Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে বাহারি নকশার কাজ

প্রকাশের সময় : ২৫ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে

ঈদ আসছে। ছোট্ট অন্ধকার ঘর। স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে পাতা কাঠের ফ্রেম। পাশে মুঠোফোনে চলছে হিন্দি গান। কাঠের ফ্রেমের চার মাথায় আটকানো শাড়ি ও থ্রিপিস। আর সে ঘরেই শিল্পীরা সুনিপুণ দক্ষতায় করে চলেছেন কারচুপির কাজ। একটা একটা করে পুঁতি, জরির সুতা আর চুমকি দিয়ে শাড়ি ও জামায় নকশা করেন কারিগররা। কখনো নিজের পছন্দে, আবার কখনো বা ক্রেতার পছন্দে। সৈয়দপুরের ২২টি বিহারী ক্যাম্পে গেলে শত শত পরিবারে দেখা যাবে এমন দৃশ্য। কারচুপির কাজে বেশ নাম করেছেন শহরের বিহারী ক্যাম্পের বাসিন্দারা। যদিও তারা প্রশিক্ষিত নয়, তবু ঈদের সময় চাহিদার একটা বড় অংশ মেটান তারা। নারী-পুরুষ সবাই ঘরে বসে কারচুপির কাজ করে সংসার নির্বাহ করছেন। সরেজমিন দেখা যায়, ক্যাম্পের প্রতিটি ঘরে একটা করে ছোট্ট কাঠের ফ্রেম। কোনো কোনো ফ্রেমে বাঁধানো কামিজ। একটা কামিজের গলায় ও হাতে কারচুপির কাজ করতে সময় লাগে দু-তিন ঘণ্টা। আর ভালো মানের শাড়িতে কাজ করতে সময় লাগে দুইদিন। তবে সময় ও কাজ অনুযায়ী মজুরি খুবই কম। কারিগর সোহাগ ও আরিফ জানায়, ভারত থেকে কাপড় চোরাই পথে এ দেশের বাজারে ঢুকে পড়ায় স্থানীয় এসব নকশা করা জামাকাপড়ের কদর একটু কমেছে। তবে ঈদ মওসুমে এসবের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। কারচুপির কারিগর জানান, সৈয়দপুর বিহারী ক্যাম্পের চুমকি-কারচুপির সুনাম রয়েছে। প্রতি বছর ঈদ মওসুম ছাড়াও বুটিক হাউসগুলোর চাহিদা মতো অর্ডার থাকে। তাই সারাবছর বিহারী ক্যাম্প কারচুপির কাজে মুখরিত থাকে। এই কারচুপির কাজ করে উদ্যোক্তারা অনেকেই লাভবান হলেও যারা কাজ করে তারা পায় নামমাত্র মজুরি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে সেই মজুরিতে তাদের না পোষালেও তারা বাধ্য হয়ে এই অল্প মজুরিতে কাজ করছে। সোহেলি, আরিফা, মুন্নী নামে কয়েকজন নকশাকার বলেন, ‘ইসাব কামমে বাহুত মাহেনাত হ্যায়, মাগার যো মাজদুরী মিলতা হ্যায় উসমে ইলেকট্রিক বিলকা খরচা ভি নাহি উঠতা হ্যায়।’ অর্থাৎ এই কাজে খুব পরিশ্রম কিন্ত যে মজুরি পাওয়া যায় তাতে কারেন্টের বিলও ওঠছে না। সৈয়দপুরে শহর ও গ্রামের প্রায় ১০ হাজার নারী কারিগর এসব কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। এসব কারিগর মেশিনে নয়, সূচি কর্মে তৈরি করছেন নজরকাড়া নকশাদার পোশাক। এই শহরে সাবেক পাকিস্তান আমল থেকে কারুকর্মের প্রচলন চলে আসছে। ফলে কারিগর ও সস্তায় শ্রম মেলায় শহর ও গ্রামে গড়ে উঠেছে কারচুপি ও বুটিক হাউস। বিভিন্ন শ্রেণির গ্রাহকদের পছন্দ হতে পারে এরকম ডিজাইন নকশা ও পাথর বসিয়ে শাড়ি সরবরাহ করা হয়। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে অর্ডার নিয়েও শাড়ি বা ওড়নার কাজ করে সরবরাহ করা হয়। সৈয়দপুর কারুশিল্প সমবায় সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, এ শিল্পের প্রসার ঘটায় এলাকার বহু নারী আত্মনির্ভরশীল হয়েছে। সমিতির মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত এ কাজে নারীদের সংখ্যা বাড়ছে। তবে কারচুপির কাজ ঢাকায় কুরিয়ার মাধ্যমে পাঠাতে পুলিশ তল্লাশির নামে প্রায় হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করেন। এ শিল্পের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াকিল আহমেদ বলেন, নারীরা এ কাজ করে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা আয় করছে। কেউ কেউ ঈদের জন্য সঞ্চয়ও গড়ে তুলেছে। ইতোমধ্যে অর্ডার নেওয়া বেশিরভাগ শাড়ি, কামিজ ও ওড়নার কাজ শেষ করে সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি কারিগরদের মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হলে আরও অনেকে একাজে এগিয়ে আসবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে বাহারি নকশার কাজ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