নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
দক্ষিণ এশিয়ান (এসএ) গেমসে মেয়েদের ক্রিকেট এবারই প্রথম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর প্রথমবারেই বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। চরম উত্তেজনাপূর্ণ নাটকীয় ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ২ রানে হারিয়ে সোনা জিতেছে সালমা খাতুনের নেতৃত্বাধীন দল।
গতকাল নেপালের পোখারায় ফাইনালে নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশের ৮ উইকেটে ৯১ রানের জবাবে পুরো ওভার খেলে শ্রীলঙ্কা থামে ৯ উইকেটে ৮৯ রানে। সবমিলিয়ে এবারের আসরে বাংলাদেশের সোনার পদকের সংখ্যা বেড়ে হলো ১১টি।
বাংলাদেশের জাতীয় দল খেললেও শ্রীলঙ্কা এসএ গেমসে খেলিয়েছে তাদের অনূর্ধ্ব-২৩ দল। সেই দলের বিপক্ষেও তীব্র লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ভয়ের কালো মেঘ সরিয়ে অল্প পুঁজি নিয়ে বোলারদের নৈপুণ্যে সোনা জেতায় অবশ্য মিলেছে দারুণ স্বস্তি। শেষ ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ৭ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। দেশসেরা পেসার জাহানারা আলম দেন মাত্র ৪ রান। লঙ্কানদের দুজন হন রানআউট। ম্যাচের শেষ বলে তাদের দরকার ছিল ৩ রান। তবে জাহানারা দেননি কোনো রান।
রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ওপেনার মুর্শিদা খাতুনের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় ১৬ রানে সাজঘরে ফেরেন তিনি। তার ১৫ বলে ১৪ রানের ইনিংসে ছিল ৩ চার। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৩৬ রান। কিন্তু এরপরই বাংলাদেশকে একেবারে নাড়িয়ে দেন শ্রীলঙ্কার ১৮ বছর বয়সী অফ স্পিনার উমেশা থিমাশিনি। সপ্তম ওভারে কোনো রান না দিয়েই তিনি শিকার করেন ৪ উইকেট!
প্রথম বলে রানের জন্য লড়াই করতে থাকা আয়েশা রহমানকে আউট করেন তিনি। পরের ডেলিভারিতে সানজিদা ইসলামকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগান থিমাশিনি। ফারজানা হক হ্যাটট্রিক করতে না দিলেও ওভারের চতুর্থ বলে বোল্ড হয়ে যান। এক বল পর তাকে অনুসরণ করেন ঋতু মণিও। ফলে ৩৬ রানের মধ্যে অর্ধেক ব্যাটারকে হারিয়ে মহাবিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। আয়েশা ১৪ বলে করেন ২ রান। ৩ চারে ১২ বলে ১৫ রান করেন সানজিদা। ফারজানা ও ঋতু দুজনেই ২ বল করে খেলে শূন্য রানে বিদায় নেন। এরপর রানের গতি হয়ে যায় মন্থর। পরের ৪ ওভার থেকে মাত্র ৬ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ।
দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে যান অধিনায়ক সালমা। দলীয় ৪২ রানে আউট হন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ৩ রান। ফলে শঙ্কা জাগে খুবই অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার। তবে এরপর প্রতিরোধ গড়েন চারে নামা নিগার সুলতানা। তিনি সঙ্গী হিসেবে পান ফাহিমা খাতুনকে। তারা যোগ করেন গুরুত্বপূর্ণ ৩০ রান। ফাহিমা ১ চারে ২১ বলে ১৫ রান করেন। জাহানারা ৩ বলে ২ রান করে সতীর্থের পথ ধরেন দ্রুত। ইনিংসের শেষ ওভারে ১৩ রান তুলে বাংলাদেশের সংগ্রহ নব্বই পার করান নিগার। ৩৮ বলে ২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ২ চার ও ১ ছয়। নাহিদা আক্তার ২ বলে খেলে রান করতে পারেননি।
ব্যাটাররা ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশের বোলাররা শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৩ উইকেটে ১৫। আর ১০ ওভার শেষে ৪ উইকেটে ৩৬। তবে বিপর্যয় সামলে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন হার্শিথা মাদাভি। ৩৩ বলে ৪ চারে ৩২ রান করা লঙ্কান দলনেতাকে বিদায় করে বাংলাদেশকে উল্লাসে মাতান জাহানারা। এরপরও লক্ষ্যের দিকে শ্রীলঙ্কা ছুটতে থাকে লিহিনি আপ্সারা ও নিলাকশানা সান্দামানির ব্যাটিংয়ে। জমে ওঠে ম্যাচ। তবে সালমা-নাহিদা-জাহানারাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের সঙ্গে পেরে ওঠেননি তারা। আপ্সারা ২৮ বলে ২ চারে করেন ২৫ রান। সান্দামানি ১২ বলে ১০ রান করেন ১ বাউন্ডারিতে। বাংলাদেশের হয়ে ৪ ওভারে ৯ রানে ২ উইকেট নেন নাহিদা। ১টি করে উইকেট পান জাহানারা, সালমা ও খাদিজা তুল কুবরা। বাকি সবগুলো রানআউট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ৯১/৮ (মুর্শিদা ১৪, আয়েশা ২, সানজিদা ১৫, নিগার ২৯*, ফারজানা ০, ঋতু ০, সালমা ৩, ফাহিমা ১৫, জাহানারা ২, নাহিদা ০*; সান্দিপানি ১/১৮, সেওয়ান্দি ১/২০, দিলহারি ১/২০, থিমাসিনি ৪/৮, রানাতুঙ্গা ১/৬, নিশানসালা ০/১৬)। শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ৮৯/৯ (থিমাসিনি ৭, আনালি ১, মাদাভি ৩২, সান্দিপানি ০, দিলহারি ৪, আপ্সারা ২৫, সান্দামিনি ১০, ভিজেনায়েকে ১, নিশানসালা ১*, রানাতুঙ্গা ১; জাহানারা ১/১৭, সালমা ১/১২, নাহিদা ২/৯, খাদিজা ১/২১, ফাহিমা ০/২৫)। ফল : বাংলাদেশ ২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : নাহিদা আক্তার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।