Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নামাজী ব্যক্তির পোশাক প্রসঙ্গে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পোশাক বা গাত্রাবরণ অন্যান্য প্রাণী হতে মানুষের স্বাতন্ত্র রক্ষা করে। গাত্রাবরণ মানুষের সর্বোত্তম অবস্থান নির্ণয় করে। মানুষের শারীরিক পবিত্রতার অংশ হিসেবে পোশাকের মূল্য ও মর্যাদা একটি বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। এতে করে নামাজ ও অন্যান্য এবাদতের প্রতি সম্মানপ্রদর্শন হয় এবং মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের হকও এর দ্বারা আদায় হয়ে যায়। এ কারণেই উলঙ্গ অবস্থায় কারো সামনে উপস্থিত হওয়া বেয়াদবি ও লজ্জাহীনতা বলে বিবেচিত হয়। পোশাক পরিধান করা একটি মূল ওয়াজিব কাজ। নামাজ ছাড়াও অন্য সময় পোশাক পরিধান করাকে ইসলামী শরীয়ত ওয়াজিব সাব্যস্ত করেছে। একইসাথে নামাজের পরিপ‚র্ণতার জন্য লেবাস পোশাক পরিধান করাকে শর্ত করে দেয়া হয়েছে।

ইসলামী শরীয়ত নারী ও পুরুষের পোশাকের দু’টি সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর প্রথমটি হলো ওয়াজিব সীমা। যা পালন করা ব্যতীত গত্যন্তর নেই। এ পোশাক পরিধান করা নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত। বস্তুত ওয়াজিব পোশাকের সীমা হলো, পুরুষের জন্য উভয় লজ্জাস্থান ঢেকে রাখা। এ দু’টিকে ঢাকার ব্যাপারে বিশেষভাবে তাকিদ করা হয়েছে। এর সাথে দুই রানকে মিলিয়ে নেয়া হয়েছে, অর্থাৎ পুরুষের জন্য নাভী হতে হাটুর নীচ পর্যন্ত পোশাক ধারা আচ্ছাদিত করে নিতে হবে।

আর নারীদের ক্ষেত্রে তাদের সমগ্র দেহ আচ্ছাদিত করাই হলো তাদের পোশাকের ওয়াজিব সীমা। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, বালেগা নারীর নামাজ উড়না ব্যতীত কবুল করা হবে না। তা এই জন্য যে, উভয় রান কামভাব উত্তেজক স্থান। এমনিভাবে নারীর সমগ্র দেহই কামোত্তেজক। সুতরাং নারীর সমগ্র দেহ লজ্জাস্থানের হুকুমের মতো।

আর পোশাকের অপর সীমাটি হচ্ছে মুস্তাহাব। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ এক কাপড়ে ততক্ষণ নামাজ পরবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা তার কাঁধ পর্যন্ত কিছু না থাকবে। এবং তিনি আরো বলেছেন, যদি কাপড় বড় হয় তাহলে তার এদিক সেদিক করে নেবে। অর্থাৎ, গীট বেঁধে নেবে। এর গুপ্ত রহস্য হলো এই যে, মানুষের নিজ নিজ পরিবেশ অনুসারে পোশাক বিভিন্ন ধরনের হয় থাকে। আরব অনারবের মধ্যমপন্থী সকল লোকে আচকান, কামিজ, চাদর ইত্যাদি পরিধান করে থাকে।

এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, তাদের পরিপ‚র্ণ পোশাক হবে তাই, যা তাদের পেট, পিঠ, কাঁধ ঢেকে রাখে। একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) কে প্রশ্ন করা হল, এক কাপড়ে নামাজ হবে কি? উত্তরে তিনি বললেন, তোমাদের প্রত্যেকের কি দু’খানা করে কাপড় রয়েছে। অতঃপর হযরত ওমর ফারুক (রা.) এর নিকট একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহপাক যখন তোমাদের সুযোগ বাড়িয়ে দেবেন তখন তোমরা বাড়ানো পোশাক ব্যবহার করো। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এক ব্যক্তি একাধিক কাপড় পরিধান করেও নামাজ আদায় করতে পারবে।

এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত রাসূল (সা.) কে পোশাকের প্রথম সীমা অর্থাৎ ওয়াজিব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আর হযরত ওমর ফারুক রা. কে পোশাকের দ্বিতীয় সীমা, অর্থাৎ মুস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। আবার এও হতে পারে যে রাসূল (সা.) এর নিকট পোশাকের দ্বিতীয় সীমা, অর্থাৎ মুস্তাহাব সীমা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা বলেননি, যা হযরত ওমর ফারুক (রা.) বলেছেন। অর্থাৎ, একাধিক কাপড় পরিধানের বিষয়।

