Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাখ্যান শ্রীলঙ্কার তামিলদের

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে শ্রীলঙ্কার তামিলরাও তীব্র ভাষায় এটি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে এটি মুসলিমদের প্রতি প্রকাশ্যে ‘বৈষম্য’ প্রদর্শন করা হয়েছে।

পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগাস্তিানে সংখ্যালঘুদের ওপর হয়রানির কথা উল্লেখ করে ভারতীয় পার্লামেন্টে ১১ ডিসেম্বর তার নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে ওই তিন দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্র্রস্টান, পারসি ও জৈন স¤প্রদায়ের সদস্যদের নাগরিকত্ব প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে মুসলিমদেরকে বাদ রাখায় সারা ভারতে বিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার তামিল অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ মুত্তুকৃষ্ণ সর্বনান্থন বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত সরকার তাদের দেশকে অ-সেক্যুলার দেশে পরিণত করছে। তিনি বলেন, এটি কেবল একটি খারাপ প্রবণতাই নয়, সেইসাথে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও এটি প্রভাবিত করবে।

শ্রীলঙ্কার নর্দার্ন প্রভিন্সে পয়েন্ট পেড্রো ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারত সবসময়ই ছিল সেক্যুলার দেশ। কিন্তু এই সরকার এর পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ভারত যদি এধরনের সংকীর্ণমনা নীতি অনুসরণ করে, তবে অন্যান্য দেশও এই নীতি অনুসরণ করবে।
শ্রীলঙ্কার তামিলরা দেশের ২১ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে ১২.৬ ভাগ। এদের একটি বড় অংশের উৎস ভারত।

ভারত গণতন্ত্র ও অন্তর্ভুক্তমূলক ধারণার দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সর্বনান্থন বলেন, ভারতের এই নীতি কেবল দেশটির জন্যই নয়, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশের জন্যও খারাপ।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এখন ভারতের এই নীতি মিয়ানমার, এমনকি নেপালও অনুসরণ করতে পারে।

ভারতে আইনটি পাস হওয়ার পর একে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কলম্বোভিত্তিক আইনজীবী আইনকারন কুগাথাসান নতুন আইন নিয়ে প্রশ্ন করে বলেন, ইটি একটি ধর্মীয় গ্রæপকে টার্গেট করে প্রণীত। ওই গ্রæপটি হলো মুসলিম। তবে অন্যান্য গ্রæপও সমস্যায় পড়বে।

মুসলিমদের অধিকারের জন্য লড়াই করছে অমুসলিমেরাও

কুগাথাসান বলেন, হিন্দুত্ববাদী শক্তির এই বিতর্কিত পদক্ষেপের বিরুদ্ধে লোকজনকে লড়াই করতে দেখাটা উৎসাহজনক। তিনি বলেন, এই দুনিয়ায় অন্যদের অধিকারের জন্য লড়াই করার ঘটনা বিরল। এটা সবসময়ই লড়াই করা পক্ষকে প্রভাবিত করে। এবার বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভারত সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তারা একই ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী না হয়েও এই লড়াই করে যাচ্ছে।

ভারতের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। বিশেষ করে দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার ছাত্রদের বিরুদ্ধে পুলিশের সহিংসতার পর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের সমর্থনে এগিয়ে এসেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের অফিসের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের মতে এই আইন মৌলিকভাবেই বৈষম্যমূলক।

মুসলিমবিরোধী অসহিষ্ণুতা বৈশ্বিক বৈশিষ্ট্য

একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার যোগাযোগ কর্মকর্তা গোপিকৃষ্ণা কানাগালিগামও বলেন, নতুন আইনটি মুসলিমদের প্রতি পুরোপুরি বৈষম্যমূলক।

তিনি আনাদলু এজেন্সিকে বলেন, ভারত সরকার যদিও দাবি করছে যে তারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের ধর্মীয় কারণে নির্যাতিতদের জন্য এই আইন করেছে, কিন্তু বাস্তবে তারা পাকিস্তানের আহমদিয়ায় মুসলিম বা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে এতে অন্তর্ভুক্ত করেনি। তিনি বলেন, ভারত সরকারের যদি প্রতিবেশী দেশগুলোর নির্যাতিত লোকজনকে রক্ষা করার উদ্দেশ্য থাকত, তবে তারা সব ধর্ম, জাতি, ও গ্রæপকেই এতে অন্তর্ভুক্ত করত।

তিনি বলেন, এই সরকারের কার্যকলাপ ও বিশ্বজুড়ে মুসলিমবিরোধী অসহিষ্ণুতার ধারা বিবেচনা করলে বোঝা যঅয় যে তারা মুসলিমদেরকে নিঃসঙ্গ করার জন্যই এই আইনটি করেছে। দেশব্যাপী প্রতিবাদের ব্যাপারে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিলটি ‘গণতান্ত্রিকভাবে’ পাস হলেও এসব বিক্ষোভ ‘যৌক্তিক।’
তিনি বলেন, চ‚ড়ান্তভাবে সার্বভৌমত্ব জনগণের ওপর নিহিত। ফলে জনগণ যদি সরকারের কোনো বিশেষ কাজকে অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক বা অনৈতিক মনে করে, তবে তাদের অধিকার আছে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