Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আদালতকে রণাঙ্গন বানিয়ে ক্ষমতার স্বপ্ন দেখবেন না

চট্টগ্রামে ওবায়দুল কাদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি ১০ বছরে ১০ মিনিট রাস্তায় আন্দোলন করতে পারেনি। খালেদা জিয়া দুই বছর কারাগারে দুই মিনিটও তারা রাস্তায় দাঁড়াতে পারেনি।

অথচ তারা গণঅভ্যুত্থানের হুমকি দিচ্ছে। আপনারা গণঅভ্যুত্থান করবেন আর আমরা ঘরে বসে আঙুল চুষবো? টেমস নদীর তীর থেকে নাশকতার বার্তা নিয়ে বিএনপি রাস্তায় নামতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, নাশকতার চেষ্টা কঠোর হাতে দমন করা হবে। আদালত অঙ্গনকে রণাঙ্গন বানিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপিকে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের আর কোন পথ খোলা নেই।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মাস্তানি করে নেতা হওয়ার দিন শেষ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে খারাপ লোকের প্রয়োজন নেই। বুয়েটে যারা আবরারকে খুন করে, রাজশাহীতে যারা প্রিন্সিপালকে পানিতে ফেলে আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কথায় কথায় মারামারি করে তাদের মত কর্মী দরকার নেই।

সম্মেলন শুরুর আগে লালদীঘি ময়দানে দুই নেতার অনুসারীদের চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং বক্তৃতা শুরু করতেই বিভিন্ন নেতার নামে কর্মীদের ¯েøাগানে বিরক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। ¯েøাগান দিয়ে নেতা বানানো যাবে না। গডফাদারগিরি করে নেতা হবার দিন শেষ। ঢাকায় যারা সবচেয়ে বেশি ¯েøাগান দিয়েছে, পোস্টার লাগিয়েছে তাদের কাউকে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক করা হয়নি। গত কয়েকদিনে অনেকগুলো সম্মেলন করেছি। নেতা নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে।

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর উপর জোর দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, খারাপ লোককে দল ভারী করার জন্য আওয়ামী লীগে আনবেন না। আমাদের বহু লোক রয়েছে। খারাপ লোকের প্রয়োজন নেই। নেতৃত্বে সুবিধাবাদীরা আসলে সে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারবে না। দুঃসময়কালে পাঁচ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।

চট্টগ্রামে দলের কোন্দলের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, চট্টগ্রামের মাটি শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে যে ফাটল ধরেছে, তা ক্লোজ করে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ আর যাতে খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হয় সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন ওবায়দুল কাদের। নেত্রী শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করছেন। কখন কে ধরা পড়েন তা কেউ জানে না। অতএব সতর্ক হয়ে যান।

চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ আর গডফাদারগিরি করে নেতা হওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতার দাপট দেখাবেন না। ক্ষমতা আজ আছে কাল নেই। এ জনগণের মাঝেই আমাদের থাকতে হবে। আমাদের ক্ষমতার উৎস বিএনপির মতো বন্দুকের নল নয়। এদেশের মাটি ও জনগণই আমাদের ক্ষমতার উৎস।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজে গেছে বলছেন। কার পতন, কিসের পতন। নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনবেন না। গণতন্ত্রের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল দরকার। আমরা চাই আপনারা টিকে থাকুন। তবে নাশকতার চেষ্টা করবেন না। করলে নিজেরাই নিঃশেষ হয়ে যাবেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কর্ণফুলী নদীতে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলছে জানিয়ে বলেন, খুব শিগগির কাজ শুরু হবে। কর্ণফুলী টানেলের কাজ ৫০ ভাগ শেষ হয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের সম্প্রসারণ কাজও শুরু হবে।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। সাত বছর পর অনুষ্ঠিত সম্মেলনকে ঘিরে লালদীঘি ময়দানে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটে। উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, দিদারুল আলম, খদিজাতুল আনোয়ার সনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর নগরীর কাজির দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

সালাম সভাপতি, আতা সম্পাদক
কাউন্সিলদের ভোটে এমএ সালাম সভাপতি এবং শেখ আতাউর রহমান আতা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। সন্ধ্যায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে কাউন্সিলরদের অধিবেশন শেষে নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সভাপতি পদে এমএ সালাম পেয়েছেন ২২৩ ভোট এবং এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছেন ১২৯ ভোট।

সাধারণ সম্পাদক পদে শেখ আতাউর রহমান পেয়েছেন ১৯৬ ভোট এবং গিয়াস উদ্দিন পেয়েছেন ১৫৪ ভোট। কাউন্সিলে প্রার্থীদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের চেষ্টা করেন ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। পরে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেতত্ব নির্বাচন করা হয়। ৩৬৬ জন কাউন্সিলর ভোট দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন। নতুন সভাপতি এম এ সালাম চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, তিনি দীর্ঘ সাড়ে ২৭ বছর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শেখ আতাউর রহমান মীরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।



 

Show all comments
  • ahammad ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:০৫ এএম says : 0
    জনাব,সেদিন বিএনপি পন্থিআইজিবীরা হট্টগোল করেছিল এইটা যদি রনাঙ্গন বা অনেক বড় অন্যায় হয়ে থাকে,তাহলে আপনাদের পন্থিআইনজিবীরা লাথিমেরে আদালতে ভাংচুর করেছিল সেইটা কি ধরনের অপরাধ বলে গন্য করাউচিৎ ?? আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্নরাখলাম?????
    Total Reply(0) Reply
  • llp ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৩:৫৭ এএম says : 0
    Only Jinnah (RA) and his incarnation President Ziaur Rahman are the fathers of this nation. This is the divine truth.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওবায়দুল কাদের


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