হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
আফতাব চৌধুরী
২০১৬ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে সুন্দরভাবেই। সিলেটের বিভিন্ন কেন্দ্রে এসব পরীক্ষা নকলমুক্ত এবং সুন্দর পরিবেশে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য আমাকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো ভিজিল্যান্ড টিমের সদস্য মনোনয়ন করা হয়েছিল। নির্ধারিত প্রতিটি কেন্দ্রই আমি পরিদর্শন করেছি। লক্ষ্য করেছি, অত্যন্ত সুন্দর ও নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষাসমূহ সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। অত্যন্ত উৎসাহিত ও আশান্বিত হয়েছি এবারের কেন্দ্রসমূহের পরীক্ষা দেখে।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলাকালীন দিনে বিভিন্ন প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজ খোলা ছিল এবং ক্লাসও চলছিল নিয়মিতভাবে। আমি প্রত্যক্ষ করেছি, প্রত্যন্ত অঞ্চল অর্থাৎ কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায়ও ভীষণ বৃষ্টি বাদল ও প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজে ছাত্রছাত্রীরা কোথাও বাসে, কোথাও টেম্পোতে আবার কোথাও বা হেঁটে বৃষ্টিতে ভিজে বইপত্র নিয়ে নির্ধারিত ইউনিফর্ম গায়ে দিয়ে শিক্ষালয়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের অতি সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখায় এ আগ্রহ দেখে আমি উৎসাহিত হয়েছি, উদ্বেলিত হয়েছি, আশান্বিত হয়েছি। আমিও এও প্রত্যক্ষ করেছি গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্রই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্প্রসারিত করা হচ্ছে, কোথাও কোথাও নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠছে। আমিও আমার সহযোগী মাঝে-মধ্যে বৃষ্টিতে ভেজা ছাত্র-ছাত্রীদের কয়েক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে কথা বলেছি। আমি তাদের কথা শুনে বিস্মিত হয়েছি তাদের পড়ালেখার ব্যাপারে আগ্রহ দেখে। দিনমজুর, খেটে খাওয়া, গ্রামের অতি সাধারণ মানুষেরাও আজকাল ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে অতি আগ্রহী। তাদের সবারই মুখে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের নাম। তাদের বক্তব্য, আমাদের মন্ত্রী মহোদয় আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন জাতিকে শিক্ষিত করে তুলতে এবং এ জন্য নানা রকম সুযোগ-সুবিধাও দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন জায়গায় প্রতিটি বক্তৃতায় পড়ালেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করছেন। প্রতিটি স্কুল-কলেজে কম্পিউটার, বইপুস্তক এবং ল্যাবটরিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছেন। ভবন সম্প্রসারণ করছেন আবার নূতন নূতন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করছেন। এর আগে তো কোনো শিক্ষামন্ত্রী এভাবে করেননি। আমরা ছাত্রছাত্রীরা এবং অভিভাবকবৃন্দ সবাই মাননীয় মন্ত্রীর উৎসাহ-উদ্দীপনায় পড়ালেখা করে মানুষ হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্যÑ পড়ালেখা করে মানুষ হব, দেশ গড়ব, প্রতিষ্ঠিত হব, গরিব খেটে খাওয়া মা-বাবার মুখে হাসি ফুটাব। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মুখে এসব কথা শুনে আমি নিজেও উদ্বেলিত হয়েছি। অভিনন্দন মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আপনাকে। আপনার অবদান এদেশের সাধারণ মানুষও কখন ভুলবে না। জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার ব্যাপারে আপনার প্রয়াস ব্যর্থ হবে না, ইনশা আল্লাহ। আপনার সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম সম্বন্ধে আমি দীর্ঘদিন ধরে অবগত। আমরাও আপনার এ মহৎ কাজে সব সময়ে সহযোগিতা করেই যাব। আপনার প্রয়াস সফল ও সার্থক হোক। আমরা আশাবাদী আপনার নিরলস প্রয়াসে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে, যা ইতোমধ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং এদেশের মানুষ শতভাগ শিক্ষিত হয়ে উঠবে। পৃথিবীর কেউই আমাদেরকে আর অবহেলার চোখে দেখবে না। শিক্ষিত জাতি হিসেবে আমরা গর্ব করব এবং সারা জাতি আপনাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে আপনার এ অবদানের জন্য। পৃথিবীর বুকে আমাদের মানমর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। তবে ইংরেজি শিক্ষার ওপর আরও গুরুত্ব দিতে কোচিং সেন্টার এবং গাইড বইয়ের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
