পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যার রিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল মিয়ানমার নেত্রী অং সাং সুচিকে। গতকাল (১০ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার হেগের ওই আদালতে শুনানি শুরু হয়েছে। আর এ শুনানি চলবে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিকে গাম্বিয়ার সমর্থনে উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ‘গাম্বিয়া গাম্বিয়া’ স্লোগানে মুখর করে তোলে ক্যাম্প এলাকা।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে এক যৌথ বিবৃতিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারি গাম্বিয়াকে সহায়তা দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে কানাডা ও নেদারল্যান্ড। গোড়া থেকেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্মূলে গণহত্যার কথা অস্বীকার করে এলেও আজ হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হল মিয়ানমারকে। তার আগে ৭ নোবেল বিজয়ী এক বিবৃতিতে আদালতে প্রকাশ্যে গণহত্যার অভিযোগ স্বীকার করে নিতে সুচির প্রতি আহবান জানিয়েছেন বলে জানা গেছে । এ আদালতে সুচি তার দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে আইনি লড়াইয়ের জন্য গেছেন। এজন্য সারা বিশ্ব থেকে তাঁর দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা।
হেগের আন্তর্জাতিক ক্রাইম আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচারে গাম্বিয়ার দায়ের করা মামলা শুনানিকালে রোহিঙ্গারা ‘গাম্বিয়া গাম্বিয়া’ শ্লোগানে মুখর করে তোলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো। পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গত ১১ নভেম্বর আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে মামলা করেন।
উল্লেখ্য বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন গণহত্যায় প্রাণ হারায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নারী শিশু পুরুষ। সেনাবাহিনীর পোড়ামাটি নীতির কারণে অগ্নিসংযোগ করা হয় লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে। ২০১৭ সালের আগস্টের পরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ মিয়ানমারে তাদের চৌদ্দপুরুষের ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ ছেড়ে পালিয়ে আসেন বাংলাদেশে। কক্সবাজার জেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উখিয়া-টেকনাফের ৩৪ টি আশ্রয় শিবিরে বাংলাদেশ সরকার তাদের আশ্রয় দেয়।
রোহিঙ্গা সংকটের শুরু থেকেই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূল করার। বিষয়টি মিয়ানমার বার বার অস্বীকার করে আসলেও বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপে সম্প্রতি হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়া মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যার মামলা দায়ের করে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দোয়া মাহফিল
টেকনাফ (কক্সবাজার) উপজেলা সংবাদদাতা জানান : নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মঙ্গলবার গণহত্যার শুনানি কেন্দ্র করে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে দোয়া মাহফিল হয়েছে। এর আগে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস্ (এআরএসপিএইচ) নামে রোহিঙ্গা সংগঠন। তবে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে বড় ধরনের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্টরা। তাই ক্যাম্পগুলোতে ছোট পরিসরে মসজিদ ও মাদরাসায় দোয়া মাহফিল হয়েছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অং সান সু চির সমর্থনে মিয়ানমারে বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করেছে বৌদ্ধরা। এমনটি জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়, জেলা পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এআরএসপিএইচ এর নেতারা। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে টেকনাফের শালবন, নয়াপাড়া, জাদিমুরা, লেদা, উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়া, সীমান্তের শূন্য রেখাসহ বেশ কিছু ক্যাম্পের মসজিদ, স্কুল ও মাদরাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত রোহিঙ্গা ও শিশু অংশ নেয়।
নাম না বলার শর্তে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) এক নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হচ্ছে। এ বিচার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় পাওয়ার জন্য এখানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মসূচি পালনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে মুনাজাত ও দোয়া মাহফিল করছি। রোহিঙ্গাদের বিচার পেতে আল্লাহ যেন সহায় হন। এদিকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা গণহত্যার বিচার যেন সঠিকভাবে পায় তার জন্য বিচার চলাকালিন প্রতিদিন বিশেষ দোয়া মাহফিল পরিচালনার আহŸান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএস) আরসার প্রধান নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মা জুনুনি। তিনি ৮ ডিসেম্বর এক অডিও বার্তায় এ আহŸান জানান।
এছাড়া বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন অব ইউকে চেয়ারম্যান মি. টুং কি এক ভিডিও বার্তায় অনুরূপ আহŸান জানান দেশ-বিদেশে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এটি একটি বড় অর্জন যে, গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের বিচারে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিকে কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল কিন্তু দেয়া হয়নি। এ বিচার নিয়ে যাতে ক্যাম্পে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টরা সতর্ক রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।