পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘বিজয় তুমি ১৬ ডিসেম্বর-লাখো শহীদের রক্তমাখা প্রাণ/ বিজয় তুমি শাশ্বত বাংলার সোনালি ফসল-সরষে ফুলের ঘ্রাণ’। কবির কবিতার এই চিত্রপটে ফুটে উঠেছে বিজয় দিবসের গল্প। আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৪৯তম মহান বিজয় দিবস। বীরের জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার চিরস্মরণীয় দিন। মুক্তির জয়গানে মুখর জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সেই অকুতোভয় বীরদের, যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়।
৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে যৌথ বাহিনীর কাছে। এতেই স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে সাড়ম্বরে আজ দিবসটি উদযাপন করা হবে।
দেশের ১৭ কোটি মানুষ দিবসটি উদযাপন করবে। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত। স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটির কর্মসূচি সুচনা করবেন। অতঃপর লাখো মানুষ স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারানো বীর সন্তানদের স্মরণে করবেন। বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসীরাও দিবসটি পালন করবেন। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা, বিএনপি মহাসচিব, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটি। বিজয় দিবসে লাল-সবুজ পতাকা উড়বে বাড়িতে গাড়ীতে, সব প্রতিষ্ঠানে। লাখো মানুষের মাথায় থাকবে পতাকার রঙে রাঙা ফিতা। অনেকে পড়বেন পতাকার রঙের পোশাক। আগেই পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভবনে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলোকে সাজানো হয়েছে জাতীয় ও রঙ-বেরঙের পতাকা দিয়ে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। হাসপাতাল, শিশুসদন ও কারাগারগুলোতে দেয়া হবে বিশেষ খাবার। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি, বেসরকারি রেডিও এবং টেলিভিশনে স¤প্রচার করা হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত সামরিক বাহিনী বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ করবে।
এদেশের মানুষের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য। শিল্প সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ জাতি শত শত বছর ধরে সম্প্রীতির মধ্যেই বসবাস করে আসছে। মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সব ধর্মের মানুষ একতাবদ্ধভাবে কাধে কাধ মিলিয়ে বসবাস করছে। কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে হাতছাড়া হয়ে যায় দেশের শাসনভার। ইংরেজরা উনিবেশিক শাসন কয়েম করে। ১৯০ বছর উপনিবেশিক শাসনের সময় মুক্তিপাগল মানুষ স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছে, অনেক রক্ত ঝড়েছে। খুদিরাম বসুর মতো তরুণ হাসিমুখে ফাঁসির রশি গলায় দিয়েছে স্বাধীনতার দাবিতে। ১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহে প্রাণ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার শ্রোতে ভেসে গেছে তাজা রক্ত। ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসন থেকে এদেশ মুক্ত হলেও ফের বাধা হিসেবে দেখা দেয় পাকিস্তানী শোষক গোষ্ঠীর অন্যায় শাসন। বাংলাদেশীরা বঞ্চিত হতে থাকেন ন্যায্য অধিকার থেকে। বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) সম্পদ লুট করে নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে তোলা হয় সম্পদের পাহাড়। তাদের সে অত্যাচার-নির্যাতনের প্রতিবাদে ধীরে ধীরে জেগে ওঠে বাংলার দামাল ছেলেরা। ধাপে ধাপে আঘাত হানতে থাকে শাসনযন্ত্রে। ’৫২-র ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ’৫৭-র স্বায়ত্তশাসন দাবি, ’৬২ ও গণআন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে মানুষের ভাগ্যাকাশে নেমে আসে কালোরাত। ওই রাতেই মুক্তিপাগল বাংলার দামাল ছেলেরা ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তির সংগ্রামে। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানী বাহিনীর নির্মম নিধনযজ্ঞের পরের দিন ২৬ মার্চ ইতারে ভেসে আসে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন মেজর জিয়াউর রহমান। শুরু হয় দখলদার বাহিনীকে বিতাড়নে অদম্য সংগ্রাম। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের জীবন বলিদান আর ৩ লাখ মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাক্সিক্ষত বিজয়। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তান কারাগারে বন্দী ছিলেন।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় দিবসটি উদযাপন করে আবালবৃদ্ধবণিতা বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায়। জাতি স্মরণ করবে যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল ভোগ করে পেরিয়ে গেল ৪৮ বছর জানা-অজানা সেই লাখো শহীদকে।
স্বাধীনতা অর্জিত হলেও গত ৪৮ বছর জাতির চলার পথ কখনোই মসৃণ ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া, দারিদ্র্য ও দুর্নীতি থেকে মুক্তির সংগ্রামের পাশাপাশি একইভাবে চলেছে সামরিক শাসন, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, যুদ্ধাপরাধের বিচার, জঙ্গিবাদ ও সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধ আন্দোলন। ভোটের অধিকারও হারিয়ে গেছে অজানার গন্তব্যে। এছাড়াও প্রবল বন্যা, ভয়াবহ ঘ‚র্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়েছে মানুষকে। এই বন্ধুর পথপরিক্রমায় অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। ভোটের অধিকার হারালেও প্রতিবন্ধকতাতে হতোদ্যম হয়নি সংগ্রামী মানুষ। হারায়নি সাহস। বিজয় উদযাপনে সূর্য্যােদয়ের প্রথম প্রহর থেকেই সারা দেশে পথে নামবে উৎসবমুখর মানুষ। শহীদদের স্মরণ করে বিন¤্র শ্রদ্ধায় দেশের সব স্মৃতিসৌধ ভরিয়ে দেবে ফুলে ফুলে।
আ’লীগের কর্মসূচি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে- সোমবার সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এছাড়া সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে দলটি। বেলা ১১টায় গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক টুঙ্গিপাড়ায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজসহ অন্য নেতারা অংশগ্রহণ করবেন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দলটির আলোচনা সভা ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলোচনা সভায় জাতীয় নেতারা ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা বক্তব্য রাখবেন।
বিএনপির কর্মসূচি : মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৮টায় দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী চেয়ারপার্সনের গুলশানস্থ কার্যালয়ের সামনে থেকে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সকাল ৮-৩০টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ঢাকা শেরেবাংলা নগরস্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে এসে সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফাতেহা পাঠ করবেন। ১৭ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানী বিজয় র্যালি বের করবে বিএনপি।
এছাড়াও জাতীয় পার্টি, সিপিবি, গণফোরাম, জাসদ, বাসদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নানান কর্মসূচি পালন করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।