আপনি জাতিকে শিক্ষার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে নিচে নৈতিকতার উন্নয়নে কিছু পরামর্শ প্রদান করছি এবং দৃঢ়তার সাথে বলছি, প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে আপনি এগিয়ে এলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। ছাত্র সমাজ চরিত্র গঠনে সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে।
একটা সময় ছিল যখন ‘পুলিশ ঘুষ খায়’ কথাটার বহুল প্রচলন ছিল। সিনেমা-নাটক ইত্যাদিতে পুলিশকে ঘুষখোরের ভূমিকায় উপস্থাপন করা হতো। কিন্তু সব পুলিশই কি ঘুষ খায়, এ বিভাগে সবাই যে দুর্নীতিগ্রস্ত, তা মোটেই নয়। ঘুষ খায় না এমন পুলিশের অভাব নেই। বরং যুগ যুগ ধরে এদেশের অনেক আমলা, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত আছেন তা এদেশের জনগণ ভালো করেই জানেন। পুলিশের সে দশ-বিশ টাকা ঘুষের বিপরীতে আমাদের রাষ্ট্র চালনার দায়িত্বে ব্যস্ত নেতারা কোটি টাকার হিসেবে ঘুষ খান। দেশে চিনি, সার ঘুষ-কেলেঙ্কারির বিষয়ে কেউ অনবহিত নন। তাই বর্তমানে ‘পুলিশ ঘুষ খায়’ গোছের উক্তির প্রয়োজনীয়তা বা যৌক্তিকতা আর কেউ উপলব্ধি করে না।
ঘুষ বা দুর্নীতির নামে নানারকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও গণসচেতনতার ব্যাপারে জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ঘুষ-ব্যাধির ক্রম-সংক্রমণ বিন্দুমাত্র স্তিমিত হয়নি বরং কোনো কোনো এজেন্সির মতে দুর্নীতি আগের তুলনায় বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্থিক দুর্নীতি সমাজ-সরকারের প্রতিটি স্তর ও বিভাগেই ব্যাপ্ত হয়ে বর্তমানে এক অলিখিত স্বীকৃতি লাভ করেছে। দুর্নীতি এখন এত ব্যাপক যে এ নিয়ে চর্চা করে বা উদ্বেগ প্রকাশ করে সময়ের অপচয় বা বাক্য ব্যয় করতে কেউ চান না। সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ ছায়াছবির একটি সংলাপের অনুকরণে বলা যায়, ‘দুর্নীতির কোনো শেষ নেই, দুর্নীতি-রোধের চেষ্টা বৃথা তাই।’ বলতে গেলে বর্তমানে দুর্নীতির প্রতিযোগিতা চলছে, যে প্রতিযোগিতা থেকে জাতির ‘মেরুদ-’ বলে কথিত শিক্ষক সমাজও পিছিয়ে নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধে আপনার চেষ্টার ত্রুটি নেই তা স্বীকার করতেই হবে। তারপরেও শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি তথা একাংশ শিক্ষকের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও ভ্রষ্টাচারে নিমজ্জিত হবার কাহিনী পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হয়। এ ধরনের শিক্ষকের সংখ্যা অত্যল্প হলেও তাদের অপকর্মের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজকে লজ্জিত হতে হয়।
শিক্ষককে জাতির মেরুদ- বলা হয়। মানব দেহে হাত, পা, চোখ, কান, বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। সেগুলোর একটি-দুটি বিকল হলে মানব দেহ কাজ চালিয়ে যেতে পারে, তেমন অসুবিধা হয় না কিন্তু মেরুদ- বিকল হলে দেহ সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। তাই মেরুদ-ের এত কদর। প্রতিটি পেশার মানুষকে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। শিক্ষককে না ছুঁয়ে কেউ সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারে না। তাই ব্যক্তি, সমাজ তথা জাতি গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা সর্বশ্রেষ্ঠ। সুশিক্ষা যেমন সুনাগরিক তৈরি করে, কুশিক্ষা তেমনি একজন ব্যক্তির অধঃপতন ও ধ্বংসের রাস্তা প্রশস্ত করে। বর্তমানে জাতির মেরুদ- বলে বিদিত, গুরুরূপে পূজিত শিক্ষকদের এক অংশের দোষে তাদের শ্রদ্ধার আসন তারা ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন আবশ্যক। এটা সম্ভব আপনার মতো যোগ্য নেতৃত্বের মাধ্যমে।