যদি তিনি তা বলতেন, তাহলে তা শরীয়তের বিধান হয়ে যেত। এ অবস্থায় যার নিকট কাপড় নেই সে অন্তরে কষ্ট পেত। আর ১ কাপড়ে তার নামাজ পরিপূর্ণ হতো না। কারণ সে তার ধারণা অনুযায়ী পরিপূর্ণ পোশাকে নামাজ আদায় করছে না। আর হযরত ওমর ফারুক (রা.) অবগত ছিলেন যে, শরীয়ত অবতীর্ণ হওয়ার সময় শেষ ও সমাপ্ত হয়ে গেছে। তিনি এও অবগত ছিলেন যে, নামাজের মধ্যে পরিপূর্ণ পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। এজন্য তিনি নামাযের মুস্তাহাব পোশাকের প্রদান করেছেন।

আর যে ব্যক্তি মাথার চুল মাথার পেছনে ঝুটি বেঁধে নামাজ আদায় করে তার সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, তার অবস্থা হলো যেন সে মসক ঝুলিয়ে নামাজ আদায় করছে। এই হাদিসের আলোকে বোঝা যায় যে, এভাবে নামাজ আদায় করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। এর কারণ এই যে, এভাবে ঝুটি বেঁধে নামাজ আদায় করায় সাজ-সজ্জার কমতি হয় এবং নামাজের আদব অনুসারে পরিপ‚র্ণ পোশাক হয় না। এজন্যই তা মাকরুহ। অনুরূপভাবে ফুল অঙ্কিত মনোলোভা চাদর ও রেশমের তৈরি পোশাক পরিহার করা উচিত, যা নামাজীকে অমনোযোগী করে তোলে।



 

Show all comments
  • সাকা চৌধুরী ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪০ এএম says : 0
    আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মানব জাতি! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদেরকে লেবাস দিয়েছি। পরন্তু ‘তাকওয়া’র লেবাসই সর্বোৎকৃষ্ট (কুরআন মাজীদ ৭/২৬)
    Total Reply(0) Reply
  • মশিউর ইসলাম ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
    শরীয়তের সভ্য-দৃষ্টিতে সাধারণভাবে লেবাসের কতকগুলি শর্ত ও আদব রয়েছে; যা পালন করতে মুসলিম বাধ্য।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃজাফর ইকবাল নানটু ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪১ এএম says : 0
    ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা ও সুন্দর পোশাক পরিধান করা মানুষের জন্মগত স্বভাব।
    Total Reply(0) Reply
  • রুহুল আমিন ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪২ এএম says : 0
    সাহাবাদের মহিলাগণ যখন পথে চলতেন, তখন তাঁদের নিম্নাঙ্গের কাপড়ের শেষ প্রান্ত মাটির উপর ছেঁচড়ে যেত। নাপাক জায়গাতে চলার সময়েও তাদের কেউই পায়ের পাতা বের করতেন না। (মিশকাত ৫০৪, ৫১২, ৪৩৩৫ নং)
    Total Reply(0) Reply
  • কাজী হাফিজ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪৩ এএম says : 0
    নিজেকে সুন্দর রাখার প্রথম এবং প্রধান উপায় হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না রাখলে অনেক মূল্যবান জিনিসই মূল্যহীন হয়ে যায়। জীব-জানোয়ার ও মানুষের মধ্যে পার্থক্য এটাই যে, পশুরা যেমন খুশি তেমন চলে, তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ধার ধারে না; আর মানুষ পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করে।
    Total Reply(0) Reply
  • মেহেদী ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪৩ এএম says : 0
    ঈমানদার ব্যক্তিমাত্রই একজন পরিচ্ছন্ন মানুষ। তিনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অঙ্গীভূত করে এটি নিয়মিত পালন করেন। ধর্মপ্রাণ মুসলমান কম করে হলেও প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পূর্বে পবিত্রতা অর্জনের জন্য ওজু করেন। তিনি দৈনিক ৫ বার ওজু করার জন্য ১৫ বার হাত, পা, নাক, মুখ ও চোখ পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করেন। সময়মতো দিনে একবার গোসল করেন। পোশাক-পরিচ্ছদ সবসময় ধুয়ে মুছে পরিষ্কার রাখেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য বলবো ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৪৩ এএম says : 0
    সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য চাই সুস্থ পরিবেশ। চতুষ্পার্শ্বে যা কিছু আছে- ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ইত্যাদি পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশ-এসব কিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আবর্জনামুক্ত রাখতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Nurul Amin Chowdhury ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৫৩ পিএম says : 0
    নামায আদায়কালীন সময়ে পোশাকের ব্যাপারে আল কুরআনের সূরা আল-আ’রাফের ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে বনী আদম ! প্রত্যেক নামাযে উপস্থিত হওয়াকালে উত্তম পোশাক পরিধান করো”। এব্যাপরে তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনে ব্যাপক এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন