পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বহুমাত্রিক সংকটের সুযোগে উর্দুভাষী ক্যাম্পগুলোতে অনেকটা ‘ত্রাতা’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় দেশী-বিদেশী এনজিও। ফলে এই জনগোষ্ঠিটি এনজিওগুলোর বিষয়ে কোনো কথা বলে না। তাদের মতে, এনজিওরা সহায়তা করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, স্যানিটেশন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করছে তারা। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি ইস্যুতেও তারা সব সময় উর্দুভাষীদের পাশে থাকে। এটি হচ্ছে একটি চিত্র। কিন্তু অতি বাস্তব আরো একটি চিত্র রয়েছে। সেটি উন্মোচনে খুব বেশি গভীরে যেতে হয় না। ক্যাম্পের অধিবাসীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশলেই উদ্ভাসিত হয় সেই চিত্র। যা দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের গ্রাফিক্সকে অবিশ্বাস্য করে তোলে।
অসহায় উর্দুভাষীদের বেকারত্ব, নিম্ন আয় এবং আর্থিক টানাপড়েনের সুযোগে ক্যাম্পগুলোতে শেকড় গজিয়েছে মহাজনী সুদের কারবার। জোঁকের মতোই নি:শব্দে চলছে তাদের রক্ত শোষণ। এনজিও এবং সমিতি থেকে সুদে টাকা নিচ্ছেন ক্যাম্পের উর্দুভাষীরা। গোপনে ব্যক্তিগতভাবে উর্দুভাষীরাও কেউ কেউ সুদে টাকা লগ্নি করেন। ঘটনা জানাজানি হয় যখন কোনো গ্রাহক নির্ধারিত হারে কিস্তির টাকা শোধ করতে না পারেন। তখন এ নিয়ে পঞ্চায়েতে বিচার-সালিশ হয়। শাস্তি ঘোষণা করা হয়। তবে এনজিও এবং সমিতি থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। পর্দানশিন গৃহবধূরাও দেহ ব্যবসার মতো ঘৃণ্য ও আদিম জীবীকায় নাম লেখাতে বাধ্য হচ্ছেন। ক্যাম্পের মুরুব্বীরা গৃহবধূ-তরুণীদের দেহ ব্যবসা বন্ধে নানা উদ্যোগ নিলেও আসল কারণটি তারা লাঘব করতে পারেননি। বিষয়টি হচ্ছে আর্থিক টানাপড়েন। বৈধ আয়ের উৎসগুলো দিনকে দিন হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। আয় কমে যাওয়া। নতুন কোনো কর্মসংস্থান নেই উর্দুভাষীদের। স্থায়ী কোনো অর্থনৈতিক অবলম্বন না থাকায় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দ্রুতই বিস্তার লাভ করেছে সুদ ব্যবসা। একই কারণে বাড়ছে তরুণদের অপরাধ-সম্পৃক্ততাও। সভা-সমাবেশ ভরে তুলতে স্থানীয় রাজনীতিকরা বিহারি বেকার তরুণদের ভাড়া নিচ্ছে। দিনে ২শ’-১শ’ টাকার বিনিময়ে তারা মিছিল করে সভা-সমাবেশ ভরে দিচ্ছে। টাকার বিনিময়ে গাড়ি ভাঙচুর এবং ককটেল-পটকাও ফাটাতে পারে তারা। কর্মবর্ধমান কর্মহীনতা, দক্ষতা থাকা সত্তে¡ও মালিকানা প্রতিষ্ঠান তৈরির পথ দুর্গম করে তোলা, সেই সুযোগে এনজিও-মহাজনদের দৌরাত্ম্য বিস্তার উর্দুভাষী এই নিরীহ জনগোষ্ঠির মাঝে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করছে।
রাজধানীর মিরপুর এবং মোহাম্মদপুর ক্যাম্প পরিদর্শনে দেখা যায়, বেশকিছুই এনজিও এসব এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ‘প্ল্যান বাংলাদেশ’ এবং ‘আল-ফালাহ বাংলাদেশ’ নামক দুটি এনজিও ক্যাম্পের স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করছে। উর্দুভাষীদের পড়াশুনা এবং আইনি পরামর্শ দিচ্ছে ‘কনসিল অব মাইনরিটিজ’ নামক একটি এনজিও। ‘অবেট হেলপার’ কাজ করছে উর্দুভাষীদের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে। এই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তায় সারাদেশের