পরীক্ষায় ছাত্রকে পাস করিয়ে দিতে নকল সরবরাহ, প্রশ্নপত্র ফাঁস ইত্যাদি ঘটনায় কিছু শিক্ষকের জড়িত থাকার বিষয় প্রতি বছর পরীক্ষার সময় জনসমক্ষে আসে। নকলের অভিযোগে যেমন ছাত্র বহিষ্কৃত হয়, তেমনি বহিষ্কৃত হন শিক্ষকও। বিশেষ করে বেসরকারি ভেঞ্চার স্টেজে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার বাড়িয়ে নিজের চাকরির স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণ তথা ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি ছাত্রছাত্রীদের আকর্ষিত করতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের পাস করিয়ে দেয়ার যাবতীয় ‘পন্থা’ গ্রহণে তৎপর থাকেন এমন অভিযোগ এখনও শোনা যায়। ছাত্র তার পরবর্তী নাগরিক জীবনে শিক্ষকের আদর্শ অনুসরণ করবেÑ এটাই বাঞ্ছনীয়। এ ধরনের শিক্ষকের আদর্শ ও চারিত্রিক অবয়ব অনুসরণ করলে ওই ছাত্রের ভবিষ্যৎ জীবন কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।
ছাত্রজীবন থেকে শুনে আসছি, শিক্ষকতা পবিত্র পেশা, মহৎ এক ব্রত। তাই এ পেশা এক বিশেষ সেবাধর্মী মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য। আজ শিক্ষক বা শিক্ষকতার ধারণা আমূল পাল্টে গেছে। বর্তমানে শিক্ষকতা নিছক আরো পাঁচটি চাকরির মতোই। অন্য কোথাও চাকরি না পেলে করেন শিক্ষকতা। রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের কাছে আয়ের উৎস তথা দলীয় সমর্থকদের সন্তুষ্ট রাখার সহজতম উপায় হলো ‘মাস্টারি’ চাকরি প্রদান। নির্বাচনে স্লোগান, ছাপ্পা ভোট, বুথ দখল ইত্যাদির মাধ্যমে নেতার বিজয় নিশ্চিতকরণের বিনিময়ে ‘মাস্টারি’ চাকরি লাভ করা শিক্ষকের সংখ্যা এ দেশে নেহাত কম নয়। মোটা অংকের অর্থ উৎকোচ/ডোনেশন দিয়ে মাস্টারি চাকরি ম্যানেজ করার ঘটনা শোনা যায় প্রায়ই। ইদানীং আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ভূমিকায় এ ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসছে। সন্দেহ নেই।
শিক্ষকদের সুযোগ কম। সুযোগের সীমাবদ্ধতা বা অপ্রতুলতার জন্য তারা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারেন না। সুযোগ কেউ কেউ পেলে তার ‘সদ্ব্যবহার’ করতে যে কুণ্ঠাবোধ করেন না, তা সত্য। পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই এ জাতীয় সংবাদ চোখে পড়ে। স্কুল-কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়ন তথা ছাত্রছাত্রীর কল্যাণমূলক নানা কাজের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল মঞ্জুর করা হচ্ছে সরকারি তরফে। স্কুলের বিভিন্ন ফান্ড তছরুপ হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মকা- ও প্রকল্প ইদানীং ব্যাপক হারে চালু হয়েছে। এসব প্রকল্পের রূপায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে শিক্ষকদেরও জড়িত করা হয়ে থাকে তদারকির কাজে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অনেক শিক্ষক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছেন। ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পের এবং স্থাপনার বিভিন্ন ফিজ এর অর্থ আত্মসাৎ করে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়া শিক্ষকের কেচ্ছা-কাহিনী পত্র-পত্রিকায় হরহামেশা প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন ফান্ড ও ফিজ এর টাকা আত্মসাৎ ঘটনা ফলাও করে পত্র-পত্রিকায় যখন ছাপা হয়, তখন সৎ-নিষ্ঠাবান শিক্ষকগণ অতিশয় মর্মাহত ও লজ্জিত হন।
