দুপুর নাকি কুয়াশা ঢাকা ভোর। ঘড়ির কাঁটায় যখন দুপুর ১২টা তখনও মনে হয় যেন সূর্য সবে উঁকি দিতে যাচ্ছে। গতকাল সারাদিনই ঢাকার আকাশ দেখে মনে হয়েছে সবে ভোর হতে যাচ্ছে। চারপাশে কুয়াশা ঢাকা একটা আবহ। আবহাওয়া অধিদফতর এটিকে কুয়াশা বললেও পরিবেশবিদরা বলছেন এটি বায়ুদূষণের ফল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজ্যুয়ালের বায়ুমান সূচকে (একিউআই) গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা ছিল বিশ্বের তৃতীয় বায়ুদূষণের নগরী। দুপুর ১২টার পরে তা ধীরে ধীরে ৬ষ্ঠ স্থানে নেমে আসে। 

কুয়াশা নাকি বায়ুদূষণ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, কুয়াশা কিছুটা থাকলেও এখন আকাশের যে পরিস্থিতি, তার জন্য দায়ী বায়ুদূষণ। এদিক দিয়ে গতকাল সকালে ঢাকা তৃতীয় অবস্থানে ছিল। তখন ঢাকার বায়ুর মান সূচক ছিল ২৪৪ পিএম, যা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর। দুপুর ১২টার পর তা কিছুটা কমে এ সূচক দাঁড়িয়েছে ১৯৪-এ। এটিও খুব ভালো নয়, অস্বাস্থ্যকর।
তিনি বলেন, বারবার বলার পর কয়েকদিন কিছু রাস্তায় পানি দেওয়ায় দূষণ কিছুটা কমেছিল। কিন্তু আজ (সোমবার) আবার সেটা বেড়ে চরম আকার ধারণ করেছে। এটি থেকে প্রতিকার পেতে হলে পানি ঢালা বন্ধ করা যাবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা স¤প্রতি অনেক বেড়ে গেছে। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ এর কারণেই ঢাকায় দূষণ অতিমাত্রায় বেড়ে গেলেই পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠছে।
কুয়াশার বিষয়ে আবহাওয়া অফিস বলছে, শীত মৌসুম শুরু। তাই দেশের অনেক এলাকার মতো ঢাকায়ও কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। আর বায়ুদূষণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুয়াশার সঙ্গে বাতাসের ধুলা মিশে তৈরি হয়েছে এই অদ্ভূত ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিস্থিতি।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, শীত মৌসুমে কুয়াশা পড়া স্বাভাবিক। এটা শীতের কারণেই হচ্ছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেটে যাবে কুয়াশা।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া ঢাকা বিভাগে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ১৫ ডিগ্রি, ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনায় ১৫.৩ ডিগ্রি, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ১৫ ডিগ্রি, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১২.৬ ডিগ্রি, রাজশাহীর বদলগাছিতে ১৩.২ ডিগ্রি, খুলনা বিভাগের মধ্যে যশোরে ১৬ ডিগ্রি এবং বরিশালে ১৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূবাভাসে বলা হয়, ডিসেম্বরে বাংলাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যা নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এ মাসের প্রথমার্ধে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। মাসের শেষার্ধে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা কম থাকতে পারে।
ডিসেম্বরের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১টি বা ২টি মৃদু অথবা মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় ঘন বা মাঝারি কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র মাঝারি বা হালকা কুয়াশা পড়তে পারে।