বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মো. শামসুল আলম খান : লেগুনার আদলে যাত্রীবাহী গাড়ি। কোনো গাড়ির চেহারায় লক্কড়-ঝক্কড়ের ছাপ নেই। সড়ক দাবড়ে বেড়ানো এসব গাড়ির নতুন নাম দেয়া হয়েছে ‘পালকি’। এর চেয়ে ভয়ঙ্কর কথা, এসব গাড়ির স্টিয়ারিংয়ের নিয়ন্ত্রণই তুলে দেয়া হয়েছে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের হাতে।
তাদের প্রত্যেকের বয়স ১০ কি ১২ বছর। কেউ পুরোদস্তুর চালক না হলেও মহাব্যস্ত চালকের পরিবর্তে নিজেরাই চরম ঝুঁকি নিয়ে ব্যস্ততম সড়কে পালকির দিক বদলের কাজ সারছে। আর এমন ঘটনা ঘটছে নিয়মিতই। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে মাত্র ৫শ’ গজ আর নগরীর ২নং পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাত্র ১শ’ গজ দূরে হরহামেশাই তৈরি হচ্ছে এমন ‘মৃত্যুফাঁদ’।
সরেজমিনে নগরীর টাউন হল মোড়সংলগ্ন স্থানীয় টেলিফোন ভবনের সামনের সড়কে গিয়ে দেখা গেলো এমন চিত্র। সপ্তাহ দুয়েক আগে সড়ক দখল করে বসা রেজিষ্ট্রেশনবিহীন যান পালকির অবৈধ স্ট্যান্ড সরিয়ে নিতে খোদ ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারের কড়া নির্দেশনার পরেও টনক নড়েনি জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির।
জানা যায়, স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করেই বিআরটিএ’র অনুমোদন ও রেজিষ্ট্রেশনবিহীন প্রায় ৬০টি পালকি যান মাস ছয়েক যাবত নগরীর টাউন হল এলাকা থেকে প্রতিদিন ছেড়ে যাচ্ছে মুক্তাগাছা, রসুলপুর, অষ্টধর, পিয়ারপুর ও বিদ্যাগঞ্জসহ বিভিন্ন সড়কে। আর ওই সড়কে নিত্য যানজটও নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনুমোদনবিহীন এসব গাড়ি থেকে মাসিক মাসোহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। আর ‘বখরা’ যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী নেতা-কর্মীদের পকেটে। অবৈধ এ কারবারের পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা পরিবহন মোটর মালিক সমিতির মহাসচিব মাহাবুবুর রহমান, এমন অভিযোগও সর্বত্রই।
অথচ গত ৬ জুন এক সভায় ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার জিএম সালেহ উদ্দিন এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যস্ততম ওই সড়ক থেকে অবৈধ এ স্ট্যান্ড অন্যত্র স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। কিন্তু মোটর মালিক সমিতির নেতা মাহাবুবুর রহমানের অনিচ্ছার কারণেই বিভাগীয় কমিশনারের এমন আল্টিমেটামও কার্যত ফাঁকা বুলি হয়ে ঠেকেছে।
আবার, অবৈধ এ স্ট্যান্ডে শিশু শ্রমও লঙ্ঘিত হচ্ছে মারাতœকভাবে। কারণ, এখানকার অবৈধ পালকি যানের বেশিরভাগেরই হেল্পারের দায়িত্ব পালন করেন একদল শিশু। এসবের ফাঁকে মাঝে মধ্যেই আবার এ শিশু-কিশোররা চালকের আসনে বসে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে ভারী এ যান এগিয়ে নেয়ার ঝুঁকিপূর্ণ কাজও করেন।
সরেজিমেন এ স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেলো, একটি গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসেছেন হাসান (১০) নামের এক শিশু। স্থানীয় অস্টধরগামী একটি পালকির বদলী চালক কামাল হোসেন (৩৫) তখন কয়েক গজ দূরেই আড্ডাবাজিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন।
ওই চালকের নির্দেশেই গাড়ির দিক বদলের কাজটি সারছিলেন শিশু হাসান। তার পাশের আসনেও বসে ছিল আরেক কিশোর রিফাত (১৪)। আর গাড়ির বাম্পারে ঝুঁকি নিয়ে জেঁকে বসেছেন তাদের সঙ্গী কিশোর মঈন (১০)।
খানিক দূর থেকে এ ভয়ানক দৃশ্য দেখে এগিয়ে গেলে শিশু চালক হাসান (১০) বলেন, ‘ওস্তাদ (চালক) জিরাইতাছে (বিশ্রাম)। আমারে গাড়িডা ঘুরাইবার দায়িত্ব দিছে। আমার কাম (কাজ) গাড়ির হেল্পারী করা।’
শিশু হাসানের বাড়ি মুক্তাগাছার একটি গ্রামে। বাড়িতে ৬ ভাই-বোনের অভাবী সংসার। জীবিকা চালাতেই হাসানের মতো জিহাদ, মঈনের মতো আরো অনেক শিশু-কিশোরেরই শৈশব বন্দি হয়ে পড়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এমন কাজে।
এবার আড্ডবাজি ফেলেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন চালক কামাল। হাসানকে পাশে বসিয়ে নিজেই চালকের আসনে বসে বলেন, ‘ও গাড়ি আঙ্গাইতাছে (এগুচ্ছে)। দুই মাস ধইরা ওরে স্টিয়ারিং ধরবার (ধরার) দিছি। দূরের পথ আমিই চালাই। মাঝে মধ্যে অগরে (ওদের) গাড়ি ঘুরাইবার (ঘুরাতে) আঙ্গাইবার (এগুতে) দেই। এইটা তো দোষের কিছু না। অগরে আমরা ট্রেনিং দিতাছি (দিচ্ছি)।’
ব্যস্ত এমন সড়কে এ কাজ তো রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ ফিরতি এ প্রতিবেদক এমন কথা বললে চেঁচিয়ে এগিয়ে আসেন এ স্ট্যান্ডের সুপারভাইজার পরিচয়দানকারী হানিফ (৪০)। ‘খুঁচাইন্না (খুঁচানো) যে, আমি কিন্তু ক্যাডার। যা কওয়ার (বলার) মহাসচিব মাহাবুব সাহেবরে কইন গা। আমি হের (তার) হুকুমের গোলাম।’
রমজান নামের আরেক সুপারভাইজার তার কথায় সায় দিয়ে বলেন, ‘খবর লেইক্ক্যা স্ট্যান্ড উঠানো যাইবো না। আমরা বিভাগীয় কমিশনার চিনি না। মালিক সমিতির মহাসচিবরে চিনি। উনি কইলে যামু গা। অন্য কেউ কইলে মানমু না।’
এ ব্যাপারে ২ নং পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই ফারুক হোসেন বলেন, ‘পালকি স্ট্যান্ড অবৈধ এটি সত্যি। তবে এটি উচ্ছেদে আমার কাছে কোন নির্দেশনা আসেনি।’
এসব বিষয়ে ময়মনসিংহের কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ পালকি স্ট্যান্ড উচ্ছেদের নির্দেশনার কোন রেজুলেশন এখনো পাইনি। পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর শিশুদের হাতে স্টিয়ারিং অবৈধ। খোঁজ খবর নিয়ে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
জানতে চাইলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোস্তাকীম বিলাহ ফারুকী বলেন, ‘অবৈধ পালকি স্ট্যান্ড উচ্ছেদে দ্রæত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন শিশু চালক থাকলে সেটির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।