Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈমানের পর নামাজ সবচেয়ে বড় ইবাদত

মাওলানা মুহাম্মাদ এনামুল হাসান | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

একজন মুসলমানের জন্য ঈমানের পরে সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ ও অপরিহার্য ইবাদত হচ্ছে নামায। কুরআন মজীদের বিভিন্ন জায়গায় ঈমানের পরেই নামাযের কথা বলা হয়েছে।

সূরা বাকারার শুরুতেই ইরশাদ হয়েছে, ‘এটি সেই কিতাব; এতে কোনো সন্দেহ নেই। মুত্তাকীদের জন্য পথপ্রদর্শক। যারা ঈমান রাখে গায়বের প্রতি, নামায আদায় করে এবং আমি তাদেরকে যা দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে।’ (সূরা বাকারা : ২-৩) হাদীস শরীফে এসেছে, ‘ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি : ১. সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সা. আল্লাহর রাসূল। ২. নামায আদায় করা। ৩. যাকাত প্রদান করা। ৪. হজ্ব করা। ৫. রমযানের রোযা রাখা।’ (সহীহ বুখারী ১/৬)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে যখন কেউ ইসলাম গ্রহণ করত তখন তিনি তাকে সর্বপ্রথম নামাযের অঙ্গীকার করাতেন।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প‚র্বের নবী-রাসূলগণও তাওহীদের পরেই নামাযের আদেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে তো আদেশ করা হয়েছিল একনিষ্ঠভাবে ইখলাসের সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ...।’ (সূরা বায়্যিনাহ ৫)। নামাযের ফযীলত : নামাযের অগণিত ফযীলতের মধ্যে একটি হচ্ছে নামায মানুষকে অন্যায় ও গুনাহ থেকে রক্ষা করে। ইরশাদ হয়েছে-‘নিশ্চয়ই নামায অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবূত : ৪৫)

এখানে প্রশ্ন হয়ে থাকে, নামায তো আমাদের গুনাহ থেকে হেফাযত করে না? এর উত্তর উক্ত আয়াতের মধ্যেই রয়েছে। বলা হয়েছে যে, ‘অবশ্যই আল্লাহর যিকর (স্মরণ) সবচেয়ে বড়’। এ অংশে আল্লাহ তাআলা গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রকৃত রহস্য বলে দিয়েছেন। অর্থাৎ অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরতকারী হচ্ছে আল্লাহর স্মরণ। যার নামাযে আল্লাহর স্মরণ যত বেশি হবে নামায তাকে তত বেশি গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।

আমাদের নামায সম্পর্কে যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের নামাযের প্রকৃত অবস্থা নিজেরাই অনুধাবন করতে সক্ষম হব। আমাদের তো গাফিলতের কারণে এমনই অবস্থা যে, অনেক সময় নামাযের শেষে মনেও করতে পারি না যে, কোন কোন সূরা পড়েছি। আর মোটামুটি খেয়াল করে নামায পড়লেও আমরা কি খেয়াল করি যে, আমার রবের সাথে আমার কী কী কথোপকথন হল? এগুলো চিন্তা করলেই আমরা বুঝে যাব এই ফযীলত লাভের আমরা কতটুকু হক্বদার।

নামাযের ফযীলত সংক্রান্ত বহু হাদীস বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। এখানে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলো: হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘তোমরা কি বলতে পার যদি তোমাদের কারো দরজার সামনে একটি নদী থাকে আর সে ওই নদীতে পাঁচবার গোসল করে তাহলে তার শরীরে কি কোনো ময়লা থাকবে? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন, তার শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও ঠিক এমনই। আল্লাহতাআলা এর দ্বারা গুনাহসমূহ ধুয়ে মুছে ছাফ করে দেন।’ (সহীহ বুখারী ১/৭৬)

হযরত উছমান রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, যখন নামাযের ওয়াক্ত উপস্থিত হয় তখন যে মুসলিম সুন্দরভাবে অযু করে খুশু-খুযূর সাথে উত্তমরূপে নামায আদায় করে, তার কবীরা গুনাহ ছাড়া পূর্বের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আর এ রকম সর্বদাই চলতে থাকে। (সহীহ মুসলিম ১/১২১)। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং এক জুমআ থেকে অন্য জুমআ মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, যতক্ষণ কবীরা গুনাহ সংঘটিত না হয়।’ (সহীহ মুসলিম ১/১২২)

হযরত আবু যর রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শীতকালে একবার বের হলেন। ওই সময় গাছের পাতা ঝরছিল। তিনি একটি গাছ থেকে দুটি ডাল নিয়ে সেগুলো নাড়া দিয়ে পাতা ফেলতে থাকেন এবং বললেন, আবু যর! আমি বললাম, লাব্বাইক ইয়া রাসূলুল্লাহ। তিনি বললেন, নিশ্চয়ই কোনো মুসলমান যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামায আদায় করে তখন তার গুনাহগুলো এভাবে ঝরে যায় যেমন এই গাছ থেকে পাতাগুলো ঝরে যাচ্ছে। (মুসনাদে আহমদ ৫/১৭৯)।



 

Show all comments
  • মরিয়ম বিবি ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    নিজেকে পরিশুদ্ধ করার একমাত্র ইবাদত নামাজ। এ ঘোষণা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ (মানুষকে) অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)
    Total Reply(0) Reply
  • জন্মভুমি ছাতক ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    নামাজ মানুষের অন্যতম ইবাদত হওয়ার কারণ হলো, এ নামাজের মাধ্যমেই মানুষ যাবতীয় পাপ থেকে মুক্ত থেকে পবিত্র জীবন-যাপন করে।
    Total Reply(0) Reply
  • তরুন সাকা চৌধুরী ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪০ এএম says : 0
    ফোয়ারা বা নদীতে যেমন আপনা-আপনি পানির স্রোত বয়ে যায় ঠিক তেমনি ঈমানদার ব্যক্তির কাছেও স্রোতের মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পর্যায়ক্রমে উপস্থিত হতে থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
    কোনো ব্যক্তি যদি নদী কিংবা পানির ফোয়ারা থেকে গোসল করে তবে তার শরীর থেকে যেভাবে ময়লা বিদূরিত হয় ঠিক তেমনি কেউ যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথারীতি আদায় করে তবে তাদের জীবন থেকেও গোনাহনামক ময়লা বিদূরিত হয়ে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • কে এম শাকীর ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪১ এএম says : 0
    আল্লাহর তাআলার হুকুম পালন বা ইবাদতে সবচেয়ে বেশি আনুগত্য প্রকাশ পায় এ নামাজের মাধ্যমে। নামাজে আল্লাহ এবং বান্দার বাইরে আর কারো কোনো অংশ থাকে না। বান্দা নামাজ পড়ার মাধ্যমে একনিষ্ঠভাবে শুধু আল্লাহ তাআলারই শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • সুক্ষ্ম চিন্তা ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪২ এএম says : 0
    বান্দা যেন মহান আল্লাহ তাআলার একান্ত সান্নিধ্য লাভ করতে পারে, সে জন্যই আল্লাহ তাআলা মানুষের ওপর প্রতিদিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। আর বান্দাও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহকে একান্ত আপন করে নেন। তাই নামাজকে মুমিনের মেরাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohamed Mosharraf Hossain ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:২১ এএম says : 0
    নামাজ আমাদের শারীরিক কী উপকারে আসে সেটার চেয়ে ভাবার বিষয় হলো, নামাজ - মন, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহৎ কর্ম হিসাবে বিবেচনা করা উচিৎ যার সমতুল্য কিছু নেই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন