ক্ষমতা ছাড়ার জন্য সরকারকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবৈধ সরকারের চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে দেখে আবারো অস্থির হয়ে গেছে। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আবারো উদ্ভট, বানোয়াট, আজগুবি মামলার প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে। সরকারের মত পুলিশরাও এখন গায়েবী তথ্য উৎপাদনের কারখানায় পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে সিনিয়র নেতাদের নামে একের পর এক মামলা দিয়েই যাচ্ছে। মৃত ব্যক্তি, কারাবন্দি নেতাদেরও গায়েবী মামলার পাইকারী আসামী করা হচ্ছে। সরকার বর্তমানে নতুন কোন ইস্যু পাচ্ছে না। তাই আগেরমত আবার আগুনের খেলা শুরু করছে।
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবিররিজভী বলেন, বুধবার মধ্যরাতে এই মধ্যরাতের ভোট ডাকাত সরকার তাদের ‘খয়ের খাঁ’ পুলিশকে দিয়ে আমাদের ১৩৫ জন নেতাকে আসামী করে মোটরসাইকেল পোড়ানোর উদ্ভট দুই মামলা করেছে। হাইকোর্ট এলাকায় বেওয়ারিশ দুই মোটর সাইকেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা।
বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার জন্য সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত অগ্নিসংযোগ। ঘটনার পর ডিএমপি রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এস এম শামীম সাংবাদিকদের বলেছেন, কারা কী উদ্দেশ্যে গাড়িগুলোতে আগুন দিয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মোটরসাইকেল তিনটির মালিকানা কেউ দাবি না করায় মনে হচ্ছে আগুনের ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক। ঘটনার পর এখনো বেওয়ারিশ মোটরসাইকেলগুলো মালিক খুঁজে পায়নি পুলিশ! অথচ মামলা হয়েছ ১৩৫ জন নেতার নামে। কি হাস্যকর মামলা যে, ৩টি মোটরসাইকেল পোড়াতে ১৩৫ নেতার প্রয়োজন পড়লো। সবাই এটা জানেন যে ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামী লীগের লোকজন এবং সরকারের বিশেষ বাহিনীর পরিকল্পিত একেকটি ঘটনা ঘটিয়ে
বিএনপির নামে মামলা দিচ্ছে।
কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, হাইকোর্টের সামনে মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার ঘটনায় ১৩৫ জনের মধ্যে ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার বহুদিন ধরে জেলে। গত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজ কারাগারে অথচ তাকেও আসামী করা হয়েছে। আসামী করা হয়েছে
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, জয়নাল আবেদিন (খালেদা জিয়ার আইনজীবী), শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস,
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট
রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট নিপুণ রায়, অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ঢাকা জেলা
বিএনপি’র
সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, সাদেক খান, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ কেউ বাকি নেই।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, এই সব করে লাভ নেই। এবার ক্ষমতা ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হন। এই মামলা সুপরিকল্পিত এবং গায়েবী মামলা। এই সমস্ত ঘটনায় যে সরকারের লোকেরাই জড়িত সেটির অতিতে অনেক নজীর রয়েছে, তাদের লোকেরা সেটি স্বীকার করেছেন। পঙ্কজ দেবনাথ নিজেই যে তার নিজের বিহঙ্গ গাড়ী পুড়িয়েছেন সে কথা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মাইদুল ইসলাম সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের গাড়ীতে আগুন ও মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনায় যুবলীগ নেতাকর্মীরা আটক হয়েছিলেন। এসব মানুষ ভুলে যায়নি। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতারা কিভাবে গাড়ী পুড়িয়েছে সেটি তারা নিজেরাই ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে স্বীকার করেছে যা ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে পেট্রোল বোমাসহ ধরা পড়েছিল যুবলীগের নেতারা। সেইসময় গাজীপুরের একটি ঘটনায় প্রথম আলোর একটি হেডলাইন ছিল থানায় গাড়ী অক্ষত, গাড়ী পোড়ানোয় আসামী
বিএনপি নেতারা। আর গত বছর জুড়ে গায়েবী মামলার কথা মানুষ ভুলে যায়নি। কবরে শায়িত লাশের নামে, হজ¦ব্রত পালনকালে সেই ব্যক্তির নামে, হাসপাতালে শায়িত পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তির নামে, প্রবাসীর নামে গায়েবী মামলার মতোই এই মামলাটিও একটি গায়েবী মামলা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রীর জামিন শুনানীর আগের দিন হাইকোর্ট সংলগ্ন এলাকা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বেষ্টিত ছিল এবং একধরণের সান্ধ্য আইন জারী ছিল, সেখানে মোটরসাইকেলে আগুন লাগানোর ঘটনা তারা ছাড়া কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। এভাবেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকার টিকে আছে। আইন-আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছুই
শেখ হাসিনার হুকুমের দাসে পরিণত হয়েছে। উড়ো অবান্তর মিথ্যা প্রচারে পারঙ্গম
শেখ হাসিনা। গণতন্ত্র ধ্বংসকারী তাঁর সরকার যেকোন মূহুর্তে বিরোধীদের দমাতে যেকোন জুলুমের পন্থা অবলম্বন করে। কারণ এই জনবিরোধী সরকার যেকোন সময় নাশকতা করতে তাদের সুদীর্ঘ বাহু বিস্তৃত করে। এই দু:সময়ে জনগণ যখন তখন আতঙ্কের শিহরণ অনুভব করে। কারণ কারো বিরুদ্ধে মামলা দায়ের থেকে শুরু করে নাশকতা করার সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট
শেখ হাসিনার কাছেই আছে। এই কারণেই গতকাল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সর্বোচ্চ আদালতে জামিন দেয়া হয়নি।
বেগম জিয়াকে আদালতের জামিন না দেয়ার সিদ্ধান্ত
শেখ হাসিনার ডিক্টেশনে, এটর্নি জেনারেল সেটি লিপিবদ্ধ করে আদালতকে দিয়ে বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন
রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং গুরুতর অসুস্থ ৭৫ বছর বয়সী একজন মহিয়সী নারীকে জামিন না দেয়া সাম্প্রতিক কালের সেরা নিষ্ঠুরতা। এটি শুধু দেশের ইতিহাসে নয়, সারাবিশ্বে এটি একটি নজীরবিহীন ঘটনা। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে গণতন্ত্রকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। গণতন্ত্রহীন দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে গিয়ে এই দুর্বল সরকার নানা চুক্তির মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করে ফেলেছে। দেশ বাঁচাতে, দেশের মানুষ বাঁচাতে, গণতন্ত্র পূণরুদ্ধার করে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
গতকাল বিএনপি মহাসচিবসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের নামে অসত্য এবং সম্পূর্ণরুপে চক্রান্তমূলক বানোয়াট মামলা দায়েরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাঁদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি করেন রিজভী।