অন্তত: ২ হাজার তরুণ-তরুণী গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। রংপুর মেডিকেল কলেজে ডাক্তারি পড়ছে খুশি নাম এক উর্দুভাষী মেয়ে। ইঞ্জিনিয়ারিংও পড়ছে আরেকজন। ২০১৪ সালে কালশিতে আগুনে পুড়ে মারা যায় ৯ উর্দুভাষী। দ্বগ্ধ হয়েও বেঁচে যায় কলেজ শিক্ষার্থী ফারজানা। সেই ফারজানার উচ্চ শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে ‘অবেট’। এছাড়া নিজেদেরকে যারা এখনো ‘আটকে পড়া পাকিস্তানি’ হিসেবেই পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এমন কিছু উর্দুভাষীকে নিয়ে কাজ করছে ‘ফ্রেন্ডস অব হিউম্যানিটি’ নামক একটি সংস্থা।‘হীড’ নামে একটি এনজিও সক্রিয়। ‘পাকিস্তান রি-পার্টিশান কমিটি (পিআরসি)’ নামক এনজিও কাজ করছে শুধুমাত্র এখনো পাকিস্তান চলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষমান উর্দুভাষীদের জন্য। শেষোক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে উর্দুভাষীদের নামে আসা ত্রাণ সামগ্রি ও নগদ অর্থ তসরুপের অভিযোগ।
মোহাম্মদপুর ক্যাম্পগুলোতে সক্রিয় রয়েছে ‘শান্তি ফাউন্ডেশন’, ‘শক্তি’, ‘সজনী বাংলাদেশ’,‘সৃজনী ফাউন্ডেশন;, ‘ডিএসকে দু:স্থ’, ‘এসডিআই’, ‘পদক্ষেপ’, ‘রিট’,‘টিএমএসএস’, ‘আশা’, ‘ফেস সেভ’, ‘ঢাকা কো-অপারেটিভ’, ‘নিউ সাহারা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’, ‘লিংক মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি’,‘ত্রিভূজ বহুমুখি সমবায় সমিতি’। এসব কো-অপারেটিভ সোসাইটি স্বল্প আয়ের উর্দুভাষীদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের নামে চালাচ্ছে মাইক্রো ক্রেডিট প্রোগ্রাম। অধিকাংশ সমিতিরই রেজিস্ট্রেশন নেই। এনজিও বিষয়ক ব্যুরো থেকে লাইসেন্স নিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান এনজিও ফরমেটে কাজ করছে। তবে এর মধ্যে রয়েছে মাইক্রোক্রেডিট কিংবা ‘সহজশর্তে’ ঋণদান কর্মসূচি। মোহাম্মদপুর ক্যাম্পের অধিবাসী মিরাজ হোসেন জানান, মোহাম্মদপুরের বিহারি ক্যাম্পে সমিতির নামে সুদের ব্যবসা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এনজিও নামে প্রকাশ্যে কখনো বা ব্যক্তি পর্যায়ে গোপনেও চলছে এই ব্যবসা। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, আয়- রোজগার কমে যাওয়ায় ক্যাম্পবাসীও সমিতির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছেন। মানুষ বিপদে পড়ে সুদকারবারীদের দ্বারস্থ হচ্ছে। কিন্তু বিপদ থেকেতো উদ্ধার হচ্ছেই না বরং উল্টো বড় ধরণের বিপদের মুখে পড়েন। তিনি বলেন, কিস্তির টাকা জমতে জমতে গ্রাহকরা আর ঋণ পরিশোধ করতে পারে না। বিহারিদের এমন কোনো সহায়-সম্পদও নেই যা বিক্রি করে ওই ঋণ শোধ করবে। ঋণ শোধ করতে একপর্যায়ে গৃহবধূরা গোপনে দেহ ব্যবসায় নাম লেখাচ্ছে। তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে মাদক দ্রব্য বহন সহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। কিস্তির টাকা শোধ করতে না পেরে গত ৩ অক্টোবর নিজের গায়ে আগুন দেন জেনেভা ক্যাম্পের ৭ নম্বর সেক্টও, জি-বøকের আকবরী ওরফে পাচী। ৪ অক্টোবর তিনি মারা যান। নিউ সাহারা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সুলতানের স্ত্রী নারগিস। বিপরীতে তিনি নিজ একাউন্টের একটি স্বাক্ষরকৃত চেক বন্ধক রাখেন। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কিস্তি করে তিনি প্রায় ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তা সত্তে¡ও ‘খেলাপি’ দেখিয়ে চেক ‘ডিজ-অনার’ করায় সাহারা। নার্গিসের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে মামলা ঠুকে দেয়া হয়। ‘সৃজনী ফাউন্ডেশন’ থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নেন জেনেভা ক্যাম্পের ৫ নম্বর সেক্টরের বøক-ই, মো. মাহাতাব আলম। তিনি দেড় লাখ টাকার মতো পরিশোধও করেন। তা সত্তে¡ও প্রতিষ্ঠানটি বন্ধক থাকা চেক দিয়ে তার বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টের মামলা করে দেয়। ‘সৃজনী ফাউন্ডেশন’র রিজিওনাল ম্যানেজার লিটন কুমার সাহা গতকাল বুধবার এ প্রতিবেদককে টেলিফোনে জানান, জেনেভা ক্যাম্পে সৃজনীর সাড়ে ৩শ’ গ্রাহক আছেন। ২৭ শতাংশ হাওে সুদ ধার্য করে তারা সংগঠনের সদস্যদেরকে ক্ষুদ্র ঋণ দিচ্ছেন। কিন্তু কিস্তির টাকা শোধ না করায় সম্প্রতি ৩ জনের বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্টে পৃথক মামলা করেছেন। তিনি বলেন, আমাদের অফিস রয়েছে। এ বিষয়ে অফিসে এসে কথা বলুন। মিরাজ জানান, এরকম বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে। আমার জানামতে, মিরপুর ক্যাম্পগুলোতেও গোপনে অনেকে উচ্চহারে সুদ ব্যবসার পসরা খুলে বসেছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান সমাজসেবা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড চালানোর কথা বলে সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়েছে বলে জানান তিনি।
মহাজির ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশেনের সাধারণ সম্পাদক অসি আহমেদ অসি বলেন, উর্দুভাষীদের বিভিন্ন কাজে কারিগরি দক্ষতা রয়েছে।এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হতে পারেন। আমাদের কারো দয়া-দাক্ষিন্য কিংবা রিলিফ প্রয়োজন হতো। পুঁজি পেলে আমরা নিজেরাই ক্ষুদ্র কুটির শিল্প করে স্বাবলম্বী হতে পারতাম। উর্দুভাষীদের হাতে কোনো পুঁজি নেই। ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে সারাদেশে কুটিরশিল্পে এন্টারপ্রেনারশিপ তৈরি করছে। বিহারি ক্যাম্পের উর্দুভাষীরা সেই সুযোগও পাচ্ছে না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমেই ‘কো-লেটারাল’ চায়। আমরা কো-লেটারাল দেবো কোত্থেকে ? আমাদেরতো সম্পদ-সম্পত্তি নেই। এ কারণে আমরা ঋণও পাইনা। দক্ষ জনশক্তি হয়েও আমাদের তরুণ-তরুণীরা বেকার। মেশিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে আমার ক্রমেই বেকার হয়ে পড়ছি। আমাদের বাপ-দাদাদের পেশা গ্রাস করছে ভারত, চায়না এমনকি বাংলাদেশেরই বিভিন্ন জেলার লোকেরা। অথচ ব্যাংক তথা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা নিজেরাই ব্যবসা করে চলতে পারতাম। ঘুরে দাঁড়ানো যেতো। সেই পথ বন্ধ। হতাশ ও বেকার তরুন-তরুণী, গৃহবধূরা বাধ্য হয়ে এনজিও এবং কো-পারেটিভ সোসাইটির দ্বারস্থ হচ্ছে। স্বাক্ষর করা চেক বন্ধক রেখে উচ্চ সুদসহ কঠিন শর্তে ঋণ নিচ্ছে তারা। ঋণের ৮০ ভাগ টাকা শোধ করেও চেক ডিজঅনারের মামলার আসামি হচ্ছে। আত্মহত্যাও করতে বাধ্য হয় কেউ কেউ। সরকারি পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে না ভাবলে আমাদের বাঁচার কোনো পথ থাকছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।