অনেক শিক্ষক বর্তমানে ঠিকাদারের ভূমিকায় অবতীর্ণ। গৃহনির্মাণ, রাস্তাঘাট ইত্যাদি তদারকি করতে ব্যস্ত থাকেন ডিউটি আওয়ার্সে, বাড়িতে ব্যস্ত থাকেন ইট-বালু-ডাল-চালের হিসাব মিলাতে। কাজের তদারকি, তহবিল আদায়, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কমিটি-মিটিং ইত্যাদিতে ব্যস্ততার অজুহাতে তারা পঠন-পাঠনের কাজ থেকে নিজেকে কৌশলে সরিয়ে রাখেন। সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত শিক্ষক ক্লাসে লেকচার দেবার পরিবর্তে দলীয় সভা-সমিতিতে ভাষণেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। কর্তব্যবিমুখ কোনো কোনো ফাঁকিবাজ শিক্ষকের কাছে এটা সুখকর হলেও অনেক নিরীহ, শিষ্টাচারী শিক্ষক পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়েন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও কেউ কেউ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নির্দোষ ব্যক্তিও মাঝে-মধ্যে ফাঁদে আটকে যান। আমরা জানি এসব দূরীকরণ এবং সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আপনি সদা তৎপর।
শিক্ষা ক্ষেত্রে এ দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে শিক্ষকদের সরব হতে হবে। ‘শিক্ষকরা দুর্নীতিগ্রস্ত’-এ অপবাদ ধ্বনি প্রবলতর হয়ে ওঠার পূর্বে বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণে শিক্ষক সমাজের তৎপরতা একান্ত কাম্য। গৃহনির্মাণ, ছাত্রছাত্রীদের খাবার-দাবার ইত্যাদি কাজ থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে শিক্ষাদানে পূর্ণ মনোনিবেশ একজন শিক্ষককে সমাজে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার আসনের অধিকারী করে তুলতে পারে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক সংগঠনগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল সাপ্লাই, মিড-ডে মিলের অর্থ আত্মসাৎ, গৃহনির্মাণের অর্থ নয়ছয়, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রাজনীতি, ডিউটি না করে বেতন গোনা ইত্যাদি অনিয়ম-দুর্নীতিতে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সদর্থক সরব ভূমিকা গ্রহণে শিক্ষক সংগঠনগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষকরা যাতে দুর্র্নীতিমুক্ত থেকে শুধু শিক্ষাদানে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে শিক্ষক সমাজকে অগ্রণী ও প্রভাবী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাহলে তারাই হবেন সমাজে সর্বাধিক প্রশংসিত। শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে সমাজের সব স্তরের মানুষের ভালোবাসা পাবেন। সন্দেহ নেই।
যেখানে আমরা আজ হতাশার সাগরে নিমজ্জিত সেখানে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজš§কে নিয়ে কী ভাবতে পারি? তারা কি অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না? ক্রমাগত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, পানি সংকট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং দেশের সার্বিক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এ দেশের জনগণ চরম দুর্ভোগের মধ্যে কালাতিপাত করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, নৃশংস খুন, ডাকাতি, ধর্ষণসহ নানাবিধ ঘটনায় দেশের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সমাজের নৈতিক অবক্ষয়, হিংসা, অহংকার, ক্রোধ-বিদ্বেষ, ছিনতাই, লোভ, শঠতা, ঘুষ, দুর্নীতি, প্রবঞ্চনা, স্ব^ার্থপরতা, প্রতারণা, মোনাফেকী, অন্যায়, অবিচার, জুলুম যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে সমাজ তথা দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। আমাদের সমাজ জীবনে জীবন্ত হয়ে আছে চরম অবক্ষয়ের চিত্র। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাঙ্গন, অফিস-আদালত থেকে শুরু করে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ অবক্ষয় বিদ্যমান। এ অবক্ষয় ধীরে ধীরে প্রভাবিত করছে সমাজকে, কলুষিত করছে প্রত্যেকের মন-মানসিকতাকে। আমাদের দেশে আজকের এ পরিস্থিতির জন্য অনেক কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। তন্মধ্যে নৈতিকতার অবক্ষয়কে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাই আমাদের দেশে সুখ, শান্তি, স্বস্তি চাইলে আমাদেরকে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধ করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন জাগেÑ নৈতিকার অবক্ষয় রোধ কীভাবে সম্ভব?
