার পরিবার সবসময় সু চিকে সমর্থন দিয়েছে। আমাদের সবাই কোন না কোনভাবে তার জন্য লড়াই করেছি। আমার দাদা তার ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির সদস্য ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের সাধারণ নির্বাচনে আমাদের এলাকাতে এনএলডির প্রচারণাকারীদেরকে স্বাগত জানিয়েছিলেন তিনি, তাদেরকে বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেছিরেন এবং গরু ও ছাগল কোরবানি করে তাদেরকে আতিথেয়তা করেছিলেন। তাদের সাথে অন্যান্য গ্রামে ঘুরে ঘুরে এনএলডিকে ভোট দেয়ার জন্য মানুষকে বুঝিয়েছিলেন আমার দাদা।
১৯৮৮ সালে মিয়ানমারে শিক্ষার্থীদের অবরোধ চলাকালে আবার বড় ভাই এবং আমার চাচা সু চিকে রক্ষার জন্য বিক্ষোভ করেছিলেন। অবরোধের পর, সামরিক বাহিনী আমার চাচাকে দুইবার গ্রেফতার করে এবং তাকে বহু দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতন করে। এই কাহিনী আমাদের এলাকাতে ছড়িয়ে পড়ে কারণ সামরিক বাহিনীর হাতে আবারও গ্রেফতার এড়ানোর জন্য আমার চাচাকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল।
২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমার দেশের ২৫ বছরের একনায়কত্বের অবসান ঘটে। সু চি সারা দেশজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন। রোহিঙ্গাসহ সব জায়গাতেই মানুষ তাকে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে দেখে খুশি হয়েছিলো।
আমার বাবা মা আর আমি সবাই তাকে ভোট দেয়ার জন্য উদগ্রিব ছিলাম। সু চির উপর আমরা আশাদের ভরসা আরোপ করেছিলাম। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেছিলাম। গণতন্ত্র আমাদেরকে রক্ষা করবে, ক্ষমতা থাকবে জনগণের কাছে। এই নারী যখন ক্ষমতায় গেলেন, আমি ভেবেছিলাম আমি লেখক ও স্কুলশিক্ষক হতে পারবো। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবো। আমি মুক্তি আর সমান অধিকার পাবো, যেটা আমার দেশে কখনও আমি পাইনি।
২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির মধ্যে যাদের সাময়িক হোয়াইট কার্ড আইডি ছিল, তাদেরকে ভোট দিতে দেয়া হয়নি। সু চি তার দল থেকে মুসলিম প্রতিনিধিদেরকে বাদ দিয়ে দেন। তার রাজনৈতিক কাপুরুষতার এটা ছিল প্রথম লক্ষণ। রোহিঙ্গারা আশা হারিয়ে ফেলে। বহু দশকের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগণের যে আশা ছিল সু চির ব্যাপারে, সেটা পুরোপুরি উল্টে যায়। আর এখন তার সরকার ন্যাশনাল ভেরিফিকেশান কার্ড প্রক্রিয়াজাত করছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নিজেদের রোহিঙ্গা বলার অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হচ্ছে - তার বদলে কার্ডে লেখা হচ্ছে ‘বাঙালি’।
আইসিজেতে সু চি সারা বিশ্বের সামনে মিথ্যাচার করেছেন। বলেছেন, রাখাইন রাজ্যের সকল সদ্যজাত শিশুকে জন্মসনদ দেয়া হয়েছে। এটা সত্য নয়। রোহিঙ্গারা এখনও সব সময় জন্ম সনদ পায় না। আমার নিজের জন্ম সনদ ১৯৯২ সালে জব্দ করা হয়েছে। তাতমাদাওয়ের সংশ্লিষ্টি নাসাকা আধাসামরিক বাহিনী এটা জব্দ করে।
অং সান সু চি তার পথ বেছে নিয়েছেন। প্রত্যেকেই সেটা দেখতে পাচ্ছেন। সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় যে বহু মিলিয়ন রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে আছেন, তাদের কাছে সু চির নাম এখন মিয়ানমারের অতীতের স্বৈরাচার আর একনায়কদের মতোই আরেকটি নাম। এটা অং সান সু চির আরেকটি দিক, যিনি একসময় এশিয়ার নেলসন ম্যাÐেলা ছিলেন।
অং সান সু চি একজন পতিত নায়ক। আর আমার নায়ক নন তিনি। তিনি আর আমার ম্যান্ডেলা নন। সূত্র : এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।