Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুক্কায় ঘুরছে জীবন চাকা

মো. হাবিবুল্লাহ, নেছারাবাদ (পিরোজপুর) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

 

ত্রিশ বছর ধরে নারকেলের খোল দিয়ে ‘ডাবা হুক্কা’ বানিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাট করছেন শহর আলী (৬৮)। আজ এ হাটে তো কাল অন্য হাটে। নৌকায় করে হুক্কা তৈরির উপকরণ নিয়ে হাটে বসেই হুক্কা বানান তিনি। এভাবে ত্রিশটি বছর ধরে হুক্কা বানিয়ে জীবন চালাচ্ছেন কাজ পাগল শহর আলী।
হাটে বসে ক্রেতাদের পছন্দমত হুক্কা বানিয়ে দিয়ে প্রতিটি থেকে লাভ নেন মাত্র ৪০-৫০ টাকা। হুক্কা কারিগর শহর আলী মিয়ার বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানার দিঘিরপুর গ্রামে। তিনি হুক্কা নিয়ে বুধবার হাট করেছেন নেছারাবাদ উপজেলার সারেংকাঠি ইউনিয়নের করফা বাজার হাটে।
কথা হয় হুক্কা কারিগর শহর আলীর সাথে। তবে কাজ রেখে কথা নয়; কাজের মধ্যেই তিনি কথা বলেন এ সংবাদদাতার সাথে। তিনি বলেন, ত্রিশ বছর ধরে নারকেলের খোল আর অর্ডার দিয়ে কাঠ থেকে কুন বানিয়ে নৌকায় করে ঘুরে ঘুরে হুক্কা বানান। প্রতিটি হুক্কা বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা আর হুক্কা প্রতি তার লাভ থাকে ৪০-৫০ টাকা। তবে কারিগর শহর আলী জানান, এখন আর আগের মত কেউ হুক্কা কেনে না। আধুনিক যুগে কেউ হুক্কা টানতে অভ্যস্ত না। আর এটা কেউ পছন্দও করে না। সবাই এখন বিড়ি সিগারেট টানে। তবে তিনি দাবি করেন, বিড়ি সিগারেটে ধুমপায়ীদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, হুক্কা টানলে তার সিকি ভাগও ক্ষতি হয় না।
হুক্কা কারিগর শহর আলী আরো বলেন, কোন কোন হাটে কেউ হুক্কার দামও জিজ্ঞেস করে না। বেশিরভাগ লোকই আসে কৌতুহলী হয়ে হুক্কা দেখতে। দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। তবে হুক্কা বানিয়ে তার যা রোজগার হয় তা দিয়ে কোন মতে জীবন চলে তার। সাত সন্তানের জনক তিনি। সন্তানরা দেখাশোনা করে কিনা জানতে চাইলে শহর আলী বলেন, যতদিন শরীরে শক্তি আছে কারো উপর নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে না থাকাই ভালো। কাজকে ভালবাসি তাই কাজ করেই খাই বলে কথা বন্ধ করে পুনরায় কাজে মনোযোগ দেন।
করফা বাজারের স্থানীয় কয়েক দোকানদার বলেন, তিনি খুব ভালো একজন লোক। অনেক বছর ধরে শহর আলী তাদের বাজারে প্রতি হাট বারে হুক্কা বিক্রি করতে আসেন। তবে হুক্কা তেমন একটা চলে না। অনেক লোক এসে দাম জিজ্ঞেস করে তার সাথে মজা করেন। তবে তিনি ভাল একজন হুক্কা কারিগর। তাদের বাজারের হাটে কম বেশি হুক্কা বিক্রি হয়।
ধূমপানের জনপ্রিয় এই মাধ্যম হুক্কা একসময় ছিল গ্রাম বাংলার বিনোদন, আতিথেয়তা, বন্ধুত্ব, সম্প্রতির প্রতীক। সে সময় ধনী-গরিব প্রতিটি বাড়িতেই ছিল হুক্কার প্রচলন। আজ থেকে দুই দশক আগেও গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে নেশায় অভ্যস্ত ছিল। পুরুষের পাশাপাশি বয়স্ক নারী এবং ছেলেমেয়েরাও হুক্কার মাধ্যমে ধূমপান করত। অনেকে শখের বশেও হুক্কায় দিত আয়েশি টান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবন চাকা

১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