বেশ ক’বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মরহুম ওসমান গণীর একটি প্রবন্ধ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। লেখাটির শিরোনাম ছিল, নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। তিনি লেখাটি শুরু করেছেন এভাবে, কোনো দেশের উন্নতি অবনতি বহুলাংশে নির্ভর করে জনগণের নৈতিক শক্তির ওপর। কেননা নৈতিক শিক্ষা মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে এবং ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান করে। যে দেশের জনগণের নৈতিক অধঃপতন দেখা দেয়, সে দেশ প্রচুর সম্পদের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করতে পারে না। আপামর জনসাধারণের উন্নতি ব্যতীত কতিপয় লোকের উন্নতির দ্বারা কোনো দেশ উন্নতির বা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে না। অতএব একটি দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নতি ও প্রগতির জন্য প্রয়োজন নৈতিক শিক্ষা।
সাধারণত মানুষ গৃহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে নৈতিক শিক্ষালাভ করে থাকে। নৈতিক সকল শিক্ষার মূল ভিত্তি হচ্ছে ধর্মীয় শিক্ষা। ধর্মের মাধ্যমে মানুষ আদব-কায়দা, আচার-আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষালাভ করে। বিশ্বনবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, প্রত্যেক নর-নারীর পক্ষে জ্ঞান আহরণ করা ফরজ। কারণ, জ্ঞানই মানুষকে ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, সত্য-অসত্য, পাপ-পুণ্য ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য করে দেয়।
এ ধরনের লেখা অনেকেই লিখেছেন, আমিও লিখেছি, অনেকে পড়েছেন, আমিও পড়েছি। কিন্তু এ লেখাটি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করার কারণ প্রবন্ধের লেখক আমার পূর্ব পরিচিত। তিনি প্রায়ই বলতেন ভালো ছাত্রের লক্ষণ শুধু পড়াশোনায় নয় আচার ব্যবহার এবং বিনয়ে।
আজ আমি উপাচার্য মহোদয়ের লেখাটির আলোচনা করতে গিয়ে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি তিনি ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। এ কারিগরের দায়িত্ব পালন করেছেন অনেক বছর। যেহেতু সে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন নিশ্চয়ই তার অভিজ্ঞতার একটা মূল্য রয়েছে। তিনি যেহেতু এ দেশে বসবাস করেছেন কোন কিছুই তার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। তিনি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে এ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবলোকন করেছেন। অতএব তার জ্ঞান, তার অভিজ্ঞতা, তার অনুধাবন শক্তি এবং তার মূল্যবান কথাকে অবশ্যই আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, ধর্মীয় শিক্ষা মানুষকে সকল প্রকার লোভ-লালসা, প্রলোভন ও অপকর্ম থেকে বিরত রাখে। এ শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানী, সৎ, নম্র, বিনয়ী ও চরিত্রবান হতে সাহায্য করে। সুতরাং ছোটবেলা থেকে ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত। বড় দালানকোঠা নির্মাণ করতে হলে যেমন এর ভিত্তি মজবুত হওয়া আবশ্যক তদ্রƒপ ছেলেমেয়েদের মানুষ করতে হলে তাদের শৈশবকালের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখা উচিত। কারণ শৈশবকালই ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠনে সহায়তা করে। ভিত্তি সুদৃঢ় ও মজবুত না হলে বিল্ডিং যেমন ধূলিস্যাৎ হবে তদ্রƒপ ছোটবেলায় সুশিক্ষা না পেলে ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ হবে অন্ধকার। অতএব ভিত্তি মজবুত করার জন্য ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
উপাচার্য মহোদয় তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ‘ছোটবেলায় ছেলেমেয়েদেরকে অজু, গোসল, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, ফিতরা, কোরবানি ও অন্যান্য বিষয়সমূহ খুব ভালোভাবে শিক্ষা দিতে হবে। এগুলো আমল করার জন্য তাগিদ দিতে হবে। বাল্যকাল থেকে ছেলেমেয়েরা যদি ধর্মীয় শিক্ষা ও আদর্শের প্রকৃত অনুসারী হয় তা হলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন যে সুন্দর হবে তাতে সন্দেহ নেই।’ তিনি আরো উল্লেখ করেছেন ‘সমাজ জীবনে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে পরিবারের প্রধান মা-বাবা ধর্মীয় রীতিনীতি ও আদর্শ মেনে চলেন এবং ছেলেমেয়েদের সেভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, সাধারণত সে পরিবারের ছেলেমেয়েরা হয় সৎ ও চরিত্রবান।’ উপাচার্য মহোদয় তার প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করেছেন, ‘সমাজে কোন ব্যক্তি প্রতিভাবান কিংবা প্রচুর সম্পদের অধিকারী হতে পারে কিন্তু তার যদি নৈতিক অধঃপতন ঘটে, তাহলে সে ব্যক্তি দেশকে কিছু দিয়ে যেতে পারে না। বিদ্যা অর্জন করলে বা বিত্তশালী হলে মানুষ ভালো-মন্দ বুঝতে পারে এ কথা ঠিক নয়, কেবলমাত্র বিবেক ও নৈতিক জ্ঞানই মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। আমাদের সমাজ জীবনে আজ দারুণ হাহাকার। বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কার্যকলাপ যেমনÑ চাঁদাবাজি, মাস্তানি, ঘুষ, দুর্নীতি, অত্যাচার, অনাচার, জুলুম, উৎপীড়ন, শোষণ, নারী নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই ইত্যাদি সমাজ জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। মারাত্মক ব্যাধিরূপে এগুলো সমাজ জীবনকে পঙ্গুতে পরিণত করছে। শহরে, বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, রাস্তাঘাটে চলার পথে কোথাও নিরাপত্তা নেই। বলাবাহুল্য, এসব ঘটছে নৈতিক অধঃপতনের জন্য। আর এসব থেকে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় হলো নৈতিক চরিত্রের উন্নতি। সে জন্য প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তার মনের ইচ্ছাটি প্রবন্ধের শেষের দিকে বর্ণনা করেছেন এভাবেÑ ‘মানবিক মূল্যবোধের অভাব ও নৈতিকতার অবক্ষয় থেকে দেশ বা জাতিকে বাঁচাতে হলে কালক্ষেপণ না করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নি¤œমান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষাকে একটি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে প্রবর্তন করা উচিত বলে আমি মনে করি। কেননা নৈতিকতা বিবর্জিত কোনো শিক্ষা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’
ইদানীং অনেকেই ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে, ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে। দেশে বোমাবাজি আর মানুষ হত্যার ঘটনা কারো অজানা নয়। কতিপয় মুখোশধারী বিপথগামী লোকের কর্মকা-ের জন্য ধর্মকে দায়ী করা যায় না। জীবন চলার পথে আমি এটাও লক্ষ্য করেছি ভ-, মুখোশধারী লোকদের কর্মকা-ের জন্যে কেউ কেউ দাড়িওয়ালা লোকদের পর্যন্ত বাঁকা চোখে দেখতে শুরু করেছে। অনেককেই দেখি, ধর্ম বিষয়ে বেশি লেখাপড়া না করেই, ধর্মের গভীরে না গিয়ে মনগড়া আলোচনার প্রয়াস চালায়। সমাজে আমরা যেমন অনেক জ্ঞানী লোক দেখতে পাই তেমনি অনেক জ্ঞানপাপী ও জ্ঞানমূর্খও আমাদের চোখে পড়ে। সাধারণত যে জ্ঞানের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ যুক্ত হয় না তারাই জ্ঞানপাপী হয়। তাদের কিছু লেখা পড়ে মানুষ বিভ্রান্ত হয়। এরাই সমাজে জ্ঞানমূর্খ হিসেবে চিহ্নিত আর এদেরকেই ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্ন রকম অপকর্মে ব্যবহার করে। সত্যিকার অর্থে যারা ধর্ম পালন করে তারা কোনো দিন মানুষ হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করতে পারে না।
‘আত্মঘাতী বোমা হামলা’ সেটাও বিপথগামীদের কর্মকা-। আমাদের ধর্ম ইসলাম কোনো দিন আত্মহত্যাকে সমর্থন করে না বরং এটি মহাপাপ হিসেবে বিবেচিত। কেউ কেউ অন্যদেরকে নিয়ে একসাথে মৃত্যুবরণ করাকে জিহাদ হিসাবে আখ্যায়িত করতে পারে। কিন্তু এটা আয়নার মতো পরিষ্কার যে দেশের অধিকাংশ মুসলমানকে বাদ দিয়ে কতিপয় বিপথগামী লোকের কর্মকা-কে কোনো অবস্থাতেই জিহাদ হিসেবে আখ্যায়িত করা যায় না। এরা বিপথগামী, দেশ তথা সমাজের কাছে এদের গ্রহণযোগ্যতা নেই। আমরা আমাদের প্রতি ওয়াক্ত নামাজের প্রতিটি রাকাতে এসব পথভ্রষ্টদের পথে থাকার জন্য, তাদের মতো ভ্রান্ত পথে না চলার জন্য, তাদের মতো অভিশপ্ত না হওয়ার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা করি। তার প্রমাণ হচ্ছে, সূরা আল ফাতিহা পবিত্র আল কোরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা। প্রথমত, এ সূরা দ্বারাই কোরআনুল করীম আরম্ভ হয়েছে এবং এ সূরা দিয়েই মুসলমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত নামাজ আরম্ভ হয়। এ সূরার নাম ফাতিহাতুল কিতাব বা কোরআনের উপক্রমনিকায় রাখা হয়েছে। সূরা ফাতিহা এদিক দিয়ে সমগ্র কোরআনের সারসংক্ষেপ। এ সূরায় সমগ্র কোরআনের সারমর্ম সংক্ষিপ্তাকারে বলে দেয়া হয়েছে। এ সূরাকে সহিহ হাদিসে, ‘উম্মুল কোরআন’ ও ‘উম্মুল কিতাব’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ সূরা ফাতিহায় সর্বমোট সাতটি আয়াত। চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আয়াতটি বাংলায় অনুবাদ করলে আমরা দেখি (চতুর্থ) আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি (পঞ্চম) আমাদিগকে সরল পথ প্রদর্শন কর (ষষ্ঠ) তাদের পথে, যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ। (সপ্তম) তাদের পথে নয় যাদের ওপর তোমরা গজব নাজিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট।
আমরা যেখানে নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠের মাধ্যমে রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা করি অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্টদের পথে আমাদের পরিচালিত না করার জন্য, সেখানে আমরা কীভাবে এমন অন্যায়, এমন পাপ করতে পারি? সত্যিকার অর্থে যিনি মুসলমান তিনি এরকম ঘটনার সাথে জড়িত থাকতে পারেন না, সত্যিকার কোনো মুসলমান এদেরকে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত এবং প্রশ্রয় দিতে পারেন না। এসব হত্যাকা-কে সত্যিকার কোন মুসলমান সমর্থনও করতে পারে না। যারা এসব কাজ করছেন তারা পথভ্রষ্ট, তারা অভিশপ্ত। কেউ যদি পথভ্রষ্টদের সহযোগিতা ও সমর্থন করেন কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে তাকে জবাব দিতে হবে।
আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, কোনো ধর্ম এসব অন্যায়কে অনুপ্রাণিত করে না, প্রশ্রয় দেয় না। আমার ধারণা নৈতিকতার অবক্ষয়ের কারণেই অনেক ধরনের পাপ ও অন্যায়ের পথ প্রশস্ত হয়। অভিশপ্ত এবং পথভ্রষ্টরাই সমাজে বিভিন্ন রকমের পাপ ও অন্যায় করতে বিন্দুমাত্র সংকোচ বোধ করে না। তাদের কারণেই সমাজ তথা দেশে পাপাচার ও অনাচারের মাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। তাই আমিও অভিজ্ঞ, জ্ঞানী, ধর্মপ্রাণ উপাচার্য ওসমান গণীর সুরে সুর মিলিয়ে বলতে চাই, সমাজ জীবনে নৈতিকতার অবক্ষয় রোধে এবং মূল্যবোধ সৃষ্টিতে ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই। আমি আশা করি মাননীয় মন্ত্রী আপনিও আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করবেন।
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